পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আশষ্কাহারে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু। রবিবার (১১সেপ্টেম্বর) ডেঙ্গু জটিলতা আক্রান্ত হয়ে আইসিওতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবক (৪০) মৃত্যু হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার সদর হাসপাতাল এর আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, “আক্রান্ত রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালে একাধিক আলাদা ইউনিট চালু করেছেন তাঁরা। আর যারা অতিঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, গতসপ্তাহেও ঔষধ কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধির গর্ভবতি স্ত্রী ও গর্ভস্থ শিশু, কক্সবাজার শহরের ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এর ছাত্র তানভীর, শহরের কুতুবদিয়াপাড়ার খোরশিদা ও মিরাজোসহ সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বর্তমানে ৪৮জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে এবং আইসিওতে রয়েছে ৪জন। এছাড়া জুন,জুলাই,আগস্ট এবং সেম্পেটম্বর পর্যন্ত ৭১৩ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া শুরুর দিকে রোহিঙ্গাদের থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু জেলাব্যাপি বিস্তার লাভ করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তবে এতে উদ্দিগ্ন হলেও সচেতন হচ্ছে না মানুষ। হাসপাতালের আঙ্গিনা এবং আশপাশের রাস্তা-ঘাটের সংষ্কারধীন ড্রেনে জমে থাকা পানিতে এডিশ মশার বিস্তার লাভ করছে। আর এটি নিধনের জন্য দৈনিক দফায় দফায় কার্যকর স্প্রে করার জন্য পৌরকর্তৃপক্ষসহ এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানান তিনি”।
তিনি আরও জানান, “ যারা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত এবং অবহেলিত এলাকার লোকজন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুতে। এছাাড় যারা কনষ্ট্রাকশন কাজে নিয়োজিত তাঁরা সংক্রমিত হয়েছে”।
সরেজমিনে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরে ১ ও ৭নং ওয়ার্ড-এ ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে। যেখানে সবচেয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। ডেঙ্গু জটিলতা আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে দুরদোরান্তের রোগী। রোগীর চাপ ভাড়তে থাকায় সেবা দিতে অনেকটাই হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার নার্স ও আয়াসহ সংশ্লিষ্টদের। তবে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে একাধিক আলাদা ইউনিট চালু করেছে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল কর্র্র্র্তৃপক্ষ। তাদের সেবায় সন্তুষ্ট ভর্তিরত রোগীরা।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, দিন দিনন ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত কক্সবাজার, অতিতের সব রের্কড ভেঙ্গে চলতি বছরে রোহিঙ্গাসহ জেলায় ১২ হাজার ২৪৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ১১ হাজার ৬৫৮জন রোহিঙ্গা এবং প্রায় ৬শজনের অধিক বাংলাদেশি। আর স্থানীয় বাসিন্দা ও চিকিৎসকরা বলছেন, শুরুর দিকে রোহিঙ্গাদের মাঝে এই রোগের প্রকোপ ধরা পড়েছে। তাঁরা নির্মাণ শ্রমিকসহ কক্সবাজার শহরে বিভিন্ন কাজকর্ম করতে এসে স্থানীয়দের মাঝে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি পৌরশহরের জলাবদ্ধতা, জলাশয় ও নালা-র্নদমা ভরাট হয়ে পানি জমে থেকে এই এডিস মশার বংশ বিস্তার করছে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল এর তত্বাবধায়ক ডা. মো. মোমিনুর রহমান বলেন, জনগণ সচেতন না, বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেনা, যেখানে সেখানে পাত্রতে পানি জমে রাখে। জলবদ্ধতা, জলাশয় ও ময়লা আর্বজনা রোধে জনগণ সচেতন হলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর তাঁরা সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়মিত মিটিং করে যাচ্ছে। তবে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে একাধিক আলাদা ইউনিট চালু করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা.মাহবুবুর রহমান “ভোরের পাতা”কে জানান, “কক্সবাজারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। বর্ষাকালে চিপ্সের প্যাকেটসহ প্লাস্টিকের নানা বর্জ্যে পানি জমে থাকে। অর এই প্যাকেটগুলোই এডিস মশা প্রজননের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলা, ঘরের আশেপাশে পরিষ্কার রাখা ও রাতের বেলায় ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেন”।
এবিষয়ে কক্সবাজার পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান জানান, “জনগণকে সচেতন করতে আমরা মাইকিং করেছি, পরিষ্কার পরিছন্নতা বাড়িয়ে দিয়েছি এবং ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে ফগার মিশিং দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত স্প্রে করছি”
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ জনান, “পৌরএলাকায় সংষ্কারধীন নালার্নদমা যেগুলোতে জলাশয় ও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে এগুলো পরিষ্কার করার জন্য আমরা পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেচিব এবং আমরাও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাবো”
জলবদ্ধতা, জলাশয় ও ময়লা আর্বজনা রোধে জনগণ সচেতন হলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্বভ জানান তিনি।
এডিস মশার বংশ বিসন্তার রোধকল্পে প্রতিদিন নিয়মিত কয়েকদফা কার্যকারী ঔষধ প্রয়োগ করতে জেলা প্রশাসক ও পৌরমেয়র এর হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা।