পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকা সৃষ্ট নিম্নচাপ, পুর্নিমার জোয়ার এবং তিন দিন ধরে অব্যাহত মাঝারী থেকে ভারী বর্ষনের কারনে ঝালকাঠির প্রধান তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, জেলার সুগন্ধা, বিষখালী ও হলতা নদীর পানির উচ্চতা গত ২৪ ঘন্টায় ৪ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে যা বিষখালীর ত্রি-মোহনায় বিপদসীমা ছাড়িয়েছে ২৭ সেন্টিমিটার উপরে বইছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষনা ছিল জলোচ্ছ্াসে প্লাবিত হতে পারে ঝালকাঠিসহ উপকূলীয় ১৫ জেলা। আবহাওয়ার এই সতর্কবার্তার পর থেকে জলোচ্ছাস আতংকে কাটাচ্ছে এ জেলার নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। বিশেষ করে বেরীবাঁধহীন কাঠালিয়া উপজেলার ১৫ গ্রামের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কারন তাদের রয়েছে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানা সুপার সাইক্লোন সিডরের বিভীষিকাময় রাতের অভিজ্ঞতা।
এদিকে রোববার সকাল থেকে ঝালকাঠিতে থেমে থেমে ভারীবর্ষন শুরু হয়ে টানা ৪ দিন ধরে চলছে থেমে থেমে বৃষ্টি। বাতাাসের সাথে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নদীর পাড় উপচে জেলার বিস্তর্ণ নিম্না ল পানিতে তলিয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় কাঁঠালিয়া উপজেলায় ডুবেছে ১৫টি গ্রাম। নলছিটি, রাজাপুর ও সদর উপজেলায় ডুবেছে আরো ৩৫ টি গ্রাম।
এছাড়া অনেক স্থানে আমনের বীজতলা ও সবজির বাগান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে তার বীজ ও সবজির ব্যপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলেন বলেন, ‘বিষখালীর কাঠালিয়া অংশে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষায় নিম্মচাপ হলেই বিস্তর্ণী এলাকা তলিয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। যা গত দুমাস আগেও তলিয়েছিলো। জরুরিভাবে কাঁঠালিয়া অ লে বিষখালীর তীরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।
অপরদিকে টানা তিনদিন থেমে থেমে বৃষ্টি ও নদীর পানি অস্বাভাবিকবৃদ্ধিতে দুর্ভোগে পরেছে নিম্ম আয়ের মানুষ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিষখালি নদীর রাজাপুর অংশে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায় উপজেলার মঠবাড়ি এলাকায় বাদুরতাল ল ঘাটের পল্টনটিসহ পাশের ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ঘটনার পর থেকে বাদুরতলা এলাকায় নদী তীরের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কয়েক দশক ধরে এ এলাকায় ভাঙ্গন লেগে থাকায় বর্ষার মৌসুমি নদীর তীরবর্তী এই ঐতিহ্যবাহি বাজারের ব্যবসায়ীদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। ইতোমধ্যেই সরকারী বিদ্যালয়, মসজদি ও বাজারের পুরো অংশ ও রাস্তাঘাট নদীর ¯্রােতে হারিয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিক নাসির হাওলাদার, জুয়েল শরীফ, শাহজাহান শরীফ, জামাল হাওলাদার, আবু খলিফাএবং বাবুল ঋষি বলেন, দুপুর ৩টার পরে আস্তে আস্তে নদীর পার দেবেযায়। তখন আমরা মালামাল সড়াতে থাকি। কিন্তু মালামাল সড়িয়ে নেওয়ার পুর্বেই হঠাৎ দোকান ঘর গুলো ভেসে যায়।
মঠবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল হাওলাদার বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই বাদুরতলা বাজারের দোকানগুলো ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় আজকে হঠাৎ ৬টি দোকান বিলীন হয়ে গেছে। এখনও ওই বাজারের অনেক দোকান ঝুকিতে রয়েছে। কয়েক দফা জিওব্যাগ ফেলেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মান করা প্রয়োজন।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা 'নুসরাত জাহান খান বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
পাউবোর ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন বিষখালীর তীরে বেরীবাঁধ নির্মানের জন্য প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন হলেই ডিজাইন ডাটা পাঠানো হবে।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, পানি বৃদ্ধি যদি অতিমাত্রায় হয় সেক্ষেত্রে নিম্না লের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে।