#বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি আমৃত্যু বিশ্বস্ত ছিলেন সাজেদা চৌধুরী: শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। #আওয়ামী লীগের ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য অংশ সাজেদা চৌধুরী: তানভীর শাকিল জয়। #একজন সংগ্রামী-আদর্শবাদী নেতা ছিলেন সাজেদা চৌধুরী: শফি আহমেদ। #আ.লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী: কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী শৈশব থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক নেতা। দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশ এক বরেণ্য রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালো। একজন সংগ্রামী-আদর্শবাদী নেতা ছিলেন তিনি।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৮২৫তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিরাজগঞ্জ -১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমেদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক কর্নেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আমি প্রথমেই আমাদের প্রয়াত নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছি এবং মরহুমের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী শৈশব থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ যখন ক্রান্তিকালে পড়েছিল তখন সাজেদা চৌধুরী দলের হাল ধরেন। দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সাজেদা চৌধুরী। সে সময় আওয়ামী লীগের জন্য একটি কঠিন সময় ছিল। এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যতগুলো কমিটি গঠন করা হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সংসদে উপনেতার দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়কের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন। এই মহীয়সী নারীর প্রতি আমারা সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা জানায়।
তানভীর শাকিল জয় বলেন, বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সংসদ উপনেতা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আজ আমাদের মাঝে নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ, প্রশিক্ষণ ও সংগঠিত করার কাজে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সাজেদা চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে নারী আন্দোলন এবং ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রতীক। তিনি জাতীয় যেকোনো সংকটে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত করেছেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাজেদা চৌধুরী মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা যখন খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে হাত মেলান অথবা পালিয়ে যান, তখন সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিনে আপসহীন কাণ্ডারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এ কারণেই আওয়ামী লীগে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। ১৯৭৬ সালে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে তার যে দিকনির্দেশনা এবং বিচক্ষণতা ছিল, যার কারণে দল এবং জাতি পথ হারায়নি। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন তারপর থেকে সাজেদা চৌধুরী ছিলেন তার ছায়াসঙ্গী। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি। সাজেদা চৌধুরী দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাণ, দুঃসময়ের কাণ্ডারি, সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য কিংবদন্তি নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দেশ ও দেশের জনগণের সেবায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিরলস কাজ করে গিয়েছিলেন।
শফি আহমেদ বলেন, আমার সঙ্গে সাজেদা চৌধুরীর পরিচয় হয়েছিল ১৯৮১ সালেই যখন জননেত্রী সেক হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের আগে ৬ দফা আন্দোলনের একজন সংগ্রামী সংগঠক ছিলেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বামী ভাষাসৈনিক মরহুম গোলাম আকবর চৌধুরীসহ চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় আগমনের পর রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নারী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় ১৯৬৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭০ সালে নির্বাচিত সাতজন মহিলা এমএনএর মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ছিলেন অন্যতম। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পাশাপাশি ১৯৮১ সালে দলের জাতীয় সম্মেলনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করার ক্ষেত্রে এবং তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও তাঁর স্বামী মরহুম গোলাম আকবর চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা আপাকে তিনি তার মেয়ের মতোই দেখতেন। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক নেতা। দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার মৃত্যুতে রাজনীতির মাঠে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সহসাই পূরণ হবার নয়। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশ এক বরেণ্য রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালো। একজন সংগ্রামী-আদর্শবাদী নেতা ছিলেন তিনি।
অধ্যাপক কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন বলেন, আজকে আমরা অনেক মর্মাহত যে মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠককে হারালাম। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে আমরা একজন দেশপ্রেমী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে হারিয়েছি। রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তার মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা মরহুমার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সাজেদা চৌধুরী ১৯৫৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সময়ে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কলকাতার গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।সাজেদা চোধুরী ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ গার্লস গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার এবং ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি ফরিদপুরের কৃষাণপুর ইউনিয়ন (ফরিদপুর-২; নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুর) থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। দশম সাধারণ নির্বাচনে তিনি এ অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন।