দেশের ৬০ জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের প্রার্থীর নামও ষোষণা করেছে ক্ষমতাসীন এই দল।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে গণভবনে শুরু হওয়া মনোনয়ন বোর্ডের সভা চলে রাত পর্যন্ত। সভা শেষে দেশের তফসিল ঘোষিত ৬১টি জেলার মধ্যে ৬০টির জন্য প্রার্থীর সমর্থন চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন এ দলটি। সাতক্ষীরা জেলার দল সমর্থিত কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ ঘোষিত চূড়ান্ত সমর্থক তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে— ৬০টি জেলার মধ্যে ৩১টিতে তাদের সমর্থন পরিবর্তন করেছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যেসব জেলায় চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ ওঠেনি সেসব জায়গায় প্রার্থী পরিবর্তন আনা হয়নি। এছাড়া অন্যদের পরিবর্তন করা হয়েছে। এর বাইরে বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণেও কয়েকজনকে পরিবর্তন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন যারা
গতবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দেওয়া সমর্থন এবং এবারের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে— রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলা পরিষদে গতবারের আবু বকরের স্থলে এবার আবু তোয়াবুর রহমানকে সমর্থন জানানো হয়েছে। এছাড়া রংপুরে ছাফিয়া খানমের স্থলে ইলিয়াস আহমেদ, গাইবান্ধায় সৈয়দ শামস উল আলম হিরুর পরিবর্তে আবু বকর সিদ্দিককে এবার সমর্থন দিয়েছে দল।
রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেটের স্থলে খাজা শামসুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মইন উদ্দিন মণ্ডলের স্থলে রুহুল আমিন এবং পাবনায় রেজাউর রহিম লালের পরিবর্তে আ স ম আব্দুর রহিম পাকন দলের সমর্থন পেয়েছেন।
খুলনা বিভাগের মেহেরপুরে মিয়াজান আলীর পরিবর্তে আবদুস সালাম, কুষ্টিয়ায় রবিউল ইসলামের স্থলে সদর উদ্দিন খান, নড়াইলে সৈয়দ আইয়ুব আলীর পরিবর্তে সুবাস চন্দ্র বোস পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন। এ বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় দল সমর্থিত কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।
বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় গতবারের দেলোয়ার হোসেনের পরিবর্তে এবার জাহাঙ্গীর কবির, পটুয়াখালীতে খান মোশাররফ হোসেনের পরিবর্তে খলিলুর রহমান, বরিশালে মো. মইদুল ইসলামের পরিবর্তে এ কে এম জাহাঙ্গীর, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলমের পরিবর্তে খান সাইফুল্লাহ পনির, পিরোজপুরে অধ্যক্ষ শাহ আলমের পরিবর্তে সালমা রহমানকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুরে ফারুক আহম্মেদ চৌধুরীর পরিবর্তে মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার পালের পরিবর্তে অজিত কুমার সরকার; ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে আখতারুজ্জামানের পরিবর্তে মো. মোতাহার হোসেন, নরসিংদীতে আসাদুজ্জমানের স্থলে আবদুল মতিন ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জে আনোয়ার হোসেনের পরিবর্তে চন্দন শীল, রাজবাড়ীতে ফকির আব্দুল জব্বারের স্থলে এ কে এম শফিকুল মোরশেদ, ফরিদপুরে গতবার আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত লুৎফর রহমান মৃধা মারা গেলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে শামসুল হক ওরফে ভোলা মাস্টার নির্বাচিত হন। তবে এবার তিনি সমর্থন পাননি। তার স্থলে মোহাম্মদ ফারুক হোসেন সমর্থন পেলেন। গোপালগঞ্জে চৌধুরী এমদাদুল হকের পরিবর্তে মুন্সি আতিয়ার রহমান পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন।
এদিকে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে ইনামুল করিম ইমনের পরিবর্তে খায়রুল কবির রুমেন, সিলেটে লুৎফুর রহমানের স্থলে নাসির উদ্দিন খান; চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলহাজ শফিকুল আলমের পরিবর্তে আল মামুন সরকার, কুমিল্লায় মো. আবু তাহেরের পরিবর্তে মফিজুর রহমান বাবলু, চাঁদপুরে ওচমান গনি পাটোওয়ারীর পরিবর্তে ইউসুফ গাজী, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরীর পরিবর্তে খায়রুল বশর মজুমদার, নোয়াখালী এবিএম জাফর উল্ল্যাহর পরিবর্তে আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, লক্ষ্মীপুরে শামছুল ইসলামের পরিবর্তে মো শাহজাহান, চট্টগ্রামে এম এ সালামের পরিবর্তে এ টি এম পেয়ারুল ইসলামকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে।
এছাড়া রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, নীলফামারীতে মমতাজুল হক, লালমনিরহাট মতিয়ার রহমান, কুড়িগ্রাম মো. জাফর আলী; রাজশাহী বিভাগের বগুড়ায় মকবুল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বি, রাজশাহীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, নাটোরে সাজেদুর রহমান খাঁন, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস; খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, ঝিনাইদহে কনক কান্তি দাস, মাগুরায় পঙ্কজ কুন্ডু, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, খুলনায় শেখ হারুনুর রশীদ গতবারের মত এবারও দলের সমর্থন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে যশোরে আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিজয়ী চেয়ারম্যান শাহ হাদিউজ্জামান মারা গেলে তার শূন্য পদে সাইফজ্জামান পিকুল দলের সমর্থনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারও তিনি এ জেলায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন।
বরিশাল জেলার ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক, শেরপুরে চন্দন কুমার পাল, মানিকগঞ্জে গোলাম মহীউদ্দিন, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, ঢাকায় মো. মাহবুবুর রহমান, শরিয়তপুরে ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার, মাদারীপুরে গতবার আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত মিয়াজ উদ্দিন খান মারা যাওয়ার পর মুনির চৌধুরী উপনির্বাচনে জয়ী হন। এবারও তিনি দলের সমর্থন পেয়েছেন এ জেলা থেকে। ময়মনসিংহে অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান ও কিশোরগঞ্জে মো. জিল্লুর রহমান এবারও সমর্থন পেয়েছেন।
গতবার আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিজয়ী মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মারা গেলে মিছবাহুর রহমান উপনির্বাচনে জয়ী হন। এ জেলা থেকে এবারও তিনি দলের সমর্থন পেলেন, হবিগঞ্জে মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। এছাড়া গতবার কক্সবাজার জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মোস্তাক আহমদ চৌধুরী এবারও সমর্থন পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন গত ২৩ আগস্ট পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন কমিটির সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, কাজী জাফর উল্লাহ, রাশিদুল আলম, আবদুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, হাছান মাহমুদ ও আবদুস সোবহান গোলাপ।