প্রিয় নেত্রী, অত্যান্ত দুঃখ ভারক্রান্ত মন নিয়ে আপনাকে লিখছি , সেই ছাত্র রাজনীতি থেকে স্বৈরশাসক জিয়া –এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছি । রাজনৈতিক কারনেই দেশ ত্যাগ । প্রবাসে এসেও জাতির পিতার আদর্শের একজন নিবেদিত কর্মি হিসাবে, জাতির পিতার সৈনিকদের খুজে খুঁজে ঐক্যবদ্ধ করেছি । প্রবাসে থেকে ৯১-র নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির প্রতিবাদ করেছি । ৯৬ থেকে প্রতিটি নির্বাচনে , দেশে গিয়ে দলের পক্ষে কাজ করেছি । ২০০১ সালে বিএনপি –জামাতের দুঃশাসন এবং ১/১১- তিন উদ্দিনের সময় , আপনার কারামুক্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে ইউরোপে সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করেছি । ২০০৯ দল, দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবার পর থেকে , ইউরোপে দলীয় সকল কর্মকান্ড যুক্ত আছি । ২০০৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমার নেতৃত্বে ডেনমার্ক আওয়ামী লীগ আপনাকে গণ-সংবর্ধনা দেই । দলের দুঃসময় থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইউরোপে সকল দেশের কমিটিগুলো খুব সুন্দর মতো দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিলো কিন্তু এরপর থেকে অস্ট্রিয়ার এম নজরুল ইসলাম , ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের কয়েকজন সিনিয়র নেতাদের উপর দৈত্যের মতো চেপে বসে । খুব কায়দা করে তাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করে –এক অদ্ভুত সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে । শ্রী অনিল দাসগুপের টয়লেট ব্যাগ বহন করে , বিশ্বস্ত ভৃত্য সেজে একে একে বিভিন্ন দেশ থেকে দলের ত্যাগী ,পরীক্ষিত নেতা –কর্মিদের দূরে সরিয়ে দিতে সক্ষম হন , দলের মধ্যে বিএনপি –জামাত-ফ্রিডম পার্টীর কর্মিদের দিয়ে এক অভিনব নব্য আওয়ামী ধারা সৃষ্টি করে ।
কে এই নজরুল ? ঢাবি সেই ৭খুনের অন্যতম আসামী খুনী শফিউল আলম প্রধানের বিশ্বস্ত কর্মি ।খুনী শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত , দেশে গেলে নজরুল তার সাথে দেখা করতো ।
নেত্রী ,যাহা বলিব সত্য বলিব – সত্য বই মিথ্যা বলিব না ...। আপনার নিকট একটি শব্দ মিথ্যা বলার দুঃসাহস আমি রাখি না । আমি সোজা কথায় বলতে চাই- এম নজরুল ইসলাম , আমাদের দলের লোক নন । সে , নিজে দাবী করেন – স্বাধীনতার পর ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু আমরা প্রমান করেছি এইসব মিথ্যা কথা , তৎকালীন ছাত্রলীগের কেউ তাকে চিনেন না ! তারপর যদি এসব গল্প সত্য ধরেও নিই , তাহলে জাতির পিতা হত্যাকান্ডের পর নজরুল কোথায় ছিলেন ? ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট থেকে ২০০৪ সালের পুর্ব পর্যন্ত ,দেশে বা ইউরোপের কোথাও তাকে আমরা দেখিনি । তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপে বসবাস করলেও ২০০৪ সাল পর্যন্ত নীরব থাকার রহস্য কি । স্বৈরাচার জিয়া- এরশাদ -এর সময়ে তিনি কি করেছেন । ৯০- গণআন্দোলনে তার ভুমিকা কি । ৯৬ - তে তিনি কি করেছেন ! ২০০১ সালের বিতর্কিত নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর বিএনপি -জামাতের নির্যাতন আর দুঃশাসনের সময় সে কোথায় ছিলেন ! এই সবকিছু আর আজকে তার ভুমিকা পার্যালোচোনা করলে , নজরুল সাহেবের আসল রুপ আমাদের চিনতে ভুল হয় না ।
আপনি বলেছেন , দলে পদ দেবার আগে পারিবারিক পরিচয় জেনে নিবে ! নজরুলের দেশের বাড়ী কোথায় , রহস্যজনক হলেও আমরা কেউ জানি না । বিভিন্ন নির্বাচনে আমরা যার যার এলাকায় গিয়ে দলের পক্ষে কাজ করি কিন্তু নজরুলের এমন কোন ঘটনা সমন্ধে কিছুই জানি না । দলের সকল কঠিন সময়ে যেমন , ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি - জামাতের জ্বালাও পোড়াও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আমরা যখন ইউরোপে কোন কর্মসুচীর উদ্যোগ নিতাম , তিনি ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বুঝিয়ে -এর বিরোধিতা করতেন । ২০১৩-২০১৪ সালের বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সময় সম্পুর্ন তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলেন ।
নজরুল কিছু না করে পত্রিকায় ভুয়া নিউজ প্রচার করে , বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের কাছে লিঙ্ক পাঠানো তার রাজনীতি। এই ব্যাপারে , অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মজনু আজাদ বলেন , এম নজরুল ইসলাম আসলে আমাদের দলে জিয়া –মোস্তাকের প্রেতাত্মা হয়ে প্রবেশ করেছে । অস্ট্রিয়াতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং নেত্রীর ছবিতে যারা আগুন দিয়েছে , তাদের সাথে তার উঠাবসা । স্পেন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আক্তার হোসেন আতা বলেন , স্পেনে সাঈদী মুক্তি আন্দোলনের নেতা ,যার স্পস্ট ভিডিও আছে যিনি সায়েদীর মুক্তির জন্য সেভ বাংলাদেশ ব্যানারে বক্তব্য রাখছেন ,তাকে বানিয়েছেন স্পেন আওয়ামীলীগের সভাপতি । আয়ারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠা সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক খান বলেন , আয়ারল্যান্ড এসে বিএনপি –জামাতের ছেলের থেকে টাকা নিয়ে আহবায়ক কমিটির সদস্য করেছে । ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সামি দাস বলেন, ২০০৫ সালে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে , বেগম খালেদার ভুয়া জন্মদিনে কেক কেটেছেন মাহবুব নামে এক ছেলে , যিনি এই সেদিনও নিজেকে জিয়া সৈনিক বলে দাবী করতেন ! আগেপরে সে আমাদের দলের একজন সদস্যও নন , তাকেও তিনি দলভুক্ত করছেন । জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা হাফিজুর রহমান আলম বলেন , আমি প্রমান দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারবো , নজরুলের দেয়া এক জার্মান আওয়ামী লীগের এক অংশের কমিটিতে তিনজন শিবিরের ছেলে আছে । ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শহীদ মিয়া বলেন ,সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগকে ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছে নজরুল –মুজিব , দল রক্ষায় ওদের যতো দ্রুত বাদ হবে - দলের জন্য ততোই মঙ্গল হবে । মাল্টার সাধারন সম্পাদক প্রকাশ্যে বলেছে , মাল্টা আওয়ামী লীগের যাকে সভাপতি বানিয়েছে , তিনি একজন বিএনপি –জামাতের লোক ,২০১৮ সালেও তার ফেইসবুকে আমাদের দল এবং নেত্রীকে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে । গ্রীস বিএনপির সহ-সভাপতিকে বানিয়েছে গ্রীস আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি , শুধুই অর্থের জন্য ।
ইতালি আওয়ামী লীগের ত্যাগী –পরীক্ষিত কর্মি আমিন বেপারী প্রকাশ্যে বলছে ,ইদ্রিস ফরাজি ২০১১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে । ইদ্রিস ফরাজী , তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মানুষের ব্যাবসায়িক পার্টনার । তার এক ভাই যুক্তরাজ্যে জামাতের সাথে সংশ্লিষ্ট । ইতালিতে তাদের স্কুলে এখনো পাকিস্থানের জাতীয় সংগীত বাজিয়ে ক্লাস শুরু হয় । একইসাথে ফেইসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে , যেখানে দেখা যায় –এক কর্মি হাসপাতালের বেডে শুয়ে এই ফরাজি এবং নজরুলের অপকর্মের কথা বলছেন ।
উল্লেখ্য ২০২১ সালের ২৮শে নভেম্বর ইতালী আওয়ামী লীগের সকল সিনিয়র নেতা জি এম কিবরিয়া , কে এম লোকমান হোসেন , বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব হোসেন , আবতাব বেপারী , আবু সায়েদ খান ,আঃ রব ফকির ,আলমগীর হোসেন , এম এ রব মিন্টু , কিটন শিকদারসহ কয়েকশ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে একটি সফল সম্মেলন হয় । এখানে সাবেক সভাপতি ইদ্রিস ফরাজি ,সাবেক সা সম্পাদক হাসান ইকবালকেও আমন্ত্রন জানানো হয় কিন্তু এম নজরুলের অর্থ ও রাজনৈতিক সার্থের কারনে ফরাজি –হাসানকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত রাখে । একটি সফল সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে ইতালী আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব হোসেন ও সাধারন সম্পাদক আলমগীর হোসেন নির্বাচিত হন । ফ্রিডম পার্টির নজরুল , ইতালী আওয়ামী লীগে বিএনপি - জামাত-শিবির পুনর্বাসিত করতে না পেরে , ইতালী আওয়ামী লীগের রাজনৈতিকভাবে মীমাংসিত ব্যাপারটি বিতর্কিত করছে ।
প্রিয় নেত্রী , ফ্রিডম পার্টির নজরুল ইসলাম একটি বিশেষ মতলব নিয়ে আমাদের দলে ঢুকেছে । মোস্তাকরা যুগে যুগে এভাবে আমাদের মাঝে মিশে থাকে । অনিল দা –গনি ভাইকে ব্যাবহার করে , ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১২জন নেতাকে নজরুল দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে, তাদের সারা জীবনের মান সম্মান –ইজ্জত শুধু ধ্বংস করেনি , দলেও অনেক ক্ষতি করেছে ।
আপনি যখনি ইউরোপের আসতেন , দলীয় নেতা –কর্মিরা যাতে আপনাকে স্বাগত জানাতে না আসেন , এরজন্য অনেক আগে থেকে সকলকে মানা করতেন ! বলেতেন - নেত্রী আসছেন পারিবারিক ভিজিটে , তোমারা এসে বিরক্ত করো না । বিএনপি –জামাত যেখানে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করে , সেখানে বিএনপি –জামাতকে প্রতিরোধ করতে আমাদের মানা করে । প্রমানসহ এমন অনেক উদাহরন দিতে পারবো ।নজরুল বছরের ১১ মাস দেশে থাকে ! দল –মত না দেখে বিভিন্ন দেশের আদম শিকার করে , সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তদবির বাণিজ্যই করার জন্য তিনি তার অবৈধ পদ –পরিচয় ব্যাবহার করছে । একইসাথে এম নজরুল ইসলাম , কথায় কথায় নেত্রী এবং ছোট আপার কথা বলে সবাইকে ব্লাকমেইল করছে । দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ বিভিন্ন দফতরে ফোন করে বলে , এইতো আপার সাথে কথা হলো , গতকাল ছোট আপার সাথে কথা হয়েছে ।
এই মুহুর্তে , সারা ইউরোপে দলের নীতি ও আদর্শিক নেতা –কর্মিদের ব্যাক্তিগত চাওয়া –পাওয়ার কিছু নেই শুধু ইউরোপে তাদের প্রিয় সংগঠন রক্ষার জন্য দুর্নীতিবাজ , অনুপ্রবেশকারী ও বিএনপি –জামাতের বন্ধু এম নজরুল ইসলামকে দল থেকে দ্রুত বিতারিত করে ,আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে , সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষে পুনর্গঠন করা জরুরী।
লেখক: সাবেক সভাপতি –ডেনমার্ক আওয়ামী লীগ ও সদস্য সচিব , সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ ।