#শেখ হাসিনার ছোঁয়ায় উন্নয়নের মাইলফলকে বাংলাদেশ: অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত। #বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলো প্রস্ফুটিত করছেন শেখ হাসিনা: অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন। #শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে: অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া।
জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মময়ী জীবন নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তিনি তার বাবাকে হারিয়েছেন ছোট বেলা থেকেই। সেই পঞ্চান্ন বছরের বঙ্গবন্ধুকে তিনি মাত্র কয়েকবছর কাছে পেয়েছিলেন। তবুও তিনি যতটুকুন সময় পেয়েছিলেন, যতটুকু শিখেছিলেন তার বাবার কাছ থেকে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নত সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়কে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৮২৩তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এন্ড রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিজের গভর্নিংবডির সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (নীলদল) সাবেক সভাপতি, লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মময়ী জীবন নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তিনি তার বাবাকে হারিয়েছেন ছোট বেলা থেকেই। সেই পঞ্চান্ন বছরের বঙ্গবন্ধুকে তিনি মাত্র কয়েকবছর কাছে পেয়েছিলেন। তবুও তিনি যতটুকুন সময় পেয়েছিলেন, যতটুকু শিখেছিলেন তার বাবার কাছ থেকে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নত সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ঘটনা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার সময় আল্লাহর অশেষ রহমতে তার দুইকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন। আল্লাহর আশীর্বাদে তারা হয়তো সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন। হয়তোবা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পরিণত করা, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া, দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে তোলা এবং দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যই হয়তো প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন আল্লাহ তায়ালা। সেই সময়টিতে পুরো পরিবারকে হারিয়ে এই যে প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে সেই কষ্ট বয়ে বেড়ানো শুধু তাদের পক্ষে সম্ভব যারা দেশকে ভালোবাসে, দেশের মানুষকে ভালোবাসে, আর যারা পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চান, সোনার বাংলা গড়তে চান, আসলে তাদের পক্ষে সম্ভব অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বগ্রহণের পর পূর্ণ গতিতে এগোতে থাকে উন্নয়ন অভিযাত্রা। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিস্ময়করভাবে পাল্টে যেতে থাকে বাংলাদেশের রূপ। এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, যুদ্ধ বিধ্বস্ত আর ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য। বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র, হাজারো বাধা-বিপত্তি এবং নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, এই মাসটি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের মাস কারণ এই মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর ছোট তনয়া শেখ রেহানা আপার জন্মদিন আর এই মাসেরই ২৮ সেপ্টেম্বর আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছি। শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয় তার সাথে সেদিন আমরা হারিয়েছি বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, সদ্য বিবাহিত পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা দেশের বাহিরে ছিলেন। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নরপিচাশরূপি খুনিরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে এ বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের কয়েকজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। আজকের বাংলাদেশের চিত্র আর মাত্র এক দশক আগের বাংলাদেশের চিত্রের ভিন্নতা অনেক। প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ করলে উন্নয়ন ও অর্জনের পাল্লা ভারী। কৃষি, শিক্ষা, কূটনীতি, বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে ঘটেছে সরব বিপ্লব। কয়েক বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ। বিদ্যুৎহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল গ্রামের পর গ্রাম। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ছিল মাটির দেয়াল অথবা পাটখড়ি বা বাঁশের বেড়া আর খড়ের ছাউনি দিয়ে তৈরি। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের সেই চিত্র আর নেই। অধিকাংশ বাড়িঘর দাঁড়িয়ে আছে ইট-সিমেন্ট অথবা টিনের ওপরে। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ। বদলে গেছে তলাবিহীন ঝুড়ির কথিত ভাবমূর্তিও। নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়কে।
অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, এই মাসটি আমাদের বাঙালি জাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে আমাদের জননেত্রী, সুযোগ্য রাষ্ট্র নায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন আবার এই মাসেই আমাদের ছোট আপা অর্থাৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট তনয়া শেখ রেহানা জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার যে, এই মাসেই আমাদের এই দুই নেত্রীর জন্ম হয়েছে আমাদের এই বাঙালি জাতির কাণ্ডারি ধরার জন্য। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এই দুটি নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে এজন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে, পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে এই দুই বোনের ভূমিকা অনন্য। শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রত্যক্ষ। রেহানার ভূমিকা নেপথ্যের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার পর লন্ডনেই প্রথম বাংলাদেশে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। শেখ হাসিনা আশির দশকের শুরুতেই দিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরে গিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। শেখ রেহানা লন্ডনে অবস্থান করেন এবং বিদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তখন নববিবাহিতা; স্বামী-সংসার দেখার পাশাপাশি অভিবাসী বাঙালিদের রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকেও লক্ষ্য রাখতেন। তবে নিজে রাজনীতিতে সামনে আসতেন না। ১৯৭৫ সালে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাল্যকাল থেকেই পিতার রাজনৈতিক আদর্শে বেড়ে উঠেছেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক ঘটনা দিয়ে এই উদার-হৃদয়ের মানুষদের আমরা চিনতে পারি। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপই বাংলাদেশকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের নতুন মাইলফলক হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষ করে ভারী শিল্পের উন্নয়ন এবং পদ্মা সেতু, মেট্রারেলসহ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর নেওয়া সাহসী পদক্ষেপ বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত। শুধু তাই নয়, করোনা ভাইরাসের মহামারি থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে যেসব উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন সেগুলোও অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখেছে। সরকারের অনেক সফলতা আসলেও এই যাত্রা মসৃণ ছিল না। এই সময়ে পিছু ছাড়েনি ষড়যন্ত্র। সামনে এসেছে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ। বিএনপি-জামায়াতের চরম রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবিলা করে দেশ যখন স্থিতিশীল পরিবেশে অর্থনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক ধারায়, ঠিক তখনই তারা আবার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে। তবে এসব চ্যালেঞ্জের বেশিরভাগই স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট নয়, বরং ষড়যন্ত্রমূলকও। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।