বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বাপবেটা মিলেমিশে লিখিয়ে নিলেন গরিবের জমি!
# জমি উদ্ধারের কথা বলে বিনা টাকায় এখন নিজেই মালিক। # জমির ভাগ দেবেন বলে একজনের কাছ থেকে নিয়েছেন ১৮ লাখ টাকা। # এক ডিআইজির নামে টাকা নিলেও কিছুই জানেন না ওই কর্মকর্তা।
ইউসুফ আলী বাচ্চু
প্রকাশ: শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:০৪ পিএম আপডেট: ১০.০৯.২০২২ ১০:১৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

আফতাব উদ্দিন মোল্লা ওরফে দুলাল মোল্লা (৭০)। নামের আগে আছে ‘বীর মুৃক্তিযোদ্ধা’ খেতাবও। বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামে। পরিচয় দেন পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার বড়ভাই বলে। এভাবেই একটি অসহায় পরিবারের দেড় বিঘা জমি উদ্ধারের কথা বলে তিনি একের পর এক প্রতারণা আর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিনা টাকায় লিখিয়ে নিয়েছেন রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পাঁচ কাঠা অতিমূল্যবান জমি। পুরো বিষয়টি তিনি ঘটিয়েছেন তার ছেলেকে সাথে নিয়ে। আর এ কাজে তার সার্বক্ষণিক দোসর বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার এক বিএনপি নেতা। ক্যান্টনমেন্ট থানায় ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্যের দায়ের করা একটি অভিযোগ সূত্রে বেরিয়ে এসেছে এমন প্রতারণার খবর।

থানার অভিযোগ সূত্র এবং প্রতারণার শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদী নামাপাড়া এলাকায় আজ থেকে ৮১ বছর আগে প্রায় ২ একর জমি কিনেছিলেন নূর মোহাম্মদ শিকদার ও মোকসেদ আলী শিকদার নামের দুই সহোদর। তখন এলাকাটি ছিল একেবারেই অবহেলিত নিভৃত পল্লী। তাদের জমিটিও বেশির ভাগ ছিল জলমগ্ন। একসময় তারা চরম অর্থকষ্টে পড়লেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে বিক্রি করেননি এক ইঞ্চি জমিও। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর ছেলেমেয়েরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যান মিরপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে। এই ফাঁকে সেই জমির ওপর চোখ পড়ে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের। তারা জাল দলিল দিয়ে ভুয়া রেকর্ডের মাধ্যমে দখল করে নেয় দুই শিকদার ভাইয়ের প্রায় দেড় একর সম্পত্তি। তবে এত কিছুর পরও তাদের নাতি-নাতনিরা সেখান থেকে অবশিষ্ট ৫৮.৪৭ শতাংশ বা ৩৫.৪৩ কাঠা জমি নিজেদের নামে সিএস থেকে শুরু করে মহানগর জরিপ পর্যন্ত হালদাগাদ করে বর্তমান সাল পর্যন্ত খাজনাও প্রদান করেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে সেই জমির মূল্য বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে চোখ পড়ে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের। ফলে শতভাগ নিষ্কণ্টক এই জমিও বেদখল হতে শুরু করে।

জমির প্রকৃত মালিকরা বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও জমির দখল নিতে না পারায় একসময় বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন তাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয় আসাদ খানের সঙ্গে। তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে ‘শ^শুর’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন আফতাব উদ্দিন ওরফে দুলাল মোল্লাকে। তখন থেকেই প্রতারণার শুরু দুলাল মোল্লার। নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়া দুলাল মোল্লা সরকারে শীর্ষ পদে থাকা লোকজনের আত্মীয়সহ পুলিশ প্রশাসনে তার ব্যাপক প্রভাব বলে জাহির করেন। এমনকি পুলিশ প্রধান তার ছোটভাই, তিনি যা বলবেন পুলিশ তা-ই করবে- এসব নানা রকম গল্প ফেঁদে নিরীহ ভুক্তভোগীদের ফাঁদে ফেলেন। তার ছেলে পুলিশের গাড়িচালক আমান উল্লাহ আমানও নিজেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পরিচয় দিয়ে বাবা-ছেলে মিলে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে (ডিআইজি পদমর্যাদার এক নারী কর্মকর্তা) দিয়ে সমস্ত জমি উদ্ধার করে দেবেন বলে ভুক্তভোগীদের প্রলোভন দেখান। এ জন্য দুলাল মোল্লা দুটি শর্ত দেন- ১. এই ৩৫ কাঠা জমি থেকে তাকে বিনামূল্যে ৫ কাঠা জমি সাফ কবলা দলিল করে দিতে হবে; ২. পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ‘খুশি’ করার জন্য ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। বাবা-ছেলের প্ররোচনায় ভুক্তভোগী জমি মালিকরা বিনা টাকায় ৫ কাঠা জমি লিখে দেন দুলাল মোল্লার নামে। এর পরপরই বাবা-ছেলে মিলে ভুক্তভোগীদের ওপর শুরু করেন নগদ ২০ লাখ টাকার চাপ। তারা বলতে শুরু করেন, সিও স্যারকে (পুলিশের ঊর্ধ্বতন ওই নারী কর্মকর্তা) ২০ লাখ টাকা না দিলে তিনি কোনো কাজ করবেন না। গরিব ভুক্তভোগীরা তখন আরো অসহায় হয়ে পড়লে তাদের সেই দূরসম্পর্কের আত্মীয় আসাদ খান বাবা-ছেলের দাবীকৃত ২০ লাখ টাকার মধ্যে একাধিক কিস্তিতে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা প্রদান করেন। সেই টাকা পাওয়ার পরই সেখান থেকে সটকে পড়েন দুলাল মোল্লা ও তার ছেলে আমান। বিষয়টি এক কান-দু কান করে সেই নারী পুলিশ কর্মকর্তার কানে গেলে তিনি তার গাড়িচালক আমানকে ‘আমার নাম ভাঙিয়ে অবৈধ টাকা আনার সাহস কোথায় পেয়েছ’- বলে গালিগালাজ করে তার কক্ষ থেকে বের করে দেন। এর দিন কয়েক পরই আমানকে বদলি করে দেয়া হয় কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

বেশ কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর দুলাল মোল্লা ও তার ছেলে আমান ধোঁকা দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া ৫ কাঠা জমি নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। আর এই দখলের দায়িত্ব নেন তারই শ্যালক বাগেরহাটের মোল্লাহাট প্রেসক্লাবের সহসভাপতি পরিচয়দানকারী মো. মনির হোসেন এবং মোল্লাহাট বিএনপির নেতা সেলিম চৌধুরী। মনির ওই প্রতারণার দলিলের ১ নম্বর স্বাক্ষরদাতাও। ঘটনা আঁচ করতে পেয়ে জমির প্রকৃত মালিকরা এবার স্থানীয় এসি ল্যান্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। একপর্যায়ে বাইরের ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে জমিটি দখলের চেষ্টা করলে জমির মালিকরা গণমাধ্যমের শরণ নেন। বিষয়টি টের পেয়ে দুলাল মোল্লা ও তার ছেলে আমান সেখান থেকে সটকে পড়েন।

প্রতারণার মাধ্যমে বাবা-ছেলের নেওয়া ২০ লাখ টাকার বিষয়টি পুলিশের ওই নারী কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি ‘বিব্রত’ বোধ করেন এবং আমানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আপনারাও জানেন বিষয়টি (২০ লাখ টাকার) ফেইক, এ ব্যাপারে আর কী বলব।’ এ সময় তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জমি মালিক পরিবারের সদস্য বারেক আলী ও লিটন মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তারা সমস্বরে বলে ওঠেন, ‘ভাই, আমরা তো আগে অন্তত বলতে পারতাম মানিকদীতে আমাদের জমি আছে। কিন্তু ওই বাটপার বাপবেটা সেটুকুও কেড়ে নিয়েছে।’

দুলাল মোল্লা ও তার ছেলে আমানের প্রতারণার বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) বলেন, ‘এ বিষয়ে জমির প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।’

প্রতারক বাবা-ছেলের বিষয়ে ডিএমপি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার কার্যালয় থেকে বলা হয়, ‘দুলাল মোল্লা ও তার ছেলের বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগসহ একাধিক অডিও টেপ এসেছে। সেখানে তাদের প্রতারণার বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আমান যদি সত্যিকারেই পুলিশ সদস্য হয়ে থাকে তাহলে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত আফতাব উদ্দিন ওরফে দুলাল মোল্লাকে মুঠোফোনে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই লাইন কেটে দেন। পরে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

অপর অভিযুক্ত দুলাল মোল্লার ছেলে আমান উল্লাহর মুঠোফোনেও একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনিও ফোন ধরেননি।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]