নয়াদিল্লি থেকে ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:৪২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতের সাথে বাংলাদেশে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিনিয়তই পক্ষে-বিপক্ষে কথাবার্তা চলছে। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিবেচনায় এই দুই দেশের কূটনীতি বিশে^র কাছে রীতিমতে রোল মডেল হিসেবে মানে বিশে^র অন্য দেশগুলো। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করছেন। সফরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে, চুক্তিও সম্পাদন হয়েছে। তবে পানিসম্পদ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। গতকাল দুই দেশের একাধিক নদীর পানির বন্টন বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। শুধু তাই নয় ইতিমধ্যে চুক্তির মধ্যে থাকা গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ ব্যবহারে যৌথ নদী সমীক্ষার জন্য কারিগারি কমিটি গঠন হয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বিবেচিত হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এতে ৩৩ অনুচ্ছেদের ওই বিবৃতিতে রাজনীতি, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য, সংযুক্তি, পানিসম্পদ, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক, জনগণের মেলবন্ধনসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সব বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
এই অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে আকাঙ্খিত বিষয় ছিল পানিসম্পদ বন্টন। আলোচিত তিস্তা চুক্তি ছাড়া নতুন কয়েকটি নদীর পানি বন্টন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কুশিয়ারা নদী। এই নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে দুই দেশের নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ত্রিপুরা রাজ্যের সেচের প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় নিয়ে ফেনী নদীর অন্তর্বর্তী চুক্তি সইয়ের জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা অন্তর্বর্তী চুক্তি সইয়ের রূপরেখা তৈরি এবং তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের লক্ষ্যে বাড়তি কয়েকটি নদী যুক্ত করতে যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে যৌথ সমীক্ষার জন্য যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন।
যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী সেব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটিই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য যে বিষয়টি সর্বাগ্রে আলোচ্য সেটি হচ্ছে পানিবন্টন বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে কতদূর। তিস্তা নদীর পানি বন্টানের বিষয়টি যেহেতু ভারতের কাছে একটি জটিল বিষয় সেই হিসেবে অন্য নদীগুলো থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায় করার বিষয়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসেবে কুশিয়ারা নদীর পানি বন্টন বিষয়ে ফয়সালার ব্যাপারটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সাফল্যই বলা যেতে পারে। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফেনী নদীর বিষয়ে আলোচনা শুরু হওয়াও একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে নিতে পারি। এই আলোচনা শুরু মানে ভবিষ্যতে এর সমাধানও সম্ভব। এই সফরে অন্যান্য ইস্যুতে যেমন সফল বলা যায় তেমনি পানিবন্টন বিষয়েও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদৗর কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে নেওয়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞার পরিচয় বলতে পারি।