শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
তিনি একাই ‘তিনজন’
একসঙ্গে তিন পদে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মনজুরুল কবির
আরিফুর রহমান
প্রকাশ: সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৫৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে এক কর্মকর্তা দীর্ঘদিন তিন পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনটি পদই রাজস্ব খাতের এবং যুগ্মসচিব মর্যাদার। তবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা অধিদপ্তরের স্থায়ী কর্মকর্তা নন। ‘চার্টার অব ডিউটিজ’ অনুযায়ী, সংস্থাটি অভ্যস্তরীণ এবং উপকূল ও সমুদ্রগামী নৌ চলাচল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অধিদপ্তরের অস্থায়ী প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক (সিইএসএস) মনজুরুল কবির তার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত চিফ মেরিন এক্সামিনার (সিএমই) ও চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার (সিএনএস) এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) এস এস নাজমুল হক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেপ্তার হয়ে সাময়িক বরখাস্তের পর চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির প্রশিক্ষক মনজুরুল কবিরকে প্রেষণে এ পদে নিয়োগ দেয় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলামও দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাকে সাময়িক বরখাস্তের পর নাজমুল হককে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তবে জাহাজ জরিপকারক হিসেবে মনজুরুল কবিরের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তা সত্ত্বেও সংকটকালে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি তখন থেকে টানা সোয়া চার বছর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া অস্থায়ীভাবে পদায়ন পাওয়া এই কর্মকর্তার ওপর পরবর্তী সময়ে আরো দুটি দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এ নিয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঝে মৃদু ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

নৌ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নৌ অধিদপ্তরের সিএমইর চলতি দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদকে ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবরে অধিদপ্তরের অঙ্গ সংস্থা চট্টগ্রামের নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার শূন্যপদে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়। এতে সিএমই পদটি শূন্য হলেও নৌ মন্ত্রণালয় তখন কাউকে নিয়োগ বা চলতি দায়িত্ব প্রদান করেনি। তবে অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালকের নির্দেশে সিএনএস ক্যাপ্টেন কে এম জসিম উদ্দীন সরকার এ পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্রমতে, একই সঙ্গে তিনি (জসিম উদ্দীন) সিএমই এবং সিএনএস ছাড়াও বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ অর্থায়নে চলমান গ্লোবাল মেরিন ডিসট্রেস্ড সেফটি এ্যান্ড সিস্টেম (জিএমডিএসএস) প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এভাবে একসঙ্গে তিনটি পদে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গত ৩১ জানুয়ারি অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যান। তবে তিনি অবসরে যাওয়ার প্রায় এক বছর আগে অধিদপ্তরে নতুন মহাপরিচালক যোগদান করেন। তিনি (মহাপরিচালক) পরবর্তী সময়ে প্রধান প্রকৌশলী মনজুরুল কবিরের ওপর সিএমই এবং সিএনএস-এর অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। এর পর থেকে তিনি একাই তিনটি দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সংশ্লিষ্ট নিয়োগ ও চাকরি বিধি অনুযায়ী, নৌ মন্ত্রণালয় এ ধরনের শূন্যপদে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে চলতি দায়িত্ব প্রদান অথবা মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্য কোনো সংস্থা থেকে সংযুক্তিতে বা প্রেষণে নিয়োগ দিতে পারে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অন্য যেকোনো সংস্থার উপযুক্ত কর্মকর্তাকেও প্রেষণে নিয়োগ দিতে পারে। তবে এসব পদে দৈনন্দিন অথবা আপৎকালীন অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়ার এখতিয়ার নৌ অধিদপ্তরের নেই।

বিশেষজ্ঞসহ নৌখাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নৌ নিরাপত্তার জন্য চিফ মেরিন এক্সামিনার বা সিএমই পদটি অত্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার অধীনে সকল ধরনের অভ্যন্তরীণ নৌযানের মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষা ছাড়াও সমুদ্র ও উপকূলগামী জাহাজের নাবিকদের সব ধরনের যোগ্যতানির্ধারণী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান প্রকৌশলীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের বাইরে সিএমইর গুরুদায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা আদৌ সম্ভব নয়। এর ফলে জাহাজের নাবিকদের দক্ষতা যাচাইয়ে ত্রুটি থেকে যেতে পারে; যা নৌ দুর্ঘটনার ঝুঁকিপ্রবণ।

সূত্রমতে, চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার বা সিএনএস পদটিও গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থার (আইএমও) বিভিন্ন বিধিবিধান ও নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং তা অংশীজনদের অবহিত করার দায়িত্ব সিএনএসের। দেশের অভ্যন্তরীণ সরকারি-বেসরকারি নৌ সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক সমন্বয় করা এবং আইএমওর প্রতিনিধিদল নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশে এলে তা পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। এসব কাজে লন্ডনে আইএমও সদর দপ্তরসহ বছরে একাধিকবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সভা-সেমিনারেও যেতে হয় তাকে; প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে থেকে যা সম্ভব নয়। মূলত যোগ্যতার বিচারে একজন মাস্টার মেরিনার সিএনএস পদের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু মনজুরুল কবির মাস্টার মেরিনার নন; তিনি একজন নৌ প্রকৌশলী।  

এদিকে প্রধান প্রকৌশলী পদটির প্রকৃত নাম ‘প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক (সিইএসএস)’ হলেও জাহাজ জরিপ (ফিটনেস পরীক্ষা) ও নিবন্ধন প্রদানের কোনো অভিজ্ঞতা মনজুরুল কবিরের নেই। যে কারণে নৌযানের ফিটনেস পরীক্ষা ও নিবন্ধন প্রদানে তার অধীনস্থ জাহাজ জরিপকারকরা কোনো ভুল বা অনিয়ম করলে তা দেখার সুযোগও নেই তার। তা সত্ত্বেও দীর্ঘ সোয়া চার বছর তাকে এ পদে রাখা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় তাকে অতিরিক্ত আরো দুটি দায়িত্ব দেয়ায় জোরালো হয়ে উঠেছে সে প্রশ্ন।

এছাড়া নৌ মন্ত্রণালয় প্রায় তিন বছরেও সিএমই পদে কাউকে চলতি দায়িত্ব প্রদান কিংবা পদায়ন করেনি। মহাপরিচালকের অফিস আদেশে অস্থায়ী প্রধান প্রকৌশলী দীর্ঘদিন সিএমই এবং সিএনএসের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন; যা প্রচলিত রীতিবহির্ভূত বলে খোদ নৌ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই মন্তব্য করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে অতিসম্প্রতি নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ হয়েছে এবং তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। তাই তার সঙ্গে যোগদান করা সম্ভব হয়নি। তবে দীর্ঘদিন নৌ পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা নাগরিক সংগঠন ‘নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলন’-এর সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল বলেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের জনবল কাঠামো সংশোধন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় প্রধান প্রকৌশলীর মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তার ওপর যুগ্ম সচিব মর্যাদার আরো দুটি পদের দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। এছাড়া তিনি অধিদপ্তরের নিজস্ব কর্মকর্তাও নন। তার ওপর থেকে বাড়তি দায়িত্ব প্রত্যাহার করে প্রত্যেক পদে আলাদা কর্মকর্তা পদায়ন এবং অবিলম্বে নতুন প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আমিনুর রসুল বাবুল।

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী মনজুরুল কবিরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি এর উত্তর দেননি।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]