রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ছেলে সারফরাজ আনোয়ার।
জানা গেছে, আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাওয়ার সময় পড়ে যান গাজী মাজহারুল আনোয়ার। এরপর হাসপাতালে নিলে তিনি সেখানেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে যান। তাঁর মেয়ে দিঠি আনোয়ার একজন কণ্ঠশিল্পী। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে আছেন। মেয়ে দেশে ফিরলে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন ছেলে সারফরাজ আনোয়ার।
জনপ্রিয় অনেক চলচ্চিত্রের গান ও কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে গাজী মাজহারুল আনোয়ার তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। বছরের পর বছর তিনি গান লিখেছেন। তাঁর গানে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ ও অনুভূতির কথা। এখন পর্যন্ত তাঁর রচিত গানের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। জনপ্রিয় বেশ কিছু ঢাকাই সিনেমার পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন তিনি।
১৯৬২ সালে গাজী মাজহারুল আনোয়ার লিখেছিলেন প্রথম গান ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’। গানটির সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমীন। ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান লিখে ৫০ টাকা আয়ের মাধ্যমে পেশাদার গীতিকার হিসেবে জীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার পর গাজী মাজহারুল আনোয়ার চিত্রনাট্য, গান, সংলাপ ও কাহিনি রচনা শুরু করেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই তাঁর অবদান ছড়িয়ে আছে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অঙ্গনে।
সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ চলচ্চিত্রে ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লেখা শুরু করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি একজন সফল কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দেশ চিত্রকথা থেকে ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘শর্ত’, ‘সমর’, ‘শ্রদ্ধা’, ‘ক্ষুধা’, ‘স্নেহ’, ‘তপস্যা’, ‘উল্কা’, ‘আম্মা’, ‘পরাধীন’, ‘আর্তনাদ’, ‘পাষাণের প্রেম’, ‘এই যে দুনিয়া’ নামের চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন।
বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের মধ্যে তিনটি গান গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা। গানগুলো হচ্ছে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’ ও ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’। গীতিকার হিসেবে পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এ ছাড়া ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, এস এম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তিনি রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।