কুড়িগ্রামের উলিপুরে ৪’শ বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা ও হতদরিদ্র অসহায় নারীরা এখন স্বপ্ন দেখছেন স্বাবলম্বী হওয়ার। যাদের স্বপ্নের সারথী উদ্যোক্তা ফরিদা ইয়াসমীন। প্রায় ১৩ বছর আগে হেক্স-সুইজাল্যান্ডের অর্থায়নে একটি বে-সরকারী এনজিও বিডিএসসি নামে পরিচালিত ‘নারী’ প্রকল্পে চাকুরির সুবাদে এসব নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসব নারীরা যখন স্বাবলম্বীতার স্বপ্ন দেখছিলেন, তখন এনজিওটির প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মায়ার টানে এসব নারীদের সাথে থেকে যান ফরিদা ইয়াসমীন।
প্রকল্পের নারীদের নিয়ে “নারী এ্যাসোসিয়েট ফর রিভাইভাল এন্ড ইনিশিয়েটিভ” নামে একটি সংগঠনের নামকরণ করে সরকারি ভাবে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করেন। ফের শুরু হয় এসব অসহায় নারীদের সাথে পথচলা। শুরু করেন, পাটের আঁশ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদনের কাজ। গ্রামীণ এসব অবহেলিত নারীদের সৃজনশীল হাতের ছোঁয়ায় পাটের আঁশ থেকে তৈরি করেন বেনি, সূতলী, সিকা, ঝুঁড়ি, শতরঞ্জি, ম্যাট, নানা ধরনের ব্যাগ, পাপোশ, কুশন কাভার, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, শো-পিস, গহনাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন পন্য। বদলে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর এসব নারীদের এখন সমস্যা কর্ম সংস্থানের। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ে আর্থিক সহযোগীতা পেলে এ অ লের নারীদের যেমন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে, তেমনি পাবে স্বপ্নের সুখি জীবন।
বৃহস্পতিবার সকালে উলিপুর পৌরসভার রামদাস ধনিরাম এলাকায় গড়ে তোলা কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, এসব নারীদের কর্মচা ল্যতা। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। এসময় কথা হয় কর্মরত শ্রমিক এজেমা বেগম (৫২), মানসিক প্রতিবন্ধি সালমা বেগম (৩০), আকলিমা বেগম (৬০) সহ অনেকের সাথে। তারা বলেন, প্রথমে ৫’শ থেকে ২হাজার টাকা বেতন পেলেও বর্তমানে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পাই। রিনা বেগম (৩৫) বলেন ‘আগোত হামার সংসারত অভাব ছিল, এখন আর অভাব অনটন নেই। ছাওয়া পোওয়া নিয়ে শান্তিতে আছি’। এছাড়াও অনেকেই বলেন, আাগে সামাজিক ভাবে তাদের খুবই অবহেলা করা হতো। এখন পরিবারের লোকজনসহ সবাই তাদের সম্মান করেন। কাজ করে উপার্জন করার আনন্দই আলাদা, যা এখন বুঝতে পাইছি।
নারী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, শুরুতে ২৫টি তাঁত কিনে শুরু করলেও বর্তমানে ৬৮টি তাঁত, ১০টি সেলাইমেশিন, ১০টি শতরঞ্জি তৈরির মেশিন দিয়ে পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে উলিপুর, চিলমারী ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার প্রায় এক হাজার নারী ও কিশোরীদের পাট পন্য তৈরির উপর প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষন প্রাপ্ত এসব নারী ও কিশোরীরা তাদের বাড়িতে থেকে পন্য উৎপাদন করে আয় করতে পারছে এবং ইতিমধ্যে ১০ জন উদ্যোক্তাও তৈরি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কুড়িগ্রাম সদরে ‘ইমাজিন ক্রাফট’ নামে একটি শো-রুম খোলার পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পমেলায় অংশগ্রহণ করে বায়ার লিঙ্কেসের মাধ্যমে এসব পন্য বাজারজাত করা হচ্ছে। ব্যাংক ঋণসহ কোন ধরনের আর্থিক সহযোগীতায় না পাওয়ায় সংকটে পড়তে হচ্ছে।
নারী সংগঠনের সভাপতি ছবি বেগম বলেন, আমিও একজন অবহেলিত নারী ছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, এসব নারী শত প্রতিকূলতার মাঝেও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সূখের ঠিকানা খুঁজে পাবে। এছাড়া সংগঠনের নিজস্ব জমিতে ইউএনসিডিএফ’র অর্থায়নে ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩তলা বিশিষ্ট ভবনের ২ তলার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।