সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু শেখ হাসিনার ভারত সফর
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১১:৩০ এএম আপডেট: ০৩.০৯.২০২২ ১১:৪১ এএম | অনলাইন সংস্করণ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামী সোমবার দেশটিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী রাজনীতির নতুন মেরুকরণ এবং বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দেড় বছরেরও কম সময়ের আগে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর এখন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই সফর দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। দুই-তিন বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে যে শীতল সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠকে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে যেহেতু এই সফর হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইস্যু অবশ্যই আলোচনায় আসবে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নতুন করে বিশ্বরাজনীতি যে মোড় নিচ্ছে, সেটিও ভারতের পক্ষ থেকে আলোচনায় প্রাধান্য পাবেএমন ইঙ্গিত দু-তিন মাস ধরেই দেখা যাচ্ছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নির্বাচনের আগে যেহেতু এই সফর, তাই দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তো আলোচনা হতেই পারে। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দুনিয়াজুড়ে বিশ্বরাজনীতির যে মেরুকরণ হয়েছে তাতে বাংলাদেশ সবার কাছেই এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পারস্পরিক সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় আসবে স্বাভাবিকভাবেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি দুই দেশের মধ্যে যে সুসম্পর্ক আছে, তা অবশ্যই সমতার ভিত্তিতে।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ওয়ালি উর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ ৫০ বছরের সুসম্পর্ক। রাজনৈতিক নতুন মেরুকরণে অন্য দেশগুলো যেভাবে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে, ভারতও তার বাইরে নয়। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আমি আশা করি।’

এদিকে শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে নয়াদিল্লি ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশের অগ্রবর্তী দল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি চিফ অব প্রটোকল শফিউল ইসলামের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অংশীজন ও দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা ছিলেন। ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা, আবাসস্থল ও অন্যান্য অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেছেন তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এই সফরের অর্থনৈতিক ইস্যুতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সমন্বিত বাণিজ্য চুক্তি, সেপা (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট)। জ্বালানি খাতে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার বিষয়কে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেবে। ফলে জ্বালানি, খাদ্য ও বাণিজ্য বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে দুই দেশ।

সেপা চুক্তি সম্পর্কে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘সেপা চুক্তি সইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশ। তাই আমি মনে করি এই চুক্তিতে  দুই পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ যেন সমতার মধ্যে হয়, সেটি দেখতে হবে। চুক্তি একপক্ষীয় হলে, এটি টেকসই হবে না।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগেই দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বৈঠক করেছেন দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। আসন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে গুরুত্ব পাবে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ইস্যু। সামরিক সরঞ্জাম কেনা নিয়ে ২০১৯ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়। ভারত ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। ওই ঋণের আওতায় ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনবে বাংলাদেশ।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই সফরে, বিশেষ করে রাজনৈতিক সম্পর্কের কিছু ‘ভুল বোঝাবুঝি’ নিরসনের চেষ্টা হবে। অর্থনৈতিক এবং সামরিক খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। কানেক্টিভিটি, বাণিজ্য, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, সামরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঊর্ধ্বগতির যে ধারাবাহিকতা রয়েছে তা আরও বেগবান হবে।

বরাবরের মতো এবারও আলোচনায় আসবে সীমান্ত হত্যা ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়। বাংলাদেশ এবার জোর দেবে পুরোপুরিভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধের ওপর। সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যাতে মাদক, মানবসহ সব ধরনের চোরাচালান বন্ধ থাকে, সে প্রসঙ্গে আলেচনার প্রস্তুতি রয়েছে বাংলাদেশের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে সমুদ্রে যে বিরোধ বিদ্যমান রয়েছে, তারও প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ। মেরিটাইম সিকিউরিটির জন্য ভারত থেকে রাডার ক্রয় নিয়েও কথা হবে। উপ-আঞ্চলিক এনার্জি হাব গঠন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। সেটা হলো বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটানকে নিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এর নেতৃত্বে রয়েছে ভারত। বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে চায়। একই সঙ্গে এই অঞ্চলে জ্বালানি নিরাপত্তা কানেকটিভিটি বিষয়টি নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ। বাণিজ্য নিয়ে কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) সই করতে পারে দুই দেশ। এই চুক্তি হলে ভারত ও বাংলাদেশের পণ্য দুই দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ  এন্টি ডাম্পিং নীতি নিয়েও কথা বলবে।

তারা আরও জানায়, এই সফরে ৫৪ অভিন্ন নদীর মধ্যে মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমারের পানিবণ্টনের রূপরেখা নিয়ে সমঝোতার বিষয় তোলা হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। আর তিস্তার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়া গত ২৫ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন আটটি নদী নিয়ে পানিবণ্টনের কথা বলা হয়েছে। শীর্ষ বৈঠকে এ বিষয় আলোচনায় আসবে। দুই দেশ নদী নিয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি, সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ে একমত হবে, বিশেষ করে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন ও ফেনী নদীর পানির ব্যবহার নিয়ে খসড়া প্রায় চূড়ান্ত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরের সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয়দের সম্মান জানাতে ‘মুজিব স্কলারশিপ ফর ওয়ার ভেটারেনস ফ্যামিলি’ নামের বৃত্তি চালুর ঘোষণা দেবেন। ৭ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয়দের উত্তরসূরিদের কয়েকজনের হাতে এই বৃত্তি তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। শুরুতে এ কর্মসূচির আওতায় মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে ১০০ এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ১০০ করে ২০০ শিক্ষার্থীকে এ বৃত্তি দেওয়া হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যথাক্রমে এককালীন ৫০০ এবং ১ হাজার ডলার করে দেওয়া হবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে।

এ ছাড়া টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুরস্কৃত করবে দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট (টেরি)। এ ছাড়া দুই দেশের রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশিক্ষণের জন্য একটি সমঝোতা প্রস্তুত করা হয়েছে।

সফরের খসড়া সূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর দিনের প্রথম ভাগে ভারতে পৌঁছাবেন। ওই দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৬ সেপ্টেম্বর সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একান্তে এবং প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তালিকায় থাকা সমঝোতা স্মারক সই হবে।

প্রধানমন্ত্রী ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেবেন। ওই দিন দুপুরে তিনি দিল্লি থেকে রাজস্থানে যাবেন। তিনি সেখানে আজমির শরিফ দরগায় যাবেন। সেখানে মাজার জিয়ারত শেষে পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।

২০১৯ সালের অক্টোবরে শেখ হাসিনা সর্বশেষ ভারত সফর করেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনের আগে এটি হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ভারত সফর। ২০২১ সালের মার্চে মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করেন। সূত্র: দেশ রূপান্তর



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]