প্রকাশ: শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:৪৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
খুলনার পাইকগাছায় অনাবৃষ্টি ও দাবাদাহ-খরায় পানি শূন্য ফসলের মাঠ। প্রচন্ড দাবদাহ ও অনাবৃষ্টি থাকায় অনেক ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এতে চলতি মৌসুমে রোপা আমন আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। সার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা কৃষকেরা। তীব্র খরায় আমন ক্ষেত রোদে পুড়ে ধানের চারা বিবর্ণ হয়ে পড়ায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তার উপর উপজেলার মাটি লবণাক্ত। কৃষক পুকুর-বিল থেকে সেচ দিয়ে যেসব জমিতে চারা রোপণ করেছে, এখন সেসব জমিতে পানি সেচ দিয়ে চারা বাঁচিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। গত বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত এর এক-চতুর্থাংশও হয়নি। এ কারনে সেচ দিয়ে আমন চাষ করতে অধিক খরচ পড়ছে চাষিদের। পানির অভাবে আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। উপজেলায় অনেকে চাষি সেচ দিয়ে চারা রোপণ করলেও পানির অভাবে রোপণকৃত চারা হলুদ হয়ে যাচ্ছে, চারা মরে যাচ্ছে। কয়েক হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। বীজতলায় চারার বয়স বাড়ছে কিন্তু বৃষ্টির অভাবে জমি চাষ করতে পারছেন না।
যে সকল কৃষকরা সেচ দিয়ে চারা রোপণ করেছিলেন, এখন তাদের প্রতিসপ্তাহে সেচ দিয়ে চারা বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। এ কারনে বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে, উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় এবছর ১৭ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বীজতলা ৯৯৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হলেও বীজতলা হয়েছে মাত্র ২৫৫ হেক্টর। বীজতলার জন্য কৃষক বীজধান ক্রয় করেছে তবে পানির অভাবে জমি আবাদ করতে পারেনি। এক দিকে পানির অভাব অন্যদিকে তেল সারের মুল্য বৃদ্ধি তার মধ্যে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং সব মিলে শঙ্কায় কৃষক। এ বছর শ্রাবণ মাস জুড়েই চলছে স্মরণকালের ভয়াবহ খরা। ১৫ আষাঢ় থেকে আমন ধান রোপণের মৌসুম শুরু হলেও বৃষ্টির অভাবে জমিতে ধান রোপণ করা যাচ্ছে না। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে কৃষকের গোলায় ধান উঠবে কি না এ নিয়ে শংকিত প্রান্তিক চাষীরা।
উপজেলার গদাইপুরের চাষি আব্দুল আজিজ জানান, গত বছর এসময় আমন ধানের চারা লাগানো শেষ হয়েছিল আর এ বছর শুরু করতে পারেনি বৃষ্টি অভাবে। রাড়–লীর কৃষ্ণপদ রায়, সবুর, করিমসহ কয়েকজন চাষি জানান, বৃষ্টির অভাবে জমিতে আমন চাষ শুরু করতে পারিনি। হঠাৎ করে একটু বৃষ্টির দেখা দিলেও তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। যেটুকু বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে জমি ভিজছে না। বিরাশির চাষি সবুর জানান, সেচ দিয়ে চারা রোপণ করতে বিঘাপ্রতি খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। তারপর বন্যা ও খরার ঝুঁকি তো আছেই।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমনের আবাদ হয় বর্ষাকালে। বৃষ্টি নির্ভর আমনের চাষাবাদ। কমপক্ষে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন হয় আমনের চারা রোপণ করতে। কিন্তু গত এক মাসে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৫০ মিলিমিটারের মতো। আর সেই কারনে অনেক জমি পতিত আছে। তবে কৃষকদের জমিতে সেচ দিয়ে ধান রোপণ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে সেচ দিয়ে চাষ করতে কৃষকদের একটু খরচ বাড়বে। বৃষ্টি হলে তাদের জন্য কাজটি অনেক সহজ হতো। আর অনাবৃষ্টির কারনে অনেক জায়গায় বীজতলা নষ্ট হয়েছে। তাই কৃষকদের নাবী জাতের বীজতলা তৈরি করতে বলা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের কর্মীরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে।