প্রকাশ: শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০:৪২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
উজানের পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, তিস্তা নদীর উজানে ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে করে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লহ্মীটারী, গজঘন্টা, মর্ণেয়া, গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পান্দিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার হাত থেকে বাঁচতে গবাদী পশু-পাখি নিয়ে নদীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। এদিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে চরাঞ্চলগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের আমন ক্ষেত। এদিকে শুক্রবার উজানের ঢল কমে যাওয়ায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিকেল ৩টায় ওই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩৫ সে.মি। যা বিপদসীমার ২৫ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি কমে আসলেও গঙ্গাচড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতী হয়নি।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরের আব্দুল মান্নান বলেন, হঠাৎ করে রাতের বেলা তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘর-বাড়ি ফেলে গবাদী পশু নিয়ে তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। খোলা আকাশের নিচে থাকায় রাতে বৃষ্টির পানিতে পুরো পরিবারের সদস্যরা ভিজে গিয়েছি। ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে, খাবার নাই, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। আমরা চরম কষ্টে রয়েছি।
লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর জয়রামওঝার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীর তীরবর্তী এলাকায় আমার আমনের ক্ষেত ছিল। তা নদীতে পুরোটাই ডুবে গেছে। যদি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তবে আমনের ক্ষেত রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, গঙ্গাচড়া উপজেলার মধ্যে আমার ইউনিয়ন বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। আমি ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থের বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টায় তিস্তার উজানের অংশ সিকিম ও গ্যাংটকে আবার মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের শংঙ্কা রয়েছে। এতে করে তিস্তা নদীর পানি পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। তিস্তা নদীর তীরবর্তী উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ বার্তা পৌঁছানো হয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।