#বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাঙলার মাটিতে চির অমর হয়ে থাকবে: ইফফাত আরা নার্গিস #১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট হামলা একই সূত্রে গাঁথা: এম এ লিংকন মোল্লা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০২২, ১১:১৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাঙালি জাতির জন্য শোকাবহ মাস হচ্ছে আগস্ট। এই আগস্টেই জাতির ইতিহাসের চরমতম শোকবিধুর ও কলঙ্কিত এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছিল। ১৯৭৫ সালের এই আগস্টের মধ্যভাগে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পনরোই আগস্ট ও একুশে আগস্টের সময়টা অনেক লম্বা হলেও এর চক্রান্তকারীরা কিন্তু একই ও তাদের নীল নকশা ও উদ্দেশ্য ছিল একই।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৮০৫তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগীত শিল্পী, সেক্টর কমান্ডরস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরের কেন্দ্রীয় নারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব, ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম এ লিংকন মোল্লা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, আগস্ট যেন বাংলাদেশের জন্য এক চরম বিপর্যয়ের মাস। সেই যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার নৃশংস ঘটনা, তারপর একে একে ভয়াল বিপর্যয় নিয়েই এসেছে আগস্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আছে কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মতো নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটিও নেই। সেদিন তারা গর্ভবতী মহিলা থেকে একজন নিরীহ শিশুকেও ছাড় দেয়নি। সেদিন ঘাতকদের মূল টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবার ও নিকট আত্মীয়রা। ঘাতকরা তাদের কাউকেই পৃথিবীতে জীবিত রাখবে না এটাই ছিল তাদের মূল পরিকল্পনা। সেই অনুযায়ী তারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িসহ আশপাশের একাধিক বাড়িতে হত্যার জঘন্য উল্লাসে মেতে ওঠে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর নিকট আত্মীয় সহ মোট ২৬ জন সেদিন শহীদ হন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে তারা প্রাণে বেঁচে যান। তবে সে সময় তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ী এই রাষ্ট্রকে পেছনের দিকে ঠেলেছে আগস্ট। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর বাংলাদেশকে তার হারানো মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথে ফেরানোর চেষ্টা আবার শুরু হয়। সে চেষ্টা সাফল্যের মুখ দেখে ১৯৯৬ সালের জুনে, আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ ২১ বছর পরে গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল চিন্তার পথ ধরে বাংলাদেশ পরিচালিত হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলতেই থাকে। সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায়ই বার বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। গত ৪০ বছরে প্রায় ১৯ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এই হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরই চূড়ান্ত অপচেষ্টা হয়েছিল ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট। সেদিন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি এবং জঙ্গিদের সম্মিলিত প্রয়াসে পাকিস্তান থেকে সরবরাহ করা আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা, মহাকালের মহানায়ক। এ দেশের মানচিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার জীবন। এ জাতির ভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে তার জীবন। শত চেষ্টা করেও ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায়নি তাঁর নাম, তাঁর অর্জন।
এম এ লিংকন মোল্লা বলেন, বাঙালি জাতির জন্য শোকাবহ মাস হচ্ছে আগস্ট। এই আগস্টেই জাতির ইতিহাসের চরমতম শোকবিধুর ও কলঙ্কিত এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছিল। ১৯৭৫ সালের এই আগস্টের মধ্যভাগে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আগস্টের কালরাতে আমরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হারায়নি সেদিন আমরা হারিয়েছি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নীপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুঁড়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও এই ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং ৫ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে একমাত্র আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের কূট ষড়যন্ত্র আর হামলার শিকার হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং চেতনাও। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে এর বিচারের পথ রুদ্ধ করে আরেক কলঙ্কিত ইতিহাস রচনা করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কলঙ্কিত সেই অধ্যাদেশ বাতিল ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া ও নানা কূটকৌশলের জাল ছিন্ন করে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা এবং পাঁচ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে। তবে পুরো জাতি এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বঙ্গবন্ধুর বাকি পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকরের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। চক্রান্তকারীরা এখনো জননেত্রী শেখ হাসিনার আশপাশে ঘোরাঘুরি করছে। এদের কেন বিচার আওতায় আনা হচ্ছে না। পনরোই আগস্টের এখনো অনেক সাক্ষী জীবিত আছে যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর মোস্তাকের মন্ত্রী সভায় যোগদান করেছিল। পনরোই আগস্ট ও একুশে আগস্টের সময়টা অনেক লম্বা হলেও এর চক্রান্তকারীরা কিন্তু একই ও তাদের নীল নকশা ও উদ্দেশ্য ছিল একই।