ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। অডিওতে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের হুমকি দিতে শোনা গেছে। মূলত হলের সিট বাণিজ্য ও সিট ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরেই ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের আসকারা পেয়েই দিনের পর দিন সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে বেপরোয়া আচরণ করে যাচ্ছেন রিভা, এমনটাই দাবি ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। ভোরের পাতার সঙ্গে আলাপকালে লেখক ভট্টাচার্য গ্রুপ থেকে সহ সভাপতি পদ পাওয়া ইডেনের এক নেত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইডেন কলেজকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেন রিভা। তার আচরণ এটতাই জঘন্য যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথিত বউ হিসাবে রিভা কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। সবকিছুর জন্য লেখক ভট্টাচার্যের সায় রয়েছে। তিনি চাইলেই রিভাকে সতর্ক করতে পারতেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে রিভা এবং তার কয়েকজন অনুসারীর বেপরোয়া আচরণের বিষয়ে বারবার জানানো হলেও আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য কোনো ব্যবস্থা নেননি। এর আগেও একটি মেয়েকে রুমে আটকিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়েছিল রিভা। ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনা এই কলেজে রাজনীতি করেছেন, তাই এই কলেজে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতন হওয়ার দরকার ছিল বলেও মনে করেন এই সহ সভাপতি।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) অডিওটি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অডিওতে যে কথাগুলো শোনা যাচ্ছে, তা নিজের বলে গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন তামান্না।
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে বলতে শোনা যায়, এইটুকু সেন্স থাকা উচিত ছিল, রুমটা যেহেতু ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্ট নিয়ে নিছে, ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্টের ওপরে আর কেউ নাই। উল্টাপাল্টা করবি এক পায়ে পাড়া দেব, আরেক পায়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলব।
‘তোরা লিগ্যাল তাতে আমার… গেছে। কোন হেডাম দেখাইতে আসিস তোরা। আমার পলিটিক্যাল রুমে তোরা লিগ্যাল থাকবি কি না, সেটা তোদের বিষয়। কে কে টাকা জমা দিছিস? আমারে দিছিস? আর কে লিগ্যাল?’
এ সময় পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘ও তো অসুস্থ, বাসায় গেছে।’ এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘২০২ (রুম নং) এ আর লিগ্যাল কে? তোরা লিগ্যাল তাতে আমার কী… গেছে? বল? আমি কি …… তোদের। চ্যাটাং চ্যাটাং করতাছোস! এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ধইরা ছিঁড়া ফেলমু। চার মাস হয়ে গেছে, ফাইজলামি শুরু করছিস!’
এ সময় সুমনা মীম নামের একজন সহ সভাপতিকে গালমন্দ করতে শোনা যায় রিভাকে। তিনি বলেন, ‘বুঝিস না পলিটিক্যাল রুমে থাকিস। তোদের লিগ্যাল করাইছে তাতে আমার …. কি? আমি যদি একটা সিট না দেই, ২০২ থেকে তোদের কোন বাপ সিট দেবে? ম্যাডামেরা দেবে, ক্ষমতা আছে ম্যাডামদের? ম্যাডামদের ক্ষমতা আছে আমাদের রুম থেকে একটা মেয়েকে বের করার। ইডেন কলেজের প্রিন্সিপালেরও ক্ষমতা নেই এই রুম থেকে একটাকে বের করার। একদম গলায় পাড়া দিয়ে ধরতে ইচ্ছা করতেছে। আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে যেই রুমে বলব সেই রুমে যাবি। আমার সঙ্গে হেডাম দেখাইতে আসে।’
এতে ইডেন কলেজ প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে শোনা যায়, ‘একটা সিঙ্গেল মেয়ে যদি ওই রুমে এসে কন্ট্রোল করতে চাস, সে হোক নেত্রী, ইডেন কলেজের প্রিন্সিপাল ম্যামও কোনো মেয়ে দিতে পারবে না। এইটুকু সেন্স থাকা উচিত ছিল রুমটা যেহেতু ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্ট নিয়ে নিছে, ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্টের ওপরে আর কেউ নাই।’
এ বিষয়ে তামান্না জেসমিন রিভা গণমাধ্যমকে বলেন, এটা তেমন বড় কোনো বিষয় না। আমার কিছু জুনিয়র রুমে গেলে তাদের গালাগাল করে তারা। পরে এ বিষয়ে কথা বলতে যাই। পলিটিক্স রুমে থাকলে প্রোগ্রাম করতে হবে এটা স্বাভাবিক বিষয়।
ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। হলের বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। আমি বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। কেউ যদি কলেজ প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে না মানে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রলীগের সভাপতি বলে তাকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
আগামী পর্বে- দুই বিয়ে করেও ইডেন ছাত্রলীগের সভাপতি রিভা!