ভারতে সিআইআই বা ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের মতো প্রধান বণিকসভাগুলোর প্ল্যাটফর্মে শেখ হাসিনা পরের দিন (৭ সেপ্টেম্বর, বুধবার) সকালে ভাষণ দেবেন। ভারতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কীভাবে উভয়পক্ষই উপকৃত হতে পারে, সেই চিত্রই সেখানে তুলে ধরবেন তিনি।
বুধবার বিকালেই তিনি পাড়ি দেবেন রাজস্থানের পবিত্র আজমির শরিফ দরগায়। সফরের একেবারে শেষ পর্বে খাজা বাবার এই মাজার জিয়ারত করেই তিনি রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের বিমানবন্দর থেকেই বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সোজা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন, দিল্লিতে আর ফিরবেন না।
তিস্তায় না, ‘সেপা’য় হ্যাঁ
এই সফরেও যে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি দিনের আলো দেখছে না, তা অবশ্য স্পষ্ট। দুই পক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারাই একান্ত আলোচনায় স্বীকার করেছেন, তিস্তা চুক্তির জট এই সফরেই খুলে যাবে এতটা আশা করা উচিত হবে না। তাই বলে সফরের অর্জন কম হবে এটা ভাবারও কোনও কারণ নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।
দিল্লিতে এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার কথায়, ‘মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগে এটাই শেষবারের মতো তার ভারতে আসা। ফলে ভারত শেখ হাসিনাকে কিছুতেই খালি হাতে ফেরাতে পারবে না। আর পরিস্থিতি যদি সেরকমই হতো, তাহলে কিন্তু এই সফরটাই হতো না।’
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার এবারের সফরে দুদেশের মধ্যে ‘সেপা’ (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট) নামক বাণিজ্য চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজে এই চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন। এখন শুধু এ বিষয়ে ভারতের রাজি হওয়ার অপেক্ষা।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শত শত পণ্যের অবাধ ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যর জন্য এটিকে একটি ‘ল্যান্ডমার্ক’ বা যুগান্তকারী সমঝোতা বলে গণ্য করা হচ্ছে।
এছাড়া শেখ হাসিনার সফরের ঠিক আগেই একযুগেরও বেশি সময় পর দিল্লিতে বসছে দুদেশের জয়েন্ট রিভার্স কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক। দুই দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন নদীর জল ভাগাভাগি বা পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জেআরসি যে বিষয়গুলোতে একমত হবে, প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময় সেটাই সমঝোতার আকারে পূর্ণতা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মমতা কি দিল্লিতে আসবেন?
শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি রাজধানীতে এসে তার সঙ্গে দেখা করবেন কিনা, তা নিয়েও এই মুহূর্তে জল্পনা তুঙ্গে।
শেখ হাসিনা নিজে যে চাইছেন দিল্লিতে তার সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির দেখা হোক, তা অবশ্য পরিষ্কার। গত মাসেই তিনি সরাসরি মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছেন, আমি দিল্লিতে আসছি– আপনিও সেখানে আসুন।
এই প্রস্তাবে প্রচ্ছন্ন সায় ছিল দিল্লিরও। শেখ হাসিনা এই ‘আমন্ত্রণ’ জানানোর পর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও পশ্চিমবঙ্গকে বার্তা পাঠানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় দিল্লিতে আসেন তা খুবই ইতিবাচক একটা সংকেত দেবে।
তিস্তার মতো যেসব অমীমাংসিত বিষয় মমতা ব্যানার্জির বাধায় আটকে আছে বলে ধারণা করা হয়, সেগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে সরাসরি ও খোলামেলা কথাবার্তা হোক, এটা আসলে দিল্লিও চাইছে।
মমতা ব্যানার্জি হয়তো দিল্লিতে নিশ্চিতভাবেই আসতেন, কিন্তু ইতোমধ্যে সিবিআই বা ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো রাজ্যে তার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যে লাগাতার অভিযান শুরু করেছে, তাতেই বিষয়টা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পার্থ চ্যাটার্জি বা অনুব্রত মণ্ডলের মতো তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা এখন গ্রেফতার হয়ে জেলে। আর মমতা ব্যানার্জির দল এটাকে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা’ বলেই দাবি করছে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের স্বার্থে মমতা ব্যানার্জি আদৌ সে সময় দিল্লি আসবেন কিনা, সেটাও বিরাট প্রশ্ন।