পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি সারা বিশ্বে একজন ঝানু কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত। তাঁর বক্তব্য এবং কথাবার্তার স্টাইল অন্য আরো দশ পাঁচ জন রাজনীতিক নেতা বা মন্ত্রী থেকে আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বিদেশীদের সাথে বৈঠক করেন তখন গণমাধ্যমকে এলাও করা হয় না। সুতরাং তিনি জানেন কোন বিষয়টি কখন প্রকাশ বা প্রচার করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতির দিকে। এই এগিয়ে যাওয়াটা বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তি মেনে নিতে পারছে না। চলছে আভ্যন্তরীণ এবং আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্র। নিশ্চয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এমন কোন ষড়যন্ত্রের তথ্য এসেছে।
তাঁর প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে হয়তো বা এমন বক্তব্য দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেন,
‘শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে।
শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’
‘আমার দেশে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু উগ্রবাদী আছে। আমার দেশ সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন না, আপনার দেশেও যেমন দুষ্ট লোক আছে, আমাদের দেশেও আছে। কিছুদিন আগে আপনাদের দেশেও এক ভদ্রমহিলা কিছু কথা বলেছিলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথাও বলিনি। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে, আমরা বলিনি। এ ধরনের প্রটেকশন আমরা আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি। সেটা আপনাদের মঙ্গলের জন্য, আমাদের মঙ্গলের জন্য। আমরা যদি একটু বলি, তখন উগ্রবাদীরা আরো সোচ্চার হয়ে আরো বেশি বেশি কথা বলবে। তাতে আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হবে। আমাদের স্হিতিশীলতা বিঘ্ন হবে।’
‘আমরা উভয়ে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডকে কখনো প্রশ্রয় দেব না। এটা যদি আমরা করতে পারি, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের মঙ্গল। শেখ হাসিনা আছেন বলে ভারতের যথেষ্ট মঙ্গল হচ্ছে। বর্ডারে অতিরিক্ত খরচ করতে হয় না। ২৮ লাখ লোক আমাদের দেশ থেকে প্রতি বছর ভারতে বেড়াতে যায়। ভারতের কয়েক লাখ লোক আমাদের দেশে কাজ করে।
এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের সুন্দর অবস্হানের কারণে। সুতরাং আমরা উভয়ে এমনভাবে কাজ করব যাতে কোনো ধরনের উসকানিমূলক পরিস্হিতি সৃষ্টি না হয়। ভারত সরকারকে বলেছি, রাজনৈতিক স্হিতিশীলতা থাকবে যদি আমরা উভয়ে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে তথ্যভিত্তিক এখানে কোন অসঙ্গতি বা দেশ বিরোধী কথা নেই। তবে যে বাক্যটি নিয়ে এতো হৈচৈ সেটির ব্যাখ্যা তার বক্তব্যে রয়েছে।
তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’
‘এই যা যা কি?’ সেটা জ্ঞানপাপীরা বুঝলেও না বুঝার ভান করছেন। এই যা যা হলো: সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা না করা, ভারতে মুসলমানদের মসজিদের নিরাপত্তা বিধান করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বাংলাদেশের সাথে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান করা।
ভারত সরকার এই কাজগুলি করলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কোন ধরণের অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠবে না। তখন সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার সরকারকে টিকে থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের এই বক্তব্য নিয়ে বিএনপি বা অন্যান্য বিরোধীদল রাজনীতি করতেই পারে। অন্যদিকে কিছু সংখ্যক ছদ্মবেশি মিডিয়া আগুনে ঘি ঢালতেই পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এবং কয়েকজন নেতা ড. মোমেনের বক্তব্যকে সমর্থন না করে যে স্টাইলে আস্ফালন করেছেন তা দেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
যারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন অনেকে এদেরকে পঁচাত্তরের পেতাত্মার সাথেও তুলনা করেছেন।
‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে পাকিপ্রেমীরা ষড়যন্ত্র করছে এটা স্পস্ট। তবে কি এরা তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে?এমন প্রশ্ন অনেকের।
ঘাতক খন্দকার মোশতাকও আওয়ামী লীগের বড় নেতা ছিলো। তার মন্ত্রীসভার ২৩ সদস্যের মধ্যে ২১ জনই ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন বাকশালের কেবিনেট সদস্য।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার পরপরই রক্তাক্ত লাশ মাটিতে রেখে এরা মোশতাক মন্ত্রীসভায় শপথ নেয়। এদের পেতাত্মা কী বর্তমান আওয়ামী লীগে সরব হয়ে উঠছে? এ প্রশ্ন দেশের সাধারণ মানুষের।
বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বাঙালিদের ভালবাসতেন বিশ্বাস করতেন। এই বাঙালির জন্য তাঁর জীবনে ৪হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছেন। অথচ এই বাঙালিরাই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে টিকিয়ে রাখতে সেদিন তার মন্ত্রীসভার কোন সদস্য উচ্চ কন্ঠে কথা বলেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন তাঁর নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা থেকে এমন ঐতিহাসিক বক্তব্য উপস্থাপন করে বাঙালিজাতির তন্দ্রা ভাঙ্গিয়েছেন। ধন্যবাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.মোমেন।