#১৫ই আগস্টের ধারাবাহিকতায় ২১শে আগস্টের হত্যাকাণ্ড: কে এম লোকমান হোসেন। #২১ আগস্ট হামলায় তারেক রহমানই ছিল মূল মাস্টারমাইন্ড: আফছার খান সাদেক।
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২, ১১:১৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আগস্ট মাস শোকের মাস। এই মাসের ১৫ আগস্ট তারিখে ১৯৭৫ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বঙ্গমাতা সহ সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২১ শে আগস্টে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের মতোই ২১ শে আগস্টের হামলার নীল নকশা তৈরি করা হয়েছিল। যার মাস্টার মাইন্ড ছিলেন ঐ সময়ের কিছু সামরিক কর্মকর্তা এবং হাওয়া ভবনে বসে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা খুনি তারেক রহমান।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৮০১তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি, ইতালি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি কে এম লোকমান হোসেন, লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, বহির্বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠাতা আফছার খান সাদেক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
কে এম লোকমান হোসেন বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। এই মাসের ১৫ আগস্ট তারিখে ১৯৭৫ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বঙ্গমাতা সহ সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি সাথে সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় যারা নিহত হয়েছেন সকলের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদের যে সারা পৃথিবীতে উদাহরণগুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে এই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। ২১ শে আগস্টের ঘটনার পরবর্তীকালে কিন্তু প্রায় এক বছর পরে সারা বাংলাদেশ ২০০৫ সালে সারা বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩টি জেলায় বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০’র মত বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ উদাহরণ দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী হামলার। তারা জানেন যে এই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে সন্ত্রাসী হামলা করা সম্ভব। ১৯৭৫ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে যখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল, সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে রাজনীতির পাশাপাশি প্রশাসক হিসেবে ও দক্ষ প্রশাসন নীতির মাধ্যমে কিভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের যে উত্থান সেই মুহূর্তে হয়েছিল ঠিক সেই সময়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসররা রাজাকার-আলবদর-আলশামস এবং তাদের সহযোগীরা খুনি জিয়ার নেতৃত্বে খন্দকার মোশতাকগংরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সেই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির জানান দিয়েছিল। ২১ শে আগস্টে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের মতোই ২১ শে আগস্টের হামলার নীল নকশা তৈরি করা হয়েছিল। যার মাস্টার মাইন্ড ছিলেন ঐ সময়ের কিছু সামরিক কর্মকর্তা এবং হাওয়া ভবনে বসে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা খুনি তারেক রহমান।
আফছার খান সাদেক বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস ও ষড়যন্ত্রের মাস। আগস্টে বাঙালি জাতির জীবনে বারবার অমানিশা নেমে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাঙলা গড়ার যে প্রত্যয় ছিল সেটাকে নস্যাৎ করার জন্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে রাতের অন্ধকারে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা এখানেই থেমে ছিল না। ২০০৪ সালের আগস্টেও বাঙালির জীবনে নেমে আসে আরেক ভয়াবহ অন্ধকার। সেদিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সেদিন দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রধান অতিথি ছিলেন সেই সময়কার বিরোধী দলের নেতা, আজকের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মিছিল পূর্ব সমাবেশের জন্য একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।বক্তব্য শেষে বিক্ষোভ মিছিলের জন্য ট্রাক থেকে নামতে যাবেন শেখ হাসিনা, ঠিক সেই সময়ে শুরু হয় গ্রেনেড হামলা। একটানা ১৩টি আর্জেস-৮৪ গ্রেনেড ছোঁড়া হয় যার মধ্যে ১২টি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়, মঞ্চে উপস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মানব প্রাচীর তৈরি করে প্রিয় নেত্রীকে রক্ষা করেন। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে ফেরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা আইভী রহমানসহ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ২৪ জন মানুষের তাজা প্রাণ। আহত হন শেখ হাসিনাসহ কয়েকশ নেতাকর্মী। মানুষের চিৎকার, ছোটাছুটি, লাশ আর রক্তের স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের পিচঢালা পথ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে আহত-নিহত মানুষের শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ, রক্ত, ছেঁড়া স্যান্ডেল, পড়ে থাকে দোমড়ানো ব্যানার এবং অবিস্ফোরিত গ্রেনেড। যন্ত্রণাদগ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছিলেন কেউ কেউ। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ঘটনার প্রারম্ভে শেখ হাসিনার নিরাপত্তাকর্মী বাদে আশেপাশে কোন পুলিশ ছিল না, কিন্তু বিস্ফোরণের পরবর্তী ঘটনাস্থল লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ার গ্যাস মারে। কাঁদানে গ্যাসে মানুষজন ছোটাছুটি করলে শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ। গ্রেনেডের আঘাতে পরাস্ত করতে না পেরে ওই দিন শেখ হাসিনার গাড়িতে ঘাতকরা ছুড়েছিল বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি। একেবারে পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। কিন্তু ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত বুলেট থেকে শেখ হাসিনাকে রক্ষায় বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী। মূলতই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল।