প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২, ১:২৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। তৃতীয় মেয়াদের অর্ধেক সময়ের বেশি পার করেছে। আগামী দেড় বছরের কম সময়ের মধ্যে আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আওয়ামী লীগ নানা রকম সঙ্কটের মধ্যে পড়ছে। আর এই সংকটগুলো একদিকে যেমন দলীয় সংকট, অন্যদিকে বিরোধী দলের চাপ পাশাপাশি রয়েছে আন্তর্জাতিক চাপ। আর সংকটগুলোকে মোকাবিলা করেই আওয়ামী লীগকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে তারা মনে করছে যে, আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছে,
১. জনগণের আস্থার সংকট: আওয়ামী লীগ টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে দেশে। জনগণের জীবন মানের উন্নতি হয়েছে। বিদ্যুৎসহ নানা ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের অনেক ছোট ছোট ত্রুটি-বিচ্যুতিও মানুষ অগ্রাহ্য করেছে অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য। কিন্তু সেই অর্থনৈতিক সাফল্যই এখন যেন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্যান্য দেশের মতো চাপে। আর এই চাপে থাকা অর্থনীতি নিয়ে সরকারের একেক মন্ত্রী একেক রকম কথাবার্তা আস্থার সংকট তৈরি করেছে। এই জনআস্থার সংকট থেকে উত্তরণই হলো আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ জনগণ যদি আস্থাশীল না হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয় দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতি, ডলারের বাজার বেসামাল হওয়া, লোডশেডিং ইত্যাদি সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে এবং এর ফলে সাধারণ মানুষ সরকারের উপর আস্থা হারাচ্ছে। কাজেই রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো জন আস্থা সৃষ্টি করা এবং জন আস্থার সংকট কাটিয়ে তোলা।
২. আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংকট: আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন যে, বাইরের সংকটের চেয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংকট এখন গুরুত্বপূর্ণ। দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। তৃণমূলের মধ্যে হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীরা ভালোমতো গাঁটছড়া বেঁধেছেন। নেতাদের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মন্ত্রীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যেকোনো বিষয়ে তারা এমন সব কথাবার্তা বলছেন যে সমস্ত কথাবার্তাগুলো সরকারকে বিব্রত করছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংকট দূর করাটাই হলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, আওয়ামী লীগকে অন্য কেউ পরাজিত করতে পারে না যদি আওয়ামী লীগ নিজেই পরাজিত না হয়। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাহলে পরে কোনো অপশক্তি আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবে না। কাজেই অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলা করাটাই এখন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
৩. আন্তর্জাতিক সংকট: আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক একটি সংকটে পড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিভক্ত বিশ্বে আওয়ামী লীগ কোন পক্ষে যাবে সেটি যেমন একটি আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তেমনি আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় সংকট হলো বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্কের সমন্বয় করা। চীন এবং ভারতের দ্বৈরথের মধ্যে বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে একটা ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করেছিল। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে পারবে কিনা সেটিও একটি বড় বিষয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে থেকে সরকারের উপর নানা রকম চাপ আসছে। এই চাপগুলো মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে সে নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংশয় রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংকটটি নির্বাচনের আগে আরও বড় আকারে সামনে আসতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নেতারাই মনে করছেন।
৪. একাকীত্ব সংকট: আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গনের বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট ১৪ দলের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের এখন ঠিকমতো বনিবনা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নেই মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিরও। সব কিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ একাকিত্বের সংকটে ভুগছে। আওয়ামী লীগ যদি রাজনীতির মাঠে বন্ধুহীন হয় তাহলে পরে আওয়ামী লীগ সংকটে পড়তে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
৫. আমলাদের সংকট: আমলারা গত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগের পক্ষেই কাজ করছেন। কিন্তু আমলাদের মধ্যেই এখন অনেক বেশি অনুপ্রবেশকারী ঢুকে গেছেন। বিএনপি জামায়াতের লোকেরা আমলাতন্ত্র রন্ধে রন্ধে ঢুকে গেছেন এমন কথা শোনা যায়। পাশাপাশি যে সমস্ত আমলারা ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন তারা আওয়ামী লীগের সার্থকতার রক্ষা করবেন সংকটে সেটি নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক সংশয় রয়েছে। আর এই সব সংকটগুলোকে আওয়ামী লীগকে এখন থেকে মোকাবেলা করতে হবে। যেন সংকটগুলো বেড়ে ওঠার আগেই আওয়ামী লীগ তার সমাধান করতে পারে সেটি হলো তাহলে জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সূত্র: বাংলা ইনসাইডার