মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে জাতির পিতার ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় এসব কথা বলেন তিনি।
আগস্ট ট্র্যাজেডির প্রসঙ্গ টেনে বক্তব্য দেন সরকারপ্রধান। ক্ষোভের সুরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেন, মরে গেলে কেউই পাশে থাকে না। তাই ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ অবহেলায় পড়ে থাকলেও কোনো নেতার প্রতিবাদ দেখা যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বর ওই ধানমন্ডি লাশগুলো তো পড়েছিল। কত স্লোগান- বঙ্গবন্ধু তুমি আছো যেখানে আমরা আছি সেখানে। এ ছাড়াও কত স্লোগানই তো ছিল। কোথায় ছিল সে মানুষগুলো, একটি মানুষ ছিল না সাহস করে কথা বলার, একটা মানুষ ছিল না প্রতিবাদ করার। তারা কেন করতে পারেনি, এতবড় সংগঠন, এত সমর্থক, এত লোক কেউ তো একটা কথা বলার সাহস পায়নি। আমার এটা প্রশ্ন, আমাদের নেতারাও তো এখানে আছে। বেঁচে থাকতে সবাই থাকে, মরে গেলে যে কেউ থাকে না তার জীবন্ত প্রমাণ। এ জন্য আমি কিছু আশা করি না।
বাংলাদেশের গরিব মানুষের রিলিফের কাপড় তিনি দিতে পারতেন, সেই রিলিফের কাপড়ের পাড় ছিঁড়ে সেটা দিয়েই তাকে কাফন দেয়া হয়েছিল। ১৬ তারিখ বাকি লাশগুলো বনানীতে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। মুসলমান হিসেবে এতটুকু দাবি থাকে জানাজা পড়ার, সেটাও তো পড়েনি। কাফনের কাপড় সেটাও দেয়নি। ’৭৫-এর ঘাতকরা বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র করার ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো ইসলামের কোনো বিধি তারা মানেনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা কিছু নিয়ে যাননি, শুধু দিয়ে গেছেন। একটা দেশ দিয়ে গেছেন, একটা জাতি দিয়ে গেছেন, পরিচয় দিয়ে গেছেন। আত্মপরিচয় দিয়ে গেছেন। বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন। কিছুই নিয়ে যাননি বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। আমার মা বা ভাই-বোন, তারাও কিছুই নিয়ে যাননি। আমার একটাই কথা, জাতির দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সব সহ্য করে নীলকণ্ঠ হয়ে অপেক্ষা করেছি কবে ক্ষমতায় যেতে পারব, দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। তাহলেই হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, যদি ৯৬ সালে সরকারে আসতে না পারতাম। যদি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করতে না পারতাম এই হত্যার বিচার হতো না। বারবার বাধা এসেছে। এমনকি বিচারের কথা বলতে গিয়ে বাধা পেয়েছি। বিচার করলে নাকি কোনো দিন ক্ষমতায় যেতে পারব না।
নিজেদের মানবাধিকারের ইস্যু টেনে সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি মানবতা লঙ্ঘনকারীদের রক্ষাকর্তা।
সরকারপ্রধান বলেন, তারা খুনিদের লালন-পালন করলো অর্থাৎ যারা মানবতা লঙ্ঘনকারী খুনী, জঙ্গি, সন্ত্রাসী তাদের মানবাধিকার নিয়ে এরা ব্যস্ত। বিএনপি তো এদের মদদদাতা।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে পরিত্রাণ পেতে, সমাজের বিত্তবানদেরও পাশে চান শেখ হাসিনা।
দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে যে কোনো বৈরি পরিস্থিতি সামলে দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।