প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২, ৭:৩৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে দেহ তল্লাশির নামে ফেনীতে আটক করে ২০টি সোনার বার ডাকাতি ও লুণ্ঠনের ঘটনায় গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এক বছর গড়ালেও চার্জশিট দেয়া হয়নি। অপরদিকে এই মামলায় ব্যবসায়ীর ১৫টি সোনার বার উদ্ধার হলেও ৫টি বার উদ্ধার আদৌ হয়নি। এদিকে ফেনীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ সুপারের অভিমত' আগামী এক মাসের মধ্যে ৬ পুলিশসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এঘটনা নিয়ে রীতিমতো সাপ খুঁড়তে কেচোর উপদ্রব সৃষ্টি হয়েছিল তখন। আইনের রক্ষকরাই ভক্ষকের এমন ভূমিকায় যা ছিল নিয়মিত অপ্রত্যাশিত এবং অসম্মান জনক। মামলার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৮ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের হাজারী গলির সোনা ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাশ ২০টি সোনার বার নিয়ে প্রাইভেটকারে ঢাকা যাওয়ার পথে সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর শহরতলী ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাস এলাকায় ডিবি পুলিশ তার গাড়ির গতিরোধ করে। এরপর গোপাল কান্তি দাশকে আটক করে পার্শ্ববর্তী নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তল্লাশির নামে তাকে শারীরিক ভাবে হেনস্তা করে সোনার বারগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনার পরদিন ওই ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। অভিযোগ পেয়ে ফেনী জেলা পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। এ ঘটনায় ডিবির পরিদর্শক সহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্বে ওই ব্যবসায়ী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ১০ আগস্ট রাতে ফেনী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক মোতাহার হোসেন, নুরুল হক, মিজানুর রহমান,সহকারী উপ-পরিদর্শক অভিজিৎ বড়ুয়া ও মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ। একই সঙ্গে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তাদের হেফাজত থেকে ১৫টি সোনার বার উদ্ধার করে পুলিশ। কয়েক দফা রিমান্ড শেষে ওই ছয় পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।
এ ঘটনায় মামলার বাদী ব্যবসায়ী গোপাল দাশের সাবেক ব্যবসায়ী অংশীদার সমিদুল আলম ভুট্টো গত বছরের ১৫ আগস্ট ডাকাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকেও মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ১৮ আগস্ট ডিবি পুলিশের গাড়ি চালক মঈনুল হোসেন ও আমজাদ হোসেন তুহিন এবং ২৩ আগস্ট মামলার বাদীর গাড়িচালক শওকত আলী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ২২ সেপ্টেম্বর ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত এসআই ফিরোজ আলমকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে হৃদ্রোগে মারা যান তিনি।
গ্রেফতারকৃত ৬ পুলিশ সদস্য সহ ৭ জনের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন ৪ পুলিশ সদস্য। এস আই মোতাহের হোসেন ও নুরুল হক এবং বাদীর ব্যবসায়িক অংশীদার সমিদুল আলম ভুট্টো উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের ফেনীর পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হজে যাওয়ায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা যায়নি, আগামী এক মাসের মধ্যেই চার্জশিট দাখিল করা হবে।