চাঁপাইনবাবগঞ্জ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি পরিচালিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ২ গ্রুপ মরিয়া হয়ে উঠেছে। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি মুহাঃ জিয়াউর রহমান ও সাধারন সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদ অন্য গ্রপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রুহুল আমিন জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ আব্দুল হাকিম।
চলছে দখল ও পাল্টা দখল এছাড়া দুই পক্ষই নিজেদের বৈধ্যতা দাবি করে আইনি লড়াই অব্যাহত রেখেছেন পাশাপাশি পেশি শক্তির ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে। এঘটনায় স্থানীয় জনগন সংকিত প্রিয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে।
বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহান শাহ আকবর অভিযোগ করেন গত ২ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল সদলবলে দখলে নেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। এ সময় তার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাঃ জিয়াউর রহমান সহ সহযোগী সংগঠনের প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী ছিলেন। সেদিন তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে জোরপূর্বক দখল করে নেন। এক মাস ধরে জোরপূর্বক দখল রাখা হাসপাতালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন ও খরচ করেছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান জানান, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে আব্দুল হাকিম নেতৃত্বাধীন কমিটি চক্ষু হাসপাতাল দখল করে কার্যক্রম অব্যহত রেখেছেন। গত রবিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সম্মেলন কক্ষে কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪৭ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হাকিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ রুহুল আমিন সহ পরিচালনা পার্ষদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সভায় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা সহ মামলা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আইনজীবী সমিতির অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম মহামান্য হাইকোর্টে আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক চক্ষু হাসপাতালের বিষয়ে স্থিতিবস্থা জারি করেছেন।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল সঠিক পথে থেকে জনগনের সেবা করে যাচ্ছিলো। সরকারী দলের মুল নেতৃবৃন্দ এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে সাপ ও বেজী লড়াই করতে থাকায় আমরা সংকিত? তার ধারনা বড় ধরনের মারামারি অপেক্ষা করছে। তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার নতুন চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল ওদুদ বলেন, আদালতের নির্দেশ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল সমিতি কার্যনির্বাহী কমিটির অনুরোধে তিনি দ্বায়িত্ব গ্রহন করেছেন। তিনি বলেন আগের কমিটি এ প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপ করায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত শুরু করেছেন। এঘটনায় দ্রুত মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে বর্তমান দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হাকিম অভিযোগ করে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি বলেন তার নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল সঠিক পথেই রয়েছে। তিনি আরও বলেন যারা ১ মাসে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ লক্ষ টাকা তছরুপ করেছেন তাদেরকে ঢুকতে দেওয়া হবে না, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১টি অত্যাধনিক ৭ তলা ভবন নির্মান করে দেন এবং ২০১৫ সালের ১৬ মে তিনি এর উদ্ভোধন করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান মোঃ খাদেমুল ইসলাম ফিকশন প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির ২০১৭ সালের ৩১ শে ডিশেম্বর পর্যন্ত দ্বায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে অদ্যবধী পর্যন্ত দ্বায়িত্ব পালন করছেন সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল হাকিম।