বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
মা'র সঙ্গে ১১ আগস্টই শেখ হাসিনার শেষকথা
সোহেল সানি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই। ওদিন ব্রাসেলসের উদ্দেশ্যে ঢাকাত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে দুই শিশুসন্তান জয়-পুতুল ও ছোটবোন শেখ রেহানা। এ সফর ছিল একেবারে অনিচ্ছাকৃত। ৩০ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট। ঢাকার সঙ্গে একবারই যোগাযোগ হয় শেখ হাসিনার। সেটা ১১ আগস্ট টেলিফোনে, মায়ের সঙ্গে। মমতাময়ী মা সেদিন বড় মেয়েকে বলেছিলেন এক নিদারুণ কষ্টের কথা। "তোর আব্বা আমাকে শেখ শহীদের বিয়েতে যেতে দেননি। তাঁর বোঝা উচিত ছিল শহীদ আমার একমাত্র বোনের ছেলে।" বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কান্নাভেজা কন্ঠে এ কথাগুলো উচ্চারিত হয়েছিল বড়মেয়ে শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে। মেয়েকে বলেন, 'জয়-পুতুল ছাড়া যে আমার সময় কাটেনা, দ্রুত দেশে ফিরে আয়।' কিন্তু ফেরা আর হয়ে ওঠেনা। ৩ দিনের ব্যবধানে বয়ে যায় বাংলাদেশের ওপর এক রোজকেয়ামত। বাবা-মা-ভাই-ভাবী কেউ বেঁচে নেই। হত্যা করা হয়েছে সবাইকে। স্ত্রী হিসাবে স্বামীর মনরক্ষার জন্যই শেখ হাসিনার পশ্চিম জার্মানিতে যাওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম উপাচার্য ডঃ আব্দুল মতিন চৌধুরী শেখ হাসিনার বিদেশ যেতে মানা করেছিলেন। গেলেও তা ১৫ আগস্টের পর। 

শেখ হাসিনা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম এ ক্লাশের শিক্ষার্থী। ছুটি মঞ্জুর করাতে মুখোমুখি হলে উপাচার্য এ আদেশ দিয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে 'আচার্য' হিসাবে প্রথম বরণ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মেয়ে শুধু নও, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হয়ে ঐতিহাসিক বরণ-উৎসব রেখে তুমি বিদেশ যেতে পারো না। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, স্যার, আমি ১৫ আগস্ট পর্যন্ত থেকে যেতে চেষ্টা করবো। জাতির পিতাকে বরণ করার স্বপ্নে উন্মুখ হয়ে বিশেষ মহিমায় সজ্জিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিবের ছাত্রত্ব কেড়ে নিয়েছিল-১৯৪৯ সালে। সেদিন শেখ হাসিনা দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে বাসায় ফেরেন। 

স্যারের কথাগুলো মা-কে বলেন। মা বলেন, 'শিক্ষকের আদেশ শিরোধার্য।' মানে যাবার সিদ্ধান্ত বাতিল। কিন্তু ওদিনই সন্ধ্যায় টেলিফোন স্বামী ড. ওয়াজেদের। শেখ হাসিনা উপাচার্যের আপত্তির কথা জানান তাঁকে। শিশুপুত্র জয় তখন প্রচন্ড জ্বরে ভুগছিল। সেটাও বললেন। কিন্তু কাজ হলো না। বরং রাগস্বরে বাজার-সদায় করাসহ ছুটি নেয়ার কথা বললেন। শেখ হাসিনা স্ত্রী হিসাবে স্বামীর মুখের ওপর আর না করতে পারলেন না। ৩০ জুলাই-১৯৭৫ পুত্রকন্যা ও ছোটবোনকে নিয়ে আকাশ পথে উড়ে গেলেন পশ্চিম জার্মানিতে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণমূলক এক প্রবন্ধে লিখেছেন, এমন রোজকেয়ামতের দিন, কোনদিন যেন কারো জীবনে কখনো না আসে। 

যেমনটি আমার জীবনে এসেছে। মাঝেমধ্যে মনে উদয় হয় সেদিন যদি ভিসি স্যারের কথা অমান্য না করে ঢাকায় থেকে যেতেন, তাহলে আমার জন্য সেটাই ভালো হতো। বেঁচে থাকা এই জীবনটাতে সে কি যন্ত্রণা তা প্রকাশ করার ভাষা নেই। শেখ হাসিনা লিখেছেন, সব হারিয়ে এমন বেঁচে থাকতে তো আমি চাইনি। প্রতিদিন পলে পলে দ্বগ্ধ হওয়া, সব হারানোর প্রচন্ড দাবদাহ সমস্ত অন্তরজুড়ে যে তুষের আগুনের ধিকিধিকি জ্বলনীর জীবন, এ জীবন তো আমি চাইনি। এর চেয়ে মা, বাবা,ভাই ও ভাবীদের সঙ্গে আমিও চলে যেতে পারতাম, তাহলে প্রতিদিনের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে তো বেঁচে যেতাম। আমার জন্য সেটাই ভালো হতো। আমি সেদিন কেন যে স্যারের নিষেধ শুনলাম না, আমি সেই কেনোর জবাব খুঁজে ফিরি। আমার দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়, আমায় কুঁরেকুঁরে খায়। দলপাকানো বেদনায় আমার কন্ঠ রুদ্ধ হয়। স্মৃতির নিদারুণ কষাঘাতে জর্জরিত হই। শেখ হাসিনা লিখেছেন, আমার সেই স্যার ডঃ আব্দুল মতিন চৌধুরীও নিস্তার পাননি। ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করে মিথ্যা মামলায় কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফেরার পর একবার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়। সেটা ২৩ জুন সন্ধ্যায় শিক্ষাবিদ মাজাহারুল ইসলামের বাসায়। আমাকে এক সংবর্ধনা দেন তিনি। কিন্তু নিয়তি কি নিষ্ঠুর! সেই প্রিয় স্যার পরের দিন পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নেন। ডায়েরীর পাতায় আমার জীবনের সব চাইতে করুণ ও বেদনাঘণ হাহাকার পরিপূর্ণ একটি বিশেষ স্মৃতি রয়েছে মহান ওই মানুষটিকে নিয়ে। ভীষণ ব্যস্ত দিনেও যখন আমি কদাচিৎ একা বসে ভাবি তখন ফেলে আসা জীবনের স্বপ্নমধুর কিংবা বিষাদ-বেদনার স্মৃতির অর্গল তখনই উন্মুক্ত হয়। আমি বেদনায় বিমুঢ় হয়ে যাই। 

শেখ হাসিনা লিখেছেন, সমব্যথায় অংশীদার হয়ে আমার ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে আছে। আমার মতো প্রচন্ড শোকের দাব-দাহকে বুকের গভীরে ছাইচাপা দিয়ে। যা নিরন্তর কেবল আমাদের অন্তরকে ক্ষত বিক্ষত করে। স্মৃতির দংশন একমাত্র আমি ছাড়া আর কাউকে কখনোই সহ্য করতে হয়নি। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার প্রার্থনা, আমার মতো যেন কাউকে কখনোই এমন ভয়ানক স্মৃতিচারণ করতে না হয়। মানুষের কিছু কিছু স্মৃতি থাকে যা কখনো অর্ন্তহিত হয় না। 

এমনকি ম্লান বা হাল্কাও হয় না। আমি যেন প্রত্যক্ষ করি, স্যারের সঙ্গে সেই কথোপকথনের দৃশ্য। তখনই প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভব করি আমার সমস্ত বুক জুড়ে। অন্তর কেবল প্রচন্ড শূণ্যতায় আর্তনাদ করে। বুকের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে একাকার হয়ে যায়। চোখের দৃষ্টি অজান্তেই ঝাঁপসা হয়। আমি আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।

 কবিগুরুর সেই অমর বানীই যেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য চির সত্যঃ "এমন একান্ত করে চাওয়া / এ-ও সত্য /এমন একান্ত ছেড়ে যাওয়া / সেই সেই মতো /এ দু'য়ের মাঝে/ তবু কোনখানে আছে কোন মিল/ নহিলে নিখিল /এতবড় নিদারুণ প্রবঞ্চনা / হাসিমুখে এতকাল বহিতে পারিত না / সব তার আলো / কেটে কাটা পুষ্পসম /এতদিনে হয়ে যেত কালো।" 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]