ঘরে বসে আন্দোলনের নামে ‘বাঘের হুংকার’ দিলেও রাজপথে বিড়ালের ভূমিকায় বিএনপি। বারবার তাদের নেতৃবৃন্দ ঘরোয়া সভা-সমাবেশ আর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলনের হুমকি দিলেও আদতে তার কোন দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। উপরন্তু এমন ফাঁকা আওয়াজের কারণে মানুষের হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে। এমনকি গণ অধিকার পরিষদের মতো নবীন রাজনৈতিক দলের ছায়াতলেও আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এ নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যমতে, পূর্বে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিলেও বর্তমানে আন্দোলনের কারণ জানা না থাকায়, হাওয়ার উপরে কঠিন আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে বিএনপি। যদিও এ ডাক শুধুমাত্র হুংকারেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ কারণে আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। এমনকি দলীয়ভাবে পূর্ণরূপে ব্যর্থ হওয়ায় লজ্জা-হতাশায় সরকারের অনুকম্পা নিয়েই দুই বছর আগে কারাগার থেকে বের হন খালেদা। কিন্তু এতকিছুর পরও টনক নড়েনি বিএনপির। বরং সরকারের ধারাবাহিক সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ‘গুজব সেল’র মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারিতায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দলটি। বসে নেই তাদের পেইড এজেন্টরাও। তারা বিভিন্ন মহলে ক্রমাগত নালিশ ও ভিত্তিহীন কথা বলে বেড়াচ্ছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে মাঝে মাঝে আন্দোলনের ডাক দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি মাঠের রাজনীতিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ ও মুখ থুবড়ে পড়া দল বিএনপি। তাদের নীতিনির্ধারক মহলেও দেখা গেছে অনৈক্যের সুর। এ কারণে ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু হয় না তাদের ‘ঈদের পরে আন্দোলন’। বর্তমানে দলটির নেতৃবৃন্দ পূর্বের ন্যায় আন্দোলনের হুঙ্কার দিতেও ভয় পায়।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের আসল চরিত্র ‘থলের বিড়াল’ হয়ে বেরিয়ে আসায় জনসম্পৃক্ততা নেই বিএনপির। এজন্যই দলের কোন আন্দোলন গড়ে উঠছে না। আলোচনায় থাকতে দলটির নেতৃবৃন্দ এখন হুংকারকেই অদ্বিতীয় সম্বল বলে মনে করছেন এবং তার নিরলস চর্চাও অব্যাহত রেখেছেন। এ থেকে সহজেই অনুমেয়, মুখে আন্দোলনের ফেনা তুললেও সাংগঠনিকভাবে আর কখনই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বিএনপি। কারণ আওয়াজ নির্ভর রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ কখনও ভালো হয় না।
এদিকে, জোট বাঁধার জন্য বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। বৈঠকে নিজেদের মধ্যে একাত্মতা পোষণ করলেও সংলাপ শেষে দেখা দিয়েছে বৈরিতা।
গত ২ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে গণসংহতি আন্দোলনের ‘ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রস্তাব’ শিরোনামের মতবিনিময় সভায় কথা বলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, ‘সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে যে ঐক্য গড়তে তুলতে চাই, সেই ঐক্যে নির্যাতিত দল হিসেবে বিএনপিকে সঙ্গে রাখতে পারি।’
একথা বলেই থেমে থাকেননি নুর। তিনি আর বলেন, বিএনপিকে আমরা সঙ্গে রাখবো ঠিকই কিন্তু তাদের হাতে কখনো ক্ষমতা ছাড়বো না। কেননা ওদের চরিত্রের ঠিক নেই।’
নুর আরও বলেন, ‘বিএনপিকে আমরা ক্ষমতায় থাকতেও দেখেছি। এই দল ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কিছুই হবে না। বিএনপি ৯৬ সালে এককভাবে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। ওদের মধ্যে স্বৈরতন্ত্রের ভূত আছে।’
এসব কথা বলার পর নুর ও রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি, খুশি হয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে সবগুলো বিষয়ে একইমত ধারণ করেন। আমরা একমত হয়েছি আমরা যুগপৎভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।