#আগস্ট মাস বাঙালি জাতির কলঙ্কের মাস: অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া। #বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা: অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস। #বঙ্গবন্ধু বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে আছে: এ্যাড. আবদুল কুদ্দুস বাদল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। একটি ইতিহাস। ‘আগস্ট’কে আমরা শোকের মাস বলি। এ মাসেই আমরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছি। বাঙালি জাতির সবচেয়ে কলঙ্কতম অধ্যায় হচ্ছে ১৫ আগস্ট। যতদিন বাঙালি জাতি নামক একটি রাষ্ট্র থাকবে ততদিন এই কলঙ্কজনক ১৫ আগস্ট থাকবে আজীবন।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৯২তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (নীলদল) সাবেক সভাপতি, লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, সংগীত শিল্পী, সেক্টর কমান্ডরস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরের কেন্দ্রীয় নারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস, ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এ্যাড. আবদুল কুদ্দুস বাদল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। একটি ইতিহাস। ‘আগস্ট’কে আমরা শোকের মাস বলি। এ মাসেই আমরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছি। এ মাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকেও হারিয়েছি। একই সঙ্গে আরও হারিয়েছি বঙ্গবন্ধুর তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূ এবং তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ স্বজনদেরও। আগস্ট বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছার জন্মমাসও বটে। বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব তিনি শুধু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন না, তিনি বাঙালি জাতিকে অনন্য সাধারণ ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে হাজার বছরের বাঙালির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তো বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শ, চেতনা ও দর্শনের নাম একটি ইতিহাস। তিনি শুধু বাঙালির নয়, তিনি বিশ্ববরেণ্য, বিশ্বনন্দিত ‘বিশ্ববন্ধু’। বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন আমাদের স্বাধীনতা ও নিজস্ব ভূখণ্ড। বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ একইসূত্রে গ্রথিত- একটি অন্যটির পরিপূরক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি দেশকে বিপরীত স্রোতে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। পাকিস্তানি ভাবধারা পুনর্গঠিত করার প্রয়াসে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পুরানো মূল্যবোধকে পুনরুজ্জীবিত করার অপচেষ্টা চালায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পুরো জাতিকে উজ্জীবিত করত। জাতি হিসেবে আমরা ভাগ্যবান যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মহান নেতাকে পেয়েছিলাম। জাতির জনকও বিরল সেই ভাগ্যবানদের একজন, যিনি দেশের জন্য নিজের প্রাণকে বিলিয়ে দিতে পেরেছেন। ক্ষণজন্মা মানুষের পক্ষেই এ ধরনের আত্মদান সম্ভব। স্বভাবতই বঙ্গবন্ধুর রক্ত অন্য যে কোনো রক্তের চেয়ে আলাদা। বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ রক্ত বাঙালি জাতির মুক্তির লড়াইয়ে চিরদিন প্রেরণা জোগাবে।
অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, আগস্ট মাস আমাদের জাতিয় শোকের মাস। আগস্ট মাসের ১৫ আগস্টের দিনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের হৃদয় ছাড়া কষ্ট কান্না, বাঙালি জাতিকে সবসময় পীড়া দেয়। আগস্ট মাসের প্রতিটি মুহূর্ত নিমজ্জিত শোকে। আজকের এই দিনে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদেরকে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিজের জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে গঠন করেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তার সেই স্বাধীন বাংলাদেশের আহবানে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং ৩০ লাখ শহীদ ও ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মহান স্বাধীনতা। কিন্তু সেই স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় আক্রমণ করে। এ সময় বঙ্গবন্ধু ছাড়াও হত্যা করা হয় তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে। এছাড়া বেইলি রোডে সরকারি বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত ও আবদুল নঈম খান রিন্টুকে। আরেক বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিকে। সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া। সেদিন অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
এ্যাড. আবদুল কুদ্দুস বাদল বলেন, বাঙালি জাতির সবচেয়ে কলঙ্কতম অধ্যায় হচ্ছে ১৫ আগস্ট। যতদিন বাঙালি জাতি নামক একটি রাষ্ট্র থাকবে ততদিন এই কলঙ্কজনক ১৫ আগস্ট থাকবে আজীবন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাঙালিরা যারা নিজের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে তাদের মধ্যে একটা রক্তক্ষরণ বিরাজমান রয়েছে। আগস্ট মাস আসলে সেটা আরো বেশি বহমান হয়ে যায় আমাদের হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুকে হারানোর যে অভাব সেটা আমরা বুঝতে পারি এই মাসে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু, প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের হাতে বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, বাঙালির নিরন্তন প্রেরণার চিরন্তন উৎস, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এ সময় বঙ্গবন্ধু ছাড়াও হত্যা করা হয় তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে এ বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের কয়েকজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। একইভাবে বাঙালির আত্মঘাতী চরিত্রের অপবাদেরও অবসান ঘটেছে।