২০১৬সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচ আর এম বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় মাত্র ১১ শতক জমির উপর সানাফ এগ্রো নামে ছোট পরিসরে একটি নার্সারি চালু করেন ইব্রাহিম খলিল। প্রথমে মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুজিতে নার্সারিতে সংগ্রহ করেন দেশি বিদেশি ফুল, ফল ও ঔষধী গাছের চারা ও বিভিন্ন জাতের বীজ।
যৈবনের আনন্দ উল্লাস বিসর্জন দিয়ে আটঘাটঁ বেধে নার্সারি গড়ার কাজে মনোযোগী হয়ে পড়েন উচ্চ শিক্ষিত যুবক ইব্রাহিম খলিল। প্রথম দু’বছরেই চারা বিক্রি করে প্রত্যাশার অধিক মুনাফা অর্জন করেন । এর পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাকে ধারাবাহিক সফলতা অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ১১শতক জমি থেকে বর্তমানে তিন একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহের বহুল আলোচিত ও সুনাম সুবেদিত সানাফ এগ্রো।
ঈর্ষণীয় সাফল্যর বদৌলতে শুধু নার্সারী ব্যবসাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি তিনি। সাথে আরও যুক্ত করেছেন সানাফ ফর্টিকালচার, সানাফ এগ্রো এগ ইনকিউবেটর, সানাফ এগ্রো চিক্স হেচারী, সানাফ এগ্রো ডেইরি ফার্ম, সানাফ এগ্রো মিট প্রোডাকশন হাউজ। সবকটি ব্যবসাতেই অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।
মাত্র ৬বছরে কোটি টাকার অধিক লাভবান হয়েছেন সানাফ এগ্রোর উদ্যোক্তা ইব্রাহিম খলিল। অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি দেশ বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে সম্মাননা সসদ ও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বহুল প্রচারিত জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাসহ কয়েকটি ইলেকট্রিক মিডিয়াতেও সানাফ এগ্রোর ঈর্ষণীয় সফলতার গল্প প্রকাশিত হয়েছে বেশকয়েকবার।
২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডস এম্বাসির সহযোগিতায় ইঊঞঞঊজ ঝঞঙজওঊঝ এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ডা শিরিন শারমিনসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের কাছ থেকে সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সানাফ এগ্রো হেচারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ইব্রাহিম খলিল। ওই অনুষ্ঠানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুতাবাসের চীফ অব মিশন 'Joel Reifman', নেদারল্যান্ডের বাংলাদেশ কান্টি কোঅর্ডিনেটর 'Wim Heijser' সহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
গত সোমবার সকালে সানাফ এগ্রোতে গিয়ে দেখা যায় দেশ বিদেশি ফল, ফুল ও ওষুধী গাছের চারার বিশাল সমাহার। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিপাটি পরিবেশ দীর্ঘ সময় সানাফ এগ্রোর সবকটি প্রজেক্ট ঘুরে মন ছুয়ে যায়।
পুরুষদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও চারা উৎপাদন, পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন । শুধু নারী শ্রমিকের সংক্ষাই ২০জনের অধিক। বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের সবার বাড়ি আশ পাশের এলাতেই। সাথি আক্তার ও মর্জিনা খাতুনসহ বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান তারা ৫/৬ বছর ধরে সানাফ এগ্রোতে কাজ করে আসছেন।
সানাফ এগ্রোর প্রকল্প ব্যবস্থাপক বর্ন চক্রবতী এ প্রতিবেধককে জানান সানাফ এগ্রোতে প্রায় আড়াই শতাধিক দেশ বিদেশি বিভিন জাতের ফল, ফুল ও ঔষধী গাছের চারা রয়েছে। এ সব চারার মধ্য দেশি বিদেশি উন্নত জাতের কাঠাল, বারো মাসি কাঠাল, হাজারী কাঠাল, দেশী ও বিদেশী ৩০ জাতের আম, কালো জাম,সাদা জাম, দেশি বিদেশী মাল্টা, দেশ বিদেশী টমেটো, বারা মাসি টমেটো, উন্নত জাতের দেশি বিদেশী বেগুন চারা। নারিকেল, শুপারি, কামরাঙ্গা, মিষ্টি তেতুল, চালতা, লিচু, বেল,পাসিমন,জামাইকনচেরি, মিরাক্কেল চেরি,এলাচ, রাম্বুটান, রুটি ফল, করসোল,লটকন,লোকাট, অ্যাভোকেটো, মিসরী আতাফল,চেরি, ডুরিয়ানসহ দেশ বিদেশী উন্নত জাতের ফুল ফল ও ঔষধী গাছের চারা স্বল্প মুল্যে বিক্রয় করা হয়। ময়মনসিংহ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহকরা এসে চারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। আবার মোবাইলে ও অনলাইনে অডার করা মালগুলো নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে পৌছে দিচ্ছি গ্রাহকদের ঠিকানায়। আজ আমাদের প্রতিষ্ঠানে ২০ লক্ষাধিক দেশি বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল, ফুল ও ওষুধী গাছর চারাসহ ক্যাকটাস তরুলতা জাতীয় চারা রয়েছে। গত বছর প্রায় ১২ লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়েছে। আশা করছি চলতি বছরে ১৫ লাখ টাকার চারা বিক্রি হবে।
বর্ন চক্রবর্তী আরও জানান নার্সারি ছাড়াও সানাফ এগ্রোর বেশ কয়েকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে । সানাফ এগ্রো হ্যাচারীত একদিন বয়েসী হাঁস ও মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন ও বিক্রি করা হয়। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী স্বয়ংক্রিয় সম্পুর্ণ অটোমেটিক ফ্যামিলি ও বাণিজ্যিক সহ বিভিন্ন সাইজের ইনকিউবটর বিকয়ে করা হয়। এছাড়াও আমাদের গরুর খামার থেকে প্রতিদিন ১২০/১৫০ কেজি দুধ বিক্রয় করা হয়।
সানাফ এগ্রোর উদ্যোক্তা ইব্রাহিম খলিল জানান ইব্রাহিম খলিল সাংবাদিক আব্দুল মান্নান পল্টনকে জানান, সানাফ এগ্রো ফার্মের সকল কার্যক্রম পরিচালনা ও পরিকল্পনায় আমাকে সহায়তা করেন আনন্দ মোহন সরকারি কলেজে রসায়ন বিষয়ে অর্নাস পড়ুয়া আমার স্ত্রী সাদিয়া শারমিন সেতু। সত্যি কথা বলতে আমার স্ত্রীর যথাযথ পরিকল্পনা উৎসাহ উদ্দীপনার কারনে আজ আজ আমি স্বাবলম্বী। ২০১৬সালে জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচ আর এম বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে নার্সারি চালু করি। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে একের পর এক অর্জিত সফলতার বদৌলতে মাত্র ৬ বছরে ৩০ হাজার টাকা পুজি থেকে এখন আমি অন্তত দেড় কোটি টাকার মালিক হতে পেরেছি। নার্সারিসহ সানাফ এগ্রোর সহযোগী সব প্রতিষ্ঠানের সব খরচ বাদ দিয়ে চলতি বছরেও ১৩/১৪ লাখ টাকা মুনাফা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ইব্রাহিম খলিল। চলতি বছরের শেষের দিকে নগরির খাগডহর এলাকায় ৮ একর জমির উপর আরও একটি এগ্রো ফার্ম করবেন বলে জানান ইব্রাহিম খলিল।