বাংলাদেশের একটি বড় মেঘা প্রকল্প রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানীকৃত কয়লা বহন করে প্রথম চালান নিয়ে মোংলা বন্দরে নঙ্গর করেছে দেশী পাতাকাবাহী বানিজ্যিক জাহাজ এমভি আকিজ হেরিটেজ।
শুক্রবার দুপুরে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া চ্যানেলের ১১ নম্বর এ্যাংকারেজ বয়ায় নোঙ্গর করেছে। শুক্রবার রাতের পালা থেকে এ পন্য খালাস করবে বলে জানায় পন্য খালাস ও শ্রমিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হামের এন্ড সন্স কোম্পানী লিঃ এর প্রতিনিধি।
বাণিজ্যিক জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট টগি শিপিং এন্ড লজিষ্টিক এর ম্যানেজার খন্দকার রিয়াজুল হক জানান, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানী করা কয়লার প্রথম চালানটি শুক্রবার মোংলা বন্দরে নঙ্গর করেছে। বন্দরের হরবারিয়া এলাকা নঙ্গর করা জাহাজটি থেকে কয়লা খালাস করে কার্গো ও লাইটার যোগে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌছে দেয়া হবে। এই কয়লা দিয়েই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উৎপাপদন শুরু করবে প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টনের কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, গত ২০ জুলাই ইন্দোনেশিয়ার ‘তানজুম ক্যাম্ফা’ বন্দর থেকে ৫৪ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে ‘আকিজ হেরিটেজ’ জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দোশ্যে ছেড়ে আসে। গত ৩১ জুলাই প্রথমে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে নঙ্গর করে। সেখানে ১৮ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন কয়লা খালাস করে। পরে বাকি ৩৬ হাজার মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে জাহাজটি ছেড়ে আসে। শুক্রবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যার পালা থেকে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া-১১ নম্বর বয়ায় জাহাজটি অবস্থানে থেকে পন্য খালাস শুরু করবে বলেও জানান শিপিং এজেন্ট’র প্রতিনিধি খন্দকার রিয়াজ।
এদিকে, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আমদানিকৃত জ্বালানি কয়লা (৪ আগস্ট) বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটি থেকে খালাস শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আনোয়ারুল আজীম জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে ১৮ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন খালাস হওয়া কয়লা ছোট লাইটারেজে করে মোংলার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এখানে আনা হয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে এই কয়লা খালাস করা হয়। এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি কয়লা মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস হবে বলেও জানান তিনি।
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ঘাটে তিনটি লাইটারেজ যোগে আসা কয়লা আনুষ্ঠানিক ভাবে খালাস শুরু হয় ৪ আগষ্ট বৃহস্পতিবার। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাঃ) লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরামউল্লাহ, রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কবির হোসেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) সুভাষ চন্দ্র পান্ডে, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আনোয়ারুল আজীমসহ স্থানীয় আরো অনেক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন জানান, বিশ্ব অর্থনৈকিত টালমাটাল পরিস্থিতিতে মোংলা বন্দরে জাহাজের আগমন স্বাভাবিক রয়েছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় ঢাকা সহ দেশের রাজধানী সহ বিভিন্ন অ লের আমদানী-রপ্তানীকারক ব্যাবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যাবহার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার সুফলে এখন নতুন নতুন আমদানী-রপ্তানীকৃত পণ্যের জাহাজ ভিড়ছে মোংলা বন্দরে। আর দেশের সরকারের গ্রহন করা বড় মেঘা প্রকল্পগুলোর আমদানীকৃত পন্য মোংলা বন্দর দিয়ে দিয়ে খালাস হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার মোংলা বন্দরে আসছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই “এমভি আকিজ হেরিটেজ” নামক একটি জাহাজ।
তিনি আরো জানান, অন্যান্য প্রকল্পের পন্য খালাস সহ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা খালাস শুরু হওয়ায় এবং এ আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান মোংলা বন্দর ব্যবহারের ফলে এই বন্দরের আয় অনেক গুণ বেড়ে যাবে। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎয়ের চাহিদা মেটাতে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে রামপাল উপজেলার সাপমারী-কাটাখালী ও কৈর্গদাশকাঠী এলাকায় ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির উপর কয়লা ভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। সেই লক্ষ্যে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বন্ধু প্রতিম দেশ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। এরপর ২০১২ সালে ২৯ জানুয়ারী দুই দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানী বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও (এনপিপিসি) যৌথ কোম্পানী গঠন করে।
২০১৩ সালে ১ আগস্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়। ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রয়ারি দরপত্র আহবান করা হয়। ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সাক্ষর হয়। ইকুইটি বিনিয়োগ সমানভাগে ধরে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গঠন করা হয় বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানী প্রাইভেট লিমিটেড নামে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্ণ দুটি ইউনিট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষে হয়েছে। আগামী অক্টোবরে এ বিদ্যুৎ প্লান্টের কাজ উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে এবং জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করারও পরিকল্পনা রয়েছে দুই দেশের সরকারে। আর দ্বিতীয় ইউনিটের প্লানটি ২০২৩ সালে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।