শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বাড়ি-প্লটসহ বিপুল সম্পদের মালিক ঢাকার যে ওসি!
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২, ৩:৫০ পিএম আপডেট: ০৫.০৮.২০২২ ৪:০৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

ঢাকার বছিলা গার্ডেন সিটিতে অবস্থিত এই বাড়ির মালিক ওসি মনিরুল ইসলাম।

ঢাকার বছিলা গার্ডেন সিটিতে অবস্থিত এই বাড়ির মালিক ওসি মনিরুল ইসলাম।

বাড়ি, প্লটসহ বিপুল সম্পদের মালিক ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম। রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

সরকারি একটি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দেশের প্রথম সারির এক জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানে ওসি মনিরুলের এসব অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ সূত্র বলছে, যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাঁর সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।

পুলিশের একজন পরিদর্শক হয়ে ওসি মনিরুল কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে পুলিশ বিভাগে আলোচনা চলছে। বর্তমানে তিনি নবম গ্রেডে ২২ হাজার টাকা স্কেলে সাকল্যে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেতন পান। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি এই সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।

জানা যায়, ১৯৯২ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন মনিরুল ইসলাম, যখন এই পদটি তৃতীয় শ্রেণির ছিল। ২০১২ সালে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক হন। প্রায় ৩০ বছরের চাকরিজীবনে বেশির ভাগ সময় ঢাকা রেঞ্জে ছিলেন। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায়।

বছিলায় আটতলা বাড়ি

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওসি মনিরুল ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এসআই ও পরিদর্শক হিসেবে দুই দফায় প্রায় ৪ বছর ৮ মাস কাজ করেন। ওই সময় তিনি রাজধানীর বছিলায় চার কাঠা জমিতে আটতলা বাড়ি করেন। গত ২৫ জুন ওই বাড়িতে কথা হয় বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শামছুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভবনে ১৩টি ফ্ল্যাট আছে। এর চারটিতে ওসি মনিরুল ও তাঁর ভাইদের পরিবার থাকে। তিনি থাকেন তৃতীয় তলায়।

আটতলা বাড়িটির মালিকানা প্রসঙ্গে ওসি মনিরুল দাবি করেন, বাড়িটি তাঁর একার নয়। ভাইদের সঙ্গে মিলে করেছেন।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে চার প্লট

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় থাকাকালে নামে–বেনামে একাধিক প্লটের মালিক হন মনিরুল। ওই এলাকার জিতু মিয়ার মালিকানাধীন আবাসন প্রতিষ্ঠান বেয়ারা হাউজিংয়ে চার ও তিন কাঠার দুটি প্লট কেনেন তিনি। তিন কাঠার প্লটে ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ চলছে। গত ২ জুলাই হাউজিংয়ে ক্রেতা পরিচয়ে কথা হয় জমি কেনাবেচায় জড়িত মো. আবদুল কুদ্দুস মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ওসি মনিরুল কেরানীগঞ্জ থানায় থাকতে এখানে প্লট কেনেন। তিনি চার কাঠার প্লটটি বিক্রি করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। এর দাম ৫২ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ ২ আগস্ট দেশের প্রথম সারির এক জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদক পরিচয়ে আবদুল কুদ্দুস মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, দুটি প্লটের একটি প্লট এখনো ওসি মনিরুলের নামে আছে। অন্যটির কথা জানেন না।

ওসি মনিরুলের নামে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আলী আকবর নগর এলাকার তেঘরিয়া মৌজায় ১০ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এই প্লটে একটি টিনশেড ঘর করে আলফা বলপেন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মচারী বলেন, ‘ওসি স্যারের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ঘরটি আমরা গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছি।’

মনিরুল ইসলামের নামে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার নতুন বাক্তারচর গ্রামের শেষ সীমানায় ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার বালুচর গ্রামে চরপানিয়া মৌজায় ভেনাস লেকভিউ আবাসন প্রকল্পে ৬০ শতক জমি রয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্প এলাকায় কথা হয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এই প্রকল্পের মালিক সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জব্বার মিয়া। এতে রমনা থানার ওসি ছাড়াও আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্যের জমি রয়েছে।

গত ২৩ জুলাই ক্রেতা সেজে মুঠোফোনে কথা হয় আবাসন প্রকল্পের মালিক জব্বার মিয়ার সঙ্গে। তিনি তাঁর প্রকল্পে রমনার ওসি মনিরুলের ৬০ শতাংশ জমি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে চারটি প্লট সম্পর্কে জানতে চাইলে মনিরুল দাবি করেন, ‘এসব জায়গায় আমার কোনো প্লট নেই।’

পুলিশ বিভাগ সূত্র জানায়, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, কর্মমূল্যায়ন ভালো না থাকা এবং মামলাসংক্রান্ত গাফিলতির কারণে মনিরুলের বিরুদ্ধে একাধিকবার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে কেবল তিরস্কার করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ

অভিযোগ রয়েছে, ২০০৫ সালে মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে মুক্তিযোদ্ধা ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সরোজ কান্তি সরকারের ছয় কাঠার জমি দখল করেন মনিরুল ইসলাম। তখন তিনি এসআই ছিলেন। ওই জায়গায় তাঁর ভাই শফিকুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকেন।

সরেজমিন গত ২৫ জুন দেখা গেছে, মোহাম্মপুর হাউজিং সোসাইটির ৭ নম্বর রোডের সব প্লটে বহুতল ভবন। ব্যতিক্রম ২৯ নম্বর বাড়িটি। এর মূল ফটক বন্ধ। প্লটে আধা পাকা তিনটি টিনশেড ঘর রয়েছে।

বাড়ির আশপাশের একাধিক বাসিন্দা বলেন, তাঁরা এটিকে ওসি স্যারের বাড়ি নামে চেনেন। তবে তাঁরা বলেন, এই জমি নিয়ে ঝামেলা চলছে। সম্প্রতি বাড়ির ফটকের দুই পাশে দুটি দোকান করে ভাড়া দিয়েছেন ওসি মনিরুল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে ‘রমনা থানা’ লেখা গাড়ি আসে।

মোহাম্মদপুর ভূমি অফিস সূত্র জানায়, জমির প্রকৃত মালিক সরোজ কান্তি সরকার। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক তাঁর সন্তানেরা।

সরোজ কান্তির ছেলে জ্যোতিষ সরকার গত ১৪ জুলাই অভিযোগ করেন, ‘২০০৫ সালে মনিরুল আমাদের জমিটি দখল করেন। আমরা এ ঘটনায় আইজিপির অভিযোগ সেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ২০১৫ সালে মনিরুলের তিন ভাইসহ নয়জনকে বিবাদী করে ঢাকা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেছি। মামলাটি এখনো মীমাংসা হয়নি।’

জ্যোতিষ সরকার বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর পর দুটি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন ওসি মনিরুল। আমি তাঁদের সঙ্গে বসতে রাজি হইনি।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ২৩ জুলাই বলেন, ‘ওই জায়গা নিয়ে মামলা চলছে। সেখানে আমার ভাই পরিবার নিয়ে থাকেন।’

ওসির বিরুদ্ধে বাড়ি দখলের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয়টি আদালতের ও প্রশাসনের নজরে আনতে হবে। পুলিশ বলে নয়, যেখানে ক্ষমতা থাকে, সেখানে ক্ষমতা অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। কেউ যদি কারও সম্পদ দখল করেন, সেটি দেওয়ানি অপরাধ। তদন্ত করে সাক্ষ্য–প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

রমনা থানার ওসির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ডিএমপির কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি। সূত্র: প্রথম আলো



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]