গত ২৩ জুলাই ক্রেতা সেজে মুঠোফোনে কথা হয় আবাসন প্রকল্পের মালিক জব্বার মিয়ার সঙ্গে। তিনি তাঁর প্রকল্পে রমনার ওসি মনিরুলের ৬০ শতাংশ জমি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে চারটি প্লট সম্পর্কে জানতে চাইলে মনিরুল দাবি করেন, ‘এসব জায়গায় আমার কোনো প্লট নেই।’
পুলিশ বিভাগ সূত্র জানায়, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, কর্মমূল্যায়ন ভালো না থাকা এবং মামলাসংক্রান্ত গাফিলতির কারণে মনিরুলের বিরুদ্ধে একাধিকবার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে কেবল তিরস্কার করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৫ সালে মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে মুক্তিযোদ্ধা ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সরোজ কান্তি সরকারের ছয় কাঠার জমি দখল করেন মনিরুল ইসলাম। তখন তিনি এসআই ছিলেন। ওই জায়গায় তাঁর ভাই শফিকুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকেন।
সরেজমিন গত ২৫ জুন দেখা গেছে, মোহাম্মপুর হাউজিং সোসাইটির ৭ নম্বর রোডের সব প্লটে বহুতল ভবন। ব্যতিক্রম ২৯ নম্বর বাড়িটি। এর মূল ফটক বন্ধ। প্লটে আধা পাকা তিনটি টিনশেড ঘর রয়েছে।
বাড়ির আশপাশের একাধিক বাসিন্দা বলেন, তাঁরা এটিকে ওসি স্যারের বাড়ি নামে চেনেন। তবে তাঁরা বলেন, এই জমি নিয়ে ঝামেলা চলছে। সম্প্রতি বাড়ির ফটকের দুই পাশে দুটি দোকান করে ভাড়া দিয়েছেন ওসি মনিরুল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে ‘রমনা থানা’ লেখা গাড়ি আসে।
মোহাম্মদপুর ভূমি অফিস সূত্র জানায়, জমির প্রকৃত মালিক সরোজ কান্তি সরকার। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক তাঁর সন্তানেরা।
সরোজ কান্তির ছেলে জ্যোতিষ সরকার গত ১৪ জুলাই অভিযোগ করেন, ‘২০০৫ সালে মনিরুল আমাদের জমিটি দখল করেন। আমরা এ ঘটনায় আইজিপির অভিযোগ সেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ২০১৫ সালে মনিরুলের তিন ভাইসহ নয়জনকে বিবাদী করে ঢাকা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেছি। মামলাটি এখনো মীমাংসা হয়নি।’
জ্যোতিষ সরকার বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর পর দুটি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন ওসি মনিরুল। আমি তাঁদের সঙ্গে বসতে রাজি হইনি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ২৩ জুলাই বলেন, ‘ওই জায়গা নিয়ে মামলা চলছে। সেখানে আমার ভাই পরিবার নিয়ে থাকেন।’
ওসির বিরুদ্ধে বাড়ি দখলের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয়টি আদালতের ও প্রশাসনের নজরে আনতে হবে। পুলিশ বলে নয়, যেখানে ক্ষমতা থাকে, সেখানে ক্ষমতা অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। কেউ যদি কারও সম্পদ দখল করেন, সেটি দেওয়ানি অপরাধ। তদন্ত করে সাক্ষ্য–প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
রমনা থানার ওসির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ডিএমপির কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি। সূত্র: প্রথম আলো