ছাত্রলীগের অন্যতম আখড়া হিসেবে পরিচিত পুরান ঢাকা। পূর্ব পাকিস্তান আমল থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ছাত্রলীগের পুরান ঢাকার ইউনিট গুলো। এর মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়), ও দুটি কলেজ ইউনিট (কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ)। তবে গত কয়েকবছর ধরেই কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহেলার স্বীকার এই ইউনিট গুলো। নানানিধ কারণে দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া, স্থগিত কিংবা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া, এসকল বিষয় নিয়ে হতাশ ইউনিটগুলোর নেতা-কর্মীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই বার্ষিক সম্মেলন এর প্রায় আড়াই বছর পর এবছরের পহেলা জানুয়ারি ইব্রাহিম ফরাজী কে সভাপতি ও এস এম আক্তার হোসেন কে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি ঘোষণার ৬ মাস পরে পহেলা জুলাই কোন কারণ উল্লেখ ছাড়াই স্থগিত করা হয় এই ইউনিটের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম।
দীর্ঘদিন পর কমিটি পেলেও তা আবার স্থগিত হয়ে যাওয়ায় শাখা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের মনে হতাশার জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬তম ব্যাচ চলছে। কিন্তু অষ্টম ব্যাচ থেকে ১৬তম ব্যাচের অনেক কর্মী পদের দেখা পান নি। শাখা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের দাবী, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেও এখনো নিজেকে কর্মী বলে পরিচয় দিতে হয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত এই ইউনিটের প্রতি আরো বেশি সুনজর দেওয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হলেও সাংগঠনিক কাঠামো এখানে মেনে চলা হয় না। কয়েক বছর পর পর নতুন কমিটি হয়, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় না। সবশেষ দুই কমিটিতেও আমরা পরিশ্রমের মূল্য পাইনি। রাজনীতি করে দিন শেষে আমাদের পরিচয়হীন হয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, কবি নজরুল সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত তিন বছর আগে, ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই, তবে এখনো কমিটি হয় নি এই দুটি ইউনিটের। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বহীন থাকায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে এই ছাত্রলীগের এই ইউনিটগুলো। সংশ্লিষ্ট দুটি ইউনিটের ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় ছন্নছাড়া হয়ে পড়ছেন সংগঠনের নেতা কর্মীরা, যা সংগঠনের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী এক নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের রাজনীতিও সেভাবে চাঙ্গা নেই আমাদের এখানে, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে পোস্ট না পেয়ে অভিমান করে রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছে। তবে আমরা আশা করছি আগস্টের পরে হয়ত কমিটি হবে।
সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সোহান খান 'ভোরের পাতাকে' বলেন, পুরান ঢাকার যে কমিটি গুলো হচ্ছে না এগুলো নিয়ে আমরা বার বার চাপ দিছি, বলেছিলাম জগন্নাথ এর কমিটির সাথে যেন এই ইউনিট গুলোর দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা প্রটোকল হারানোর ভয়ে কমিটি দিতে চায় না। এগুলো লজ্জার ও নিন্দার বিষয়। ঢাকা শহরের আগস্টের প্রোগ্রাম গুলো ভাল মত করার জন্য হলেও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তাদের কমিটি দেওয়া উচিত ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম এর ব্যাপারে তিনি বলেন, কারো একক অপরাধের দায় পুরো কমিটি নিতে পারে না, তাদের উচিত ছিল যে অপরাধী তাকে শনাক্ত করে অব্যাহতি দেওয়া।
এদিকে এসকল বিষয়ে জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ এর চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায় নি।