প্রকাশ: সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২, ৩:১১ এএম আপডেট: ০১.০৮.২০২২ ৩:১৫ এএম | অনলাইন সংস্করণ
খুলনায় এক সার্জনের সহকারী হিসেবে কাজ করেছে একসময়। ঢাকায় এসে নিজেই বনে যায় সার্জন। রাজধানীর মালীবাগের মাহি হাসান টাওয়ারের চতুর্থ তলায় খুলে বসে লেজার বিউটি পার্লার, যেখানে পুরুষদের তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করা হয়। একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এমন ব্যবসা করে আসছিল হাদিউজ্জামান রহমান নামে ওই ব্যক্তি। মূলত তার নেতৃত্বে একটি চক্র মানুষের লিঙ্গ পরিবর্তন করে থাকে, আর পরিবর্তিত লিঙ্গের এসব মানুষ বিভিন্ন জায়গায় হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি ও ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ায়।
গত পাঁচ বছর ধরেই চক্রটি খুলনা ও ঢাকায় এই অপরাধ করে আসছিল। অবশেষে শুক্রবার (২৯ জুলাই) চক্রটির সদস্যদের গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, লেজার বিউটি পার্লারের আড়ালে পুরুষদের তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করে আসছে একটি চক্র। দীর্ঘ পাঁচ বছরে শতাধিক রূপান্তরকামী পুরুষের অস্ত্রোপচার করেছে তারা। চক্রের মূলহোতা হাদিউজ্জামান। এক সময় তিনি খুলনায় এক চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। রাজধানীর মালিবাগে মাহি হাসান টাওয়ারের চতুর্থ তলায় স্ত্রীর নামে লেজার বিউটি পার্লার খুলে শুরু করেন লিঙ্গ রূপান্তরের ব্যবসা। নিজেই সার্জন বনে যান।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কথিত সার্জন হাদিউজ্জামান গ্রেফতারের পর পুলিশকে জানিয়েছেন— তিনি খুলনায় এক সার্জনের সহযোগী ছিলেন। সেখানে পুরুষদের তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করা হতো। সেখানে কাজ শিখে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর ঢাকায় এসে পার্লারের আড়ালে তিনি নিজেই সার্জন সেজে শুরু করেন এ ব্যবসা। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া এ চক্রের আর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ওষুধ সব চীন থেকে এনেছে চক্রটি।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা তৃতীয় লিঙ্গে গুরু মায়েদের সঙ্গে অনেক পুরুষের সখ্যতা রয়েছে। এ সখ্যতা গড়ে ওঠার পর ওই সব পুরুষদের নিজেদের দলে রাখতে অফার দেন গুরু মা। এজন্য তাদের সার্জারি বা অপারেশন করতে বলেন। একপর্যায়ে আগ্রহীদের গুরু মা হাদিউজ্জামানের ঠিকানা দেন। মালিবাগের এ পার্লারে আসার পর পুরুষদের শরীরে হরমোন প্রয়োগ করা হয়। এরপর তাকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং এক পর্যায়ের অপারেশন করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হাদিউজ্জামান বলেছেন, সার্জারির আগে হরমোন প্রয়োগ করে তাদের নারীসুলভ শরীর করা হয়। এরপর সার্জারি করা হয়। এসব সার্জারি সে নিজেই করেন বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।
লাখ টাকায় পুরুষকে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর
পুরুষ থেকে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করতে প্রতিজনের কাছ থেকে লাখ টাকা নেওয়া হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন হাদিউজ্জামান।
এ বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, প্রতিটি সার্জারির আগে হাদিউজ্জামান লাখ টাকা নেন। তার কোনো চিকিৎসা সনদ নেই, নেই কোনো কাগজপত্র। তারপরও সে এসব সার্জারি করতেন। সে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে অন্তত একশ পুরুষকে তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তর করেছেন। কৃত্রিম স্তন প্রতিস্থাপন ও ঠোঁটের আকার পরিবর্তনও করতেন তিনি।