#শোককে শক্তিতে পরিণত করে ষড়যন্ত্র রুখতে হবে: অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। #বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছিল: ড. শাহিনূর রহমান। #বাঙালি জাতির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবে বঙ্গবন্ধু: অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা। #বঙ্গবন্ধুর অধরা স্বপ্ন পূরণ করছেন শেখ হাসিনা: মায়েদুল ইসলাম তালুকদার।
আগস্ট মাস মানেই আমাদের প্রাণের স্পন্দন, আগস্ট মাস মানেই আমাদের পিতা হারানোর যন্ত্রণা, আগস্ট মাস মানেই ষড়যন্ত্রকারীদের অট্টহাসি, আগস্ট মাস মানেই আমাদের বেদনাবিধুর কণ্ঠের ধ্বনি। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। এই আগস্টেই ঘটেছিল জাতির ইতিহাসের আরও একটি বিয়োগান্তক ঘটনা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বুকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে চালানো হয় নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৮২তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনূর রহমান, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, বেলজিয়াম বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা, জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, যেহেতু শোকাবহ মাসটি শুরু হচ্ছে সেহেতু আমাদের সবার আনন্দ লোপ পাবে এই মাস ঝুরে। এই পুরো মাস ঝুরে একটা শোকাছন্ন পরিবেশ থাকবে সবজায়গায়। এই মাসটি আসলে বাঙালি জাতির সেই কলঙ্কতম অধ্যায়টি আমাদের সামনে উঠে আসে। বাংলাদেশের কিছু কুলাঙ্গার এই মাসের ১৫ই তারিখে আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, শুধু তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা, সেই পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হত্যা করেছে সেই কুলাঙ্গাররা। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে তার দুই কন্যা দেশের বাহিরে অবস্থান করেছিলেন বিধায় আমরা তাদের এখনো দেখতে পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হত্যা করে তারা সাময়িকভাবে তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করার চেষ্টা করেছিল এবং বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ফেলে দেওয়ার তাদের যে চক্রান্ত ছিল সেটাকে ফেলে দিয়ে জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি আজ ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কলঙ্কিত সেই অধ্যাদেশ বাতিল ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া ও নানা কূটকৌশলের জাল ছিন্ন করে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা এবং পাঁচ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে।
ড. শাহিনূর রহমান বলেন, আগস্ট মাস মানেই আমাদের প্রাণের স্পন্দন, আগস্ট মাস মানেই আমাদের পিতা হারানোর যন্ত্রণা, আগস্ট মাস মানেই ষড়যন্ত্রকারীদের অট্টহাসি, আগস্ট মাস মানেই আমাদের বেদনাবিধুর কণ্ঠের ধ্বনি। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে। তাই আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সেদিন নিহত সকল শহীদের প্রতি। ১৯৭৫ থেকে আজ ২০২২ পর্যন্ত আমাদের অনেক দিন চলে গিয়েছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা। তারা ছিল পাকিস্তানের দোসর, তাই তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। এই আগস্টেই ঘটেছিল জাতির ইতিহাসের আরও একটি বিয়োগান্তক ঘটনা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বুকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে চালানো হয় নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ। গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হিংসার দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। হামলার ধরন ও লক্ষ্যস্থল থেকে এটা স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই ছিল ওই গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণের উদ্দেশ্য। ওই গ্রেনেড হামলা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে গিয়েছিল মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ। আজ সব চক্রান্ত, সব ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অদম্য গতিতে; বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে উদার-অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বমঞ্চে সম্মানের আসনে আসীন হয়েছে বাংলাদেশ।
অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা বলেন, আগস্ট শোকের মাস রক্তাক্তের মাস। নৃশংসতম হত্যাকান্ড ১৫ আগস্ট ও গ্রেনেড হামলার মাস। এই মাসেই সব হয়েছিল। এই মাসেই আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হারিয়েছি। শোকাবহ আগস্টে বাঙালি জাতি হারিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বাঙালির নিরন্তর প্রেরণার চিরন্তন স্রোত, যার আঙুলির নির্দেশে গোটা বাঙালি জাতি একাত্তরে ‘যার হাতে যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা’ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু; পাকিস্তানি শাসকদের জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গকৃত-প্রাণ, সদ্যব্যস্ত সেই মহান ব্যক্তি স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও জীবন্ত। এই আগস্টেই জাতির ইতিহাসের চরমতম শোকেবিধুর ও কলঙ্কিত এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছিল। ১৯৭৫ সালের এই আগস্টের মধ্যভাগে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেদিন হাজার বছরের ইতিহাসের এই মহানায়কের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শ্যামল বাংলার মাটি। আমরা সকলে জানি পঁচাত্তরে সেই পরাজিত শক্তির পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের পেছনে থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে বাঙালি জাতি। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর বড় সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ও ছোট বোন শেখ রেহানা শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান।
মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল বলেন, আগস্ট মাস আমাদের জাতিয় শোকের মাস। আগস্ট মাসের ১৫ আগস্টের দিনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের হৃদয় ছাড়া কষ্ট কান্না, বাঙালি জাতিকে সবসময় পীড়া দেয়। আগস্ট মাসের প্রতিটি মুহূর্ত নিমজ্জিত শোকে। আজকের এই দিনে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদেরকে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মহান স্বাধীনতা। কিন্তু সেই স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় আক্রমণ করে। এ সময় বঙ্গবন্ধু ছাড়াও হত্যা করা হয় তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে। এছাড়া বেইলি রোডে সরকারি বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত ও আবদুল নঈম খান রিন্টুকে। আরেক বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিকে। সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া। সেদিন অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরবর্তীকালে শেখ হাসিনার বারবার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এই শোকের মাসেই গ্রেনেড হামলায় হত্যার চেষ্টা করা হয় জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও এ ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী, আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। আজ দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিশ্ব মানবতার পথেই হাঁটছেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।