শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
প্রভাবশালী গ্রাহকদের কাছে হার মানল বাংলাদেশ ব্যাংক!
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২, ১১:৫৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের প্রধান তিন শাখার বৈদেশিক ঋণ কার্যক্রম গত মঙ্গলবার বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চাপের মুখে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঋণ কার্যক্রম খুলে দিতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকটি নিয়ে সিদ্ধান্তটি ২৪ ঘণ্টাও ধরে রাখতে পারল না এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

জনতা ব্যাংকের শাখা তিনটি হলো ঢাকার জনতা ভবন করপোরেট শাখা ও লোকাল অফিস এবং চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখা। ব্যাংকটির ৭৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের অর্ধেকই এই তিন শাখায়। আর প্রভাবশালী গ্রাহকেরাও এই তিন শাখার গ্রাহক। এর ফলে ঋণ কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তে বেশি সময় স্থির থাকতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০১৫ সালেও জনতা ব্যাংক ছিল রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে। আগে ব্যাংকটির গ্রাহক ছিল দেশের প্রথম শ্রেণির রপ্তানিকারক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। সময়ের ব্যবধানে এখন দেশের শীর্ষ খেলাপি ও প্রভাবশালীরা ব্যাংকটির বড় গ্রাহক। এ জন্য খেলাপি ঋণের হারও ১৯ শতাংশ। আগে ব্যাংকটি অন্য ব্যাংককে টাকা ধার দিত, এখন প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংক থেকে পাঁচ-ছয় হাজার কোটি টাকা ধার করে চলছে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বেশ আগেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যেটা চলে গেছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বাতিলে আমি অবাক হইনি। এটাই এখন দেশের বাস্তবতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন বলে কিছু নেই। ব্যাংক খাতে অত্যন্ত অসুস্থ ধারা চলছে।

কেন ঋণ বন্ধের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব কারণে ব্যাংকটির তিন শাখার বৈদেশিক ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে তার মধ্যে অন্যতম হলো চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত নতুন ১০ হাজার ২৮০ কোটি টাকা ঋণের ৮৪ শতাংশই সৃষ্টি হয়েছে নন-ফান্ডেড দায় থেকে। অর্থাৎ ব্যাংকটি ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলে বা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে যে ঋণ দিয়েছে, তার দায় বৈদেশিক মুদ্রায় শোধ করেনি গ্রাহকেরা। ফলে ব্যাংকটি বাধ্য হয়ে ওই গ্রাহকের নামে টাকা ঋণ সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকটির এমন ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। আর ব্যাংকটির ফোর্সড ও ফান্ডেড ঋণ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।

ঋণ কার্যক্রম স্থগিতের চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এসব ঋণ স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়নি। রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসন না হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে অর্থ পাচার হওয়ায় ঝুঁকি রয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ থেকে দেওয়া ঋণের বিপরীতে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত না হয়েই বারবার একই গ্রাহককে ইডিএফ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ইডিএফ-সুবিধার অপব্যবহার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইডিএফ গঠন করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ দিয়ে। ডলার-সংকটে ইডিএফ থেকে ঋণ নেওয়া কঠিন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেসব গ্রাহক ডলারে ঋণ নিয়ে ডলার শোধ করছেন না, তাঁদের ইডিএফ-সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকটির ১৭ বড় গ্রাহকের ফান্ডেড দায় ২৯ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার ৩৪ কোটি টাকা এসেছে ঋণপত্র ও নন-ফান্ডেড দায় থেকে। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট ও অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও জালিয়াতি ধরা পড়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবারের চিঠিতে বলা হয়, তিন শাখার বৈদেশিক বাণিজ্য অর্থায়ন আপাতত স্থগিত করা হলো। বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে ঋণপত্র খোলাও স্থগিত করা হলো।

পিছু হটল কেন

এই তিন শাখার মধ্যে লোকাল অফিসের গ্রাহক কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, অ্যাননটেক্স ও প্রভাবশালী কয়েকজন গ্রাহক। এই শাখার ২৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি। ভবন শাখার গ্রাহক সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন, ক্রিসেন্ট গ্রুপ। এই শাখার ৩০ শতাংশ ঋণই খেলাপি। চট্টগ্রামের সাধারণ বীমা ভবন শাখার গ্রাহক দেশের কয়েকটি ব্যাংকের মালিকের প্রতিষ্ঠান।

গতকাল দুপুরে জনতা ব্যাংকে গেলে কর্মকর্তারা জানান, এই সিদ্ধান্ত দুই দিনও বহাল রাখতে পারবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই যা সত্য হয়ে ওঠে।

গতকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠি দিয়ে জানায়, পর্যাপ্ত তারল্য সংরক্ষণসাপেক্ষ বৈদেশিক ঋণ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা স্থগিত করা হলো। তিন শাখার বৈদেশিক ঋণের তথ্য প্রতি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ও তহবিলের অবস্থা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে জানাতে হবে।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিছু শর্ত দিয়ে সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হয়েছে। শাখা তিনটির কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে।

কেন সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তার ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।

জনতার আর্থিক পরিস্থিতি

গত বছর শেষে জনতা ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। মঙ্গলবার যা কমে হয়েছে ৯৭ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। আমানত কমলেও ঋণ বাড়িয়েছে ব্যাংকটি। গত বছর শেষে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ৬৯ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা, মঙ্গলবার যা বেড়ে হয়েছে ৭৭ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা।

গত বছর শেষে বিল, বন্ড, সুকুক, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন পণ্যে ব্যাংকটির বিনিয়োগ ৩৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা ছিল। মঙ্গলবার যা কমে হয়েছে ২৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। তবে মেয়াদি বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ব্যাংকটি। গত বছর শেষে মেয়াদি বিনিয়োগ ছিল ২ হাজার ২১৮ কোটি টাকা, যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংকটি অন্য ব্যাংককে ১ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা ধার দিয়েছিল। আর মঙ্গলবার ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংক থেকে ধার করেছে পাঁচ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। গত মে মাস থেকে প্রতিদিন একই পরিমাণ টাকা ধার করে আসছে ব্যাংকটি।

এ নিয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল দুপুরে জনতা ব্যাংকে গেলে জানা যায়, এমডি আবদুছ ছালাম আজাদ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গেছেন। পরে তাঁকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুদ কম হওয়ায় আমানত কমে যাচ্ছে। তবে তারল্যসংকট নেই। আবার সপ্তাহের চার দিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তেল, কীটনাশক আমদানির জন্য ডলার কিনতে হচ্ছে। এ জন্য প্রচুর নগদ অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। এই কারণে টাকা ধার করতে হচ্ছে। ব্যাংকের টাকা বিনিয়োগ করা আছে, এতে মুনাফাও ভালো মিলছে। এ জন্য টাকা ধার করে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। সামনে আমানত আসবে, তখন ধারের পরিমাণও কমে আসবে। সূত্র: প্রথম আলো



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]