স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হলো তাদের। জন্ম নৌকায়। শৈশব-কৈশোরসহ আমৃত্যু দিন কাটে জলে ভাসা নৌকায়। নৌকাতেই খাওয়া-নাওয়া। এটাই বেদে সম্প্রদায়ের জীবনের গল্প।
প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস তাদের। তবে ইতিহাস বদলে যাচ্ছে। তাদের জন্য তৈরি হয়েছে ঘর। জলে ভাসা নৌকা ছেড়ে থাকবেন এখন ডাঙায়, স্থায়ী ঠিকানায়।
স্থায়ীভাবে ঘর পেয়েছেন, তাদের এমন একজন বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ নুর খান। বয়স ৭৫ বছর। দীর্ঘ সময় পার হলেও ছয় সন্তান ও স্ত্রীসহ তাদের স্থায়ী ঠিকানা হলো এখন সাভারের উত্তরণ পল্লীর নতুন ঘরে।
নুর খান বলেন, জন্ম ও বড় হয়েছি নৌকাতেই। জীবনের শেষ সময় মাটি পেলাম। কোনো ঠিকানা ছিল না। নৌকায় করে করে দেশের নানা জেলায় ঘুরতাম। ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। কত মানুষ কত কিছু বলছে। অবহেলা করছে। হাবিব স্যারের দয়ায় এখন ঘর পাইলাম। আমি এখন ছেলে-সন্তান নিয়ে ঘরে উঠছি। খুব ভালো লাগছে।
তাদের বদলে যাওয়ার রূপকার বাংলাদেশ পুলিশের একজন কর্মকর্তা। তাঁর নাম হাবিবুর রহমান। বর্তমানে তিনি ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবে কর্মরত আছেন।
সেই ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার (২৭ জুলাই) সমাজে অবহেলিত বেদে জনগোষ্ঠীর জন্য সাভারের উত্তরণপল্লীতে নতুন করে দুর্যোগসহনীয় আরো চারটি ঘর হস্তান্তর করলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি। এ সময় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
উত্তরণ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ও পাকিজা গ্রুপের অর্থায়নে সাভার সদর ইউনিয়নের বংশী নদীর পাড়ে উত্তরণ পল্লীতে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য নবনির্মিত চারটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে উত্তরণ পল্লীতে মোট ৫৪ জন বেদে পরিবারকে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো।
বেদেপল্লীর ১৫ জনের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে বেদে সম্প্রদায়ের নুর খান, তৌহিদ মন্ডল, কালা মিয়া ও মাইদুল ইসলাম-এই চারজন ঘর পেয়েছেন। তারা চারজনই বুঝে পেয়েছেন তাদের স্বপ্নের ঠিকানা।
তারা সবাই বলেন, এখন আর কষ্টে দিন কাটাতে হবে না। অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন কালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য আরো ৩৫টি নতুন ঘর দেওয়া হবে। ডিআইজি ও উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বেদে সম্প্রদায়ের ঠিকানার জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, যদিও আমি এই কাজটি শুরু করেছি। কিন্তু এর কৃতিত্ব সবার। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের এখানকার সাংসদ ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের।
অনুষ্ঠানে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম, সাভার পৌর মেয়র আব্দুল গণি, পাকিজা গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।