অবৈধভাবে প্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের জলসীমায় বিদেশি ট্রলার বিশেষ করে ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে কক্সবাজারের বিভিন্ন জেলে। এতে তাদের (ভারতীয় জেলে) কারণে দেশি জেলেদের মাছ শিকার ব্যাহত হচ্ছে এবং ৬৫ দিন অবরোধ শেষে যে কাঙ্খিত মাছ পাওয়ার কথা তা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন জেলেরা।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের লক্ষে ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগর যাত্রার ৫ম দিনে মাছ শিকার করে উপকূলে ফিরছে কক্সবাজারের জেলেরা। কম-বেশি মাছও পাচ্ছে সব জেলে। তবে জেলে ও মৎস্যজীবি সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ তাঁরা বন্ধ শেষে যে কাঙ্খিত মাছ পাওয়ার কথা তা পাচ্ছে না। কারণ বিদেশি ট্রলার অবৈধভাবে বাংলাদেশে জলসিমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল কক্সবাজার মৎস অবতরণ কেন্দ্রে দিয়ে সাগর থেকে আসা নুর মোহাম্মদ রইজুল মাঝির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “ভারতের বোট ও ট্রলিং জাহাজ ওরা “সোনার চর’ এর ভেতরে ও ময়পুরসহ বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের কোন নেভি, কোস্টগার্ড তাদের ঠেকাতে কোন অভিযান আমরা কখনও দেখিনি। এছাড়া ট্রলিংয়ে ভয়াবহভাবে ক্ষতি করে যাচ্ছে। সাগরে বিভিন্ন মাছের ফোনা পর্যন্ত ছেয়ে ফেলতেছে তাঁরা। এছাড়া এ টিফেও আমার ৭পিস জাল নষ্ট করে ফেলেছে। পরে দুইদিনের মাথায় মাছ শিকার না করে আমার ঘাটে ফিরতে হয়েছে। তবে এখন জলদস্যু দেখা যাচ্ছে না”।
কক্সবাজার মাঝি সমিতির সভাপতি নুন্না মাঝি, ফারুক মাঝি, নবী মাঝি, রফিক মাঝি, হারুন মাঝি, কবির মাঝিসহ বোট ওসমান গণি টুলু কোম্পানি, নজির কোম্পানি, বাচ্চু কোম্পানি, আব্দুল হক কোম্পানি, নাগু কোম্পানি, লেড়ো কোম্পানিসহ আরও অনেকেই জানান, “বিশেষ করে প্রতিবছর ইলিশের মৌসুমেই ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে জেলেরা অবৈধভাবে বড় বড় অত্যাধুনিক ট্রলার নিয়ে এ দেশের জলসীমায় ঢোকেন। অধিকাংশ সময় তাঁরা গোপনে মাছ ধরে চলে যান। তাঁরা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার দিয়ে ট্রলারে বসে নৌবাহিনীর তৎপরতা দেখেন। নৌবাহিনীকে আসতে দেখলেই তাঁরা দ্রুত পালিয়ে যান”। তাঁরা আরও জানান,“ দেশের জলসীমায় যে এলাকায় মাছের পরিমাণ বেশি, সাধারণত সেই এলাকায় বিদেশি জেলেরা মাছ শিকার করেন। তাঁদের দৌরাত্ম্যে এ দেশের জেলেরা ওই সব এলাকায় মাছ শিকার করতে পারেন না। এমনকি ভারতীয় জেলেরা এ দেশের জেলেদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে মাছ ধরতে বাধা দেন। কখনো কখনো তাঁরা এ দেশের জেলেদের ট্রলার ও নৌকায় হামলা চালিয়ে জেলেদের মারধর এবং লুটপাট চালান।
ভারতীয় জেলেরা কারেন্ট জালসহ পাঁচ ধরনের অত্যাধুনিক জাল ব্যবহার করেন। পাশাপাশি তাঁরা মাছের পোনাও ধরেন। তাঁদের কাছে রয়েছে জিপিএস (বিশেষ সংকেত) নামক বিশেষ ধরনের যন্ত্র। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ভারতীয় জেলেরা যে পথ দিয়ে সাগরে আসেন, সেই পথ দিয়েই ফিরে যান।
বঙ্গোপসাগরে জলদস্যু রোধে সরকার যেমন খুব বেশি তৎপর ও আন্তরিক তেমনি বাংলাদেশি জলশিমায় বিদেশী ট্রলার অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে যেন মাছ শিকার করতে না পারে তার দাবী জানিয়েছেন জেলা ও মৎসজীবিরা। তাহলে দেশের মৎস ভান্ডার আরও সমৃদ্ধি, সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ হবে।