অনলাইনে আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সিলেজ নামে একটি অনলাইন আরনিং সাইটের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিকে এই সাইটটি অনলাইনে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের নানা প্রলোভন দেখিয়ে মোবাইল এপ্সের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
প্রথমে ফ্রি মেম্বারশীপ প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহক তৈরী করলেও সে মাসেই তারা অধিক মুনাফা প্রদানের কথা বলে গ্রাহকদেরকে বিনিয়োগের মাধ্যমে স্থায়ী মেম্বারশিপ ক্রয়ের প্রলোভন দেখায়। তারা ফ্রি গ্রাহকদের শুধুমাত্র ৫ দিন কাজের সুযোগ দিতো এবং একাউন্টে সেই ৫ দিনের জমা টাকা নতুন ভি আই পি মেম্বারশিপ ক্রয়ের মাধ্যমে তুলে নিতে পারবে বলে নিয়ম বেধে দেয়। তারা পাচটি ভি আই পি মেম্বারশীপ পদবী নিয়ে আসে সেগুলো হচ্ছে ভি আই পি ১,২,৩,৪ এবং ৫ । ভি আই পি ১ নিতে ২,৪০০ টাকা, ভি আই পি ২ নিতে ৬,০০০ টাকা, ভি আই পি ৩ নিতে ১২,০০০ টাকা, ভি আই পি ৪ নিতে ৩০,০০০ টাকা, এবং ভি আই পি ৫ নিতে ৯০,০০০ টাকা তাদের নির্দিষ্ট কিছু নগদ, রকেট, বিকাশ এবং ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়ে ক্রয় করা লাগতো বলে গ্রাহকরা জানান। তারা বলতো যেকোনো সময় এই অর্থ তুলে নেওয়া যাবে কিন্তু বিগত এপ্রিল মাসের দিকে কিছু কিছু গ্রাহক অভিযোগ করেন তারা তাদের একাউন্টের টাকা তুলে নিতে পারছে না। প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, টেলিগ্রাম, হুয়াটসএপে গ্রুপ খুলে সেখানে নতুন গ্রাহক সংগ্রহ করতো।
গ্রুপের প্রধান সঞ্চালক হিসেবে প্রথমেই আসে তৌফিক হাসান প্রতীকের নাম। সে সিলেজ টেলিগ্রাম গ্রুপের প্রধান সঞ্চালক হিসেবে কাজ করেছে বলে ভুক্তভোগী গ্রাহকগন অভিযোগ করেন। গ্রাহক দ্রুত পাওয়ার জন্য তারা গ্রুপ সুপারভাইজার এবং এজেন্ট নিয়োগ করে এবং এরা বিভিন্ন ভাবে সাধারন গ্রাহকদের হেনস্তা করতো যদি কেউ নতুন গ্রাহক নিয়ে আসতে অপারগ হতো। এজেন্টরা এই সকল গ্রাহকদের একাউন্ট তাদের অপারগতার দরুন অনেক সময় ফ্রিজ বা অফ করে রাখতো এবং তাদের স্বাভাবিক উত্তোলনও বন্ধ করে রাখতো বলে অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে তারা আপডেটের নামে নতুন এক প্রতারনা নিয়ে হাজির হয় । তারা তাদের ওয়েবসাইটের সকল একাউন্ট গুলোকে লোনের আওতায় ফেলে এবং বেশীরভাগ গ্রাহকের উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। যেই সকল গ্রাহকদের একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা ছিলো তাদের উত্তোলনও বন্ধ করে দেয় নগদ সার্ভার এর সমস্যার বাহানা দিয়ে। ঈদের আগে তাদের এই প্রতারনার কারনে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পুরোনো গ্রাহকরা আস্থা হারিয়ে ফেলে।
এদিকে নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার ফাদ বুনতে থাকে তারা। জুলাই মাসের ১৮ তারিখের পর আর কোনো নতুন ভি আই পি গ্রাহক নেয়া হবেনা বলে তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিজ্ঞপ্তি দেয় এবং এতে তাদের উত্তোলনের উপর চাপ কমবে বলে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে। নতুন গ্রাহক গ্রহনের সময়সীমা তারা আরও একদিন বৃদ্ধি করে এবং ১৯ তারিখ রাতে তারা ২০ এবং ২১ তারিখ তাদের সাইট আপডেট এর নোটিশ প্রত্যেকের একাউন্টে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে। তারা অনেক সুযোগ সুবিধা নিয়ে হাজির হবে বলে সকলকে আশ্বস্ত করলেও ২২ তারিখ সকালে উলটো চিত্র দেখা যায়। প্রতারকরা তাদের সাইটে থাকা সকল গ্রাহকের একাউন্টের টাকা তুলে নিয়ে যায় এবং টাকার পরিমান শুন্য দেখায়।
উক্ত ঘটনা ঘটার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ভাইরাল হয়। প্রতারক চক্রের প্রধান সিলেজ সাইটের সিইও ইমরুল ফয়সাল, মার্কেটিং ম্যানেজার শুভ, প্রধান এডমিন তৌফিক হাসান প্রতীকের মতো সকল এডমিনদের ফোন নম্বরগুলো আজ অবধি বন্ধ রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। প্রতারিত হয়েছে মনে করে গ্রাহকগন তাদের নিকটস্থ থানায় মামলা করে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করলে এই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। এখানে বিনিয়োগ করা বেশীরভাগ বেকার যুবক এবং দিনমজুর। সামান্য লাভের আশায় তারা অনেকেই তাদের জমানো পুজী এবং ধার করা টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
তারা সরকারের কাছে এই সকল প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার এবং পাওনা টাকা ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে সহযোগীতা চান। এই মাসেই এমাজন ইম্পেরিয়াল ক্রাউন নামে আরো একটি প্রতারক চক্র গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও প্রশাসনের প্রচেষ্টায় তারা গ্রেপ্তার হয়।