#সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে: আফছার খান সাদেক। #অশুভ শক্তির উৎসকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে: কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন।
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:২২ এএম | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে বাংলা ভূখণ্ডে নানা জাতি-গোষ্ঠী ও ধর্মমতের অনুসারীরা পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে মিলেমিশে একত্রে বসবাসের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বা আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য সংহত রেখেছে। আজ দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে বাঙালির আবহমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, ধর্মীয় সহাবস্থানকে নষ্ট করছে তাদের সমূলে উৎপাটন জরুরি হয়ে উঠেছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৭২তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, বহির্বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠাতা আফছার খান সাদেক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক কর্নেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
আফছার খান সাদেক বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে বাংলা ভূখণ্ডে নানা জাতি-গোষ্ঠী ও ধর্মমতের অনুসারীরা পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে মিলেমিশে একত্রে বসবাসের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বা আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য সংহত রেখেছে। যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে এটাই ধর্মের শিক্ষা। আমাদের এই দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাঁধনে আবদ্ধ, এখানে কোনোরূপ সন্ত্রাস ও জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত কোনো অপশক্তির স্থান নেই। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের দৃষ্টান্তই আমরা লক্ষ করে আসছি। এবার কোরবানির ঈদে আমাদের সিলেটে হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে গরুর মাংসের পরিবর্তে ৫০০ টাকার একটি নোট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঈদ উৎসব আমরা ধর্ম বর্ণ হিসেবে সবাই একসাথে পালন করেছি। এটাই আমাদের সফলতা। হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের মুসলমানদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই, কে কোন ধর্মের তা তারা বিচার-বিবেচনা করে না। হোক সে হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিস্টান। একই সঙ্গে চলা, একই সঙ্গে খাওয়া এবং পারস্পরিক সদাচার ও সদ্ভাবের সঙ্গে তারা এক অপূর্ব সহবস্থানের মধ্যে বসবাস করছে। তাই যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করবে তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। আমরা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের আশ্রয় বা প্রশ্রয় দেব না। এদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।
কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন বলেন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা যে কোনো রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সামাজিক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে মারাত্মক হুমকি।। যতদিন এই পৃথিবী থাকবে পৃথিবীতে ধর্ম থাকবে ততদিনই ধর্মের নামে একটি স্বার্থান্বেষীমহল নিজের হীনস্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মীয় হিংসা ও সন্ত্রাসকে টিকিয়েই রাখবে। সম্প্রতি আমাদের দেশের দুটি ঘটনা আমাদেরকে অনেকটা বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহা পাড়ায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে মৌলবাদীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি। এই ঘটনা দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। আমরা বলি আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু ইদানীংকালে অসহিষ্ণুতা ও অধৈর্যের যে প্রকাশ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে- তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। যার মধ্যে মানবিকতা আছে, মূল্যবোধ আছে, যার মননে মানবধর্মের প্রতিপালন হয়, যার কাছে মানুষ পরিচয়ই মুখ্য- সে কখনো অন্যকে বা অন্যের ধর্মকে অবমাননা করতে পারে না, অন্যের ধর্মের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাতে পারে না, অন্যের প্রতি সে সহিংস হতে পারে না। আজ দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে বাঙালির আবহমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, ধর্মীয় সহাবস্থানকে নষ্ট করছে তাদের সমূলে উৎপাটন জরুরি হয়ে উঠেছে।