যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট রয়েছে। ফলে, প্রাণিসম্পদ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন খামারি-উদ্যোক্তারা। কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১১টি পদের মধ্যে ৬টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। শূন্যপদ গুলো যথাক্রমে ভেটেরিনারি সার্জন(ভিএস) ১জন, উপজেলা লাইভষ্টক অফিসার(ইউএলএ) ১জন, কৃত্তিম প্রজনন সহকারি(ভিএফএ) ২জন, কম্পাউন্ডার ১জন, এমএলএসএস ১জন।
এদিকে, গবাদিপশুর প্রাণঘাতি রোগের প্রতিষেধক (পিপিআর) ভ্যাকসিন না থাকায় ঝুঁকির আশংকা করছেন খামারিরা। কর্তৃপক্ষের দাবি, চাহিদাপত্র পাঠালেও এখনও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে, অন্যান্য ঔষধ ও প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের মজুদ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান স্বাভাবিক রয়েছে।
খামারিদের অভিযোগ, তারা প্রত্যাশিত চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ পাচ্ছে না। সময় মতো ডাক্তার না থাকায় পরামর্শ ও চিকিৎসা পাওযা যায়না।
পৌরসদর পায়রাডাঙ্গা গ্রামের পোল্ট্রি খামারি গাজী পোট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, খামারে বর্তমানে ২হাজার ব্রয়লার ও আড়াই হাজার লেয়ার মুরগী আছে। উৎপাদিত ডিমের বাজারমূল্যের তুলনায় মুরগীরবাচ্চা, প্রতিষেধক ও খাদ্যের উচ্চমূল্যে আমরা দিশেহারা। দিনকে দিন খাদ্যের সাথে ঔষধ ও বাচ্চার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সেই তুলনায় ডিম-মাংসের দাম পাচ্ছিনা। এরপরও খামারিদের উপর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়ায় ক্রমবর্ধমান লোকসান, হয়রানি ও নাজেহাল অবস্থায় আছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, প্রাণিসম্পদের নিবন্ধন ও নবায়ন, কৃষি বিভাগের প্রত্যায়নপত্র ও আয়কর সনদ ইত্যাদির পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের নিশ্চয়তা পাচ্ছিনা। ফলে, দুঃশ্চিন্তা ও ঝুঁকির মধ্যে আছি।
গুমন পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মশিয়ার রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খামারে এখন ৩হাজার মুরগী রয়েছে। লোকসান গুনতে গুনতে পথে বসতে চলেছি। অথচ, অনেক স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখেছিলাম খামার ঘিরে। আর কত লোকসান দিবো? -এমন প্রশ্ন তার। বলেন, খাদ্য, বাচ্চা, বিদ্যুৎ বিল ও ঔষুধের পাশাপাশি কর্মচারীর বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছি। তারপরও সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছিনা। টিকে থাকায় দায় হয়ে পড়েছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ঔষধসহ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে এই খামারি বলেন, আমরা কি অবস্থায় আছি, কেমন আছি তার খবর নেবার প্রয়োজন মনে করেন না কেউ!
এব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ জি.এম. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আন্তরিকতা থাকা সত্বেও জনবল, ঔষধ ও প্রতিষেধক প্রয়োজনের তুলনায় প্রাপ্তি অপ্রতুল হওয়ায় সেবা প্রত্যাশি খামারি ও গৃহস্থলী গবাদীপশু পালনকারী সবাইকে খুশি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী উপজেলা গবাদী পশু গরুর সংখ্যা ৯৮হাজার৫শ’২০টি। এর মধ্যে দেশিগরু ৫৫হাজার৩শ’৩০টি ও শংকর জাতের গরু ৪৩হাজার১শ’৯০টি। গাভী ৪০হাজার৬শ’৪০টি। এর মধ্যে দেশি গাভী ২৬হাজার৪শ’৬০টি ও শংকর জাতের গাভী ১৪হাজার২শ’২০টি। সক্ষম গাভী ৩৬হাজার৫শ’১০টি। এর মধ্যে দেশি ২৩হাজার৭শ’২০টি ও শংকর জাতের ১২হাজার৭শ’৯৮টি। ছাগলের সংখ্যা ১লাখ৩০হাজার টি। ভেড়া ১০৪টি।
খামারির সংখ্যা গাভী ৬২টি, হৃষ্টপুষ্ট করণ ১২০টি, ছাগল ১৫৭টি ও ভেড়া ১টি। পোল্ট্রি খামারির সংখ্যা লেয়ার ২০টি, ব্রয়লার ৫৫, হাঁস ২২, কবুতর ১০ ও কোয়ের ৫টি।