#একাত্তরের অপশক্তি সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে: কে এম লোকমান হোসেন। #অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে সকলকে আন্তরিক হতে হবে: এম এ লিংকন মোল্লা।
প্রকাশ: বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২, ১১:০৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
দেশের বিভিন্ন স্থানে অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সংঘাত মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী এক অশুভ শক্তির সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য এক নিমিষে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপপ্রচারকে সম্বল করে বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ‘ইস্যু’ বানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৭১তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি, ইতালি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি কে এম লোকমান হোসেন, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব, এম এ লিংকন মোল্লা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
কে এম লোকমান হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সংঘাত মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি নড়াইলের পর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে এবার লোহাগড়ায় হিন্দু বাড়িতে হামলা ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টের নিচে ধর্মীয় অবমাননামূলক মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে তার বাড়িতে হামলা ও আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। একপর্যায়ে তারা ৫-৬টি ঘর ভাঙচুর করে। পরে একটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে হেলা করা মোটেও যৌক্তিক নয়। এর পেছনে গভীর রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি রয়েছে। তাই সরকারকে কেবল ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রতিশ্রুতি’ না দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা প্রায় দেখতে পাই এসব ধর্মীয় উগ্রবাদী ও স্বার্থান্বেষী একটি মহল বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা অপপ্রচার এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সরকার ও প্রশাসনের ওপর পেশিশক্তি দেখিয়ে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে থাকে। বিশেষ করে দেশে যখন আন্দোলনের কোন ইস্যু থাকে না তখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে এরা কখনও ধর্ম অবমাননা বা আহমদিয়াসহ নানা ইস্যু সামনে এনে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করবে। এর জন্য আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সামাজিক, প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা থেকে সকলকে আন্তরিক হতে হবে।
এম এ লিংকন মোল্লা বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার কোন সুযোগ এখানে নেই। প্রতিটি ধর্মই মানুষের মধ্যে সাম্য, একতা, মানবতা এবং সহমর্মিতা প্রকাশের মাধ্যমে সহাবস্থানে বসবাসের শিক্ষা দেয়। এক ধর্মাবলম্বী অন্য ধমার্বলম্বীকে সম্মান করার আদেশ বিদ্যমান। বাংলাদেশের সংবিধানেও প্রত্যেক ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ধর্মপালন কিংবা বর্জন ব্যক্তির নিজস্ব অধিকার। এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে নড়াইলে দুটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটল। হামলার ধরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে উন্নতি ঘটেছে; সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবকেই ধ্বংস করতে চায় মৌলবাদী জনগোষ্ঠী। আসলে মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ফায়দা লুটছে কেউ কেউ। মৌলবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রচারণায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর প্রচেষ্টা রয়েছে এখনো। আমরা বলি আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু ইদানীংকালে অসহিষ্ণুতা ও অধৈর্যের যে প্রকাশ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী এক অশুভ শক্তির সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য এক নিমিষে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপপ্রচারকে সম্বল করে বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ‘ইস্যু’ বানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। এসব কাজে ধর্মের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং কোনো রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন নিহিত থাকে।