#সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কঠোর হস্তে প্রতিহত করতে হবে: শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। #সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, সহিংসতা রুখতে হবে: কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন। #আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে: অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা।
আমাদের মূল পরিচয় আমরা সবাই বাঙালি। আজকে কেন সংখ্যালঘু কথাটা বার বার সামনে আসছে। নড়াইলের লোহাগড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমরা যেমন উদ্বিগ্ন। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের মাথায় এসে যখন আমাদের এই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৭০তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক কর্নেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, বেলজিয়াম বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আমাদের মূল পরিচয় আমরা সবাই বাঙালি। আজকে কেন সংখ্যালঘু কথাটা বার বার সামনে আসছে। নড়াইলের লোহাগড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমরা যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনই বিস্মিত। গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার ইউনাইটেড কলেজের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক বার্তাকে কেন্দ্র করে সেখানকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে চরমভাবে অপদস্থ করা হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মহান বিজয় অর্জনে একক ও সক্রিয়ভাবে যে উপাদানটি কাজ করেছে সেটি হলো আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার শক্তি। স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক, প্রগতিশীল, সাম্য, সমতা, সবার জন্য ন্যায়বিচার ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীনতার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে যে রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সে রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িক দর্শন ও চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কেবল ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মকে পুঁজি করে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একটি অশুভ শক্তির দ্বারা বিভিন্ন সময়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে আসছে এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী এক অশুভ শক্তির সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য এক নিমিষে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপপ্রচারকে সম্বল করে বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ‘ইস্যু’ বানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। যারা লোহাগড়ায় সংখ্যালঘুর বাড়িঘরে হামলা ও আগুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন বলেন, আজকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বসেছি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শেষ কোথায়? এটা একটা লজ্জাজনক ও কষ্টের বিষয়। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের মাথায় এসে যখন আমাদের এই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে। এই বিষয়টি যতবার ভাবি ততবার নিজেকে খুবই অমর্যাদাকর মনে হয়। সম্প্রতি নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়ি, দোকানপাট, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ। এ ঘটনায় আমরা সবাই ক্ষুব্ধ ও হতাশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এ ধরনের হামলার অঘটন বেড়েই চলেছে। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনঃপুন হুঁশিয়ারি এবং ক্ষেত্রবিশেষ গ্রেপ্তার ও মামলা সত্ত্বেও হামলার ঘটনা থামছে না। উদ্বেগের কারণ এটাও; সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর ধরন ও কারণ প্রায় অভিন্ন। শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো একটি পোস্টের কারণে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলা হয় এবং তা ছড়িয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। অবিলম্বে এসবের ন্যায় বিচার না-হলে, ধর্ম অবমাননার নামে মিথ্যা অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও হামলা বন্ধ না-হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ভূলুণ্ঠিত হবে।
অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা বলেন, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহা পাড়ায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে মৌলবাদীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে এই হামলা চালানো হয়। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল ধরে এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে পারস্পরিকভাবে বসবাস করে আসছে। হাজার বছর ধরে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, চাকমা, মারমা, সাঁওতালসহ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এই ভূখণ্ডে একসঙ্গে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। আর এ সম্প্রীতির জন্যই বলা হয়ে থাকে ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার অন্তর্ভুক্তির অর্থ হচ্ছে, সব ধর্মের নাগরিকের সম্প্রীতি বজায় রেখে ধর্মীয় স্বাধীনতা তথা ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, মাঝেমধ্যে আমাদের দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে এক শ্রেণির দুর্বৃত্তরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায়। এসব সাম্প্রদায়িক সংকট মোকাবিলায় অবিলম্বে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে।