প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২, ৭:৪৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ঠাকুরগাঁও জেলা দেশের উত্তরের কৃষি নির্ভর একটি জেলা। আমন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকেরা। সদর উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় কিছু স্থানে চারা গাছ তুলছেন তারা। আবার কিছু স্থানে গিয়ে দেখা যায় চারা রোপন করতে শুরু করেছেন কৃষক। কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে কৃষকেরা চারা রোপন করতে পারছেন না। আর আগে থেকেই যারা চারা রোপন করেছেন কিন্তু পানির অভাবে ধানক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে আছে। এতে করে মারাত্মক সমস্যায় পরেছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। ফলে বেশ কিছু কৃষককে শ্যালোমেশিন, বরেন্দ্র গভীর নলকূপের সাহায্যে পানি দিতে দেখা যায়। কিছু এলাকায় বৃষ্টির জন্য দোয়া, ব্যাঙের বিয়ে সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দানারহাট, বরুনাগাঁও ও রানিশংকৈল, শীবগঞ্জ, নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ি, পীরগঞ্জ, হরিপুর উপজেলা সহ রুহিয়া থানার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় আমনের চারা উঠানো ও রোপন করার দৃশ্য। এতে দল বেঁধে শ্রমিকেরা কোথায় আমনের চারা তুলছেন, আবার কোথায় চারা রোপন করছেন। এদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের চারা তুলে রোপনের দৃশ্য চোখে পড়ে বেশ কয়েক জায়গায়। জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি জাতের ধান আবাদ করা হবে বলে জানান কৃষকেরা। তবে বৃষ্টির পানির অভাবে উচু জমিতে লাগানো ধানের ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এতে করে বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় রয়েছেন এ জেলার কৃষকেরা।
সদর উপজেলার ভেলজান গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি এ বছর আড়াই একর (২৫০ শতক) জমিতে আমন ধান লাগানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড রোদে আর বৃষ্টি না হওয়াতে বিপাকে পরেছেন। কারণ বৃষ্টির পানি না হওয়ায় আমনের জমিগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তিনিও দুশ্চিন্তা করছেন।
সদর উপজেলার পারপুগী এলাকার কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, প্রত্যেক বছরের মত এ বছর তিনি ৩ একর (৩শ শতক) জমিতে আমন লাগাবেন। জমি প্রস্তুতও করেছেন, কিন্তু বৃষ্টির পানিরঅভাবে শ্রমিক নিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমন লাগানোর সময় পেরিয়ে যাওয়ার চিন্তায় রয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাশেল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর। যাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। যা গত বছরে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা অন্যান্য ফসলের ন্যয় ধানের জন্যও বিখ্যাত। প্রচুর পরিমানে ধান এ জেলায় উৎপাদন হয়। প্রত্যেক বছর আমন মৌসুমে কৃষকদের যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদান করা হয়। এ বছরও দেওয়া হয়েছে। তবে বৃষ্টির পানির অভাবে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে উচু জমিগুলোতে পানি থাকছে না। তবে বৃষ্টির পানি না হওয়া পর্যন্ত সম্পুরক সেচ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। সেচ পাম্পগুলিও সচল রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে এবং কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যর্য্য মুল্য পাবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।