পেশাগত জীবনে পদোন্নতি এবং পদায়ন- দুটোই নৈমত্তিক ঘটনা। অবশ্যম্ভাবী এক অভিজ্ঞতা। প্রায় ২২ বছরের চাকরি জীবনে এ অভিজ্ঞতা আমার বেশ কয়েকবার হয়েছে। সম্প্রতি ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার মধ্য দিয়ে আরও একবার হলো।
এসব ক্ষেত্রে যা হয়, নিকটজনদের উচ্ছ্বাসই চোখে পড়ে বারবার। আর আনন্দ যেহেতু সংক্রামক, ফলে আমাকেও তা স্পর্শ করে। বুঝতে পারি, প্রিয়জনদের আনন্দের উপলক্ষ্য হওয়ার চাইতে গৌরব আর কিছুতে নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়ে গত প্রায় দুই যুগে নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়েছি। এই দীর্ঘযাত্রায় ভালো স্মৃতি যেমন আছে, মন খারাপের ঘটনারও কমতি নেই। তবে দিন বদলের যে স্বপ্ন আর প্রত্যয় নিয়ে বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম, তা পূরণের নিরলস চেষ্টায় ভাটা পড়েনি কখনও।
ফলে পদোন্নতি আর পদায়ন অনেকের কাছে তৃপ্তি কিংবা আনন্দের হলেও আমার কাছে নিজের অসমাপ্ত প্রত্যয় পূরণের নতুন আরেকটি সুযোগ। কর্মউদ্দীপনাময় নতুন কোনো মিশন। যে মিশনে, ছুটতে হবে গণমানুষের অধীকার, শান্তি-শৃঙ্খলা আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায়।
আমার পেশাজীবন কখনই সরলরৈখিক ছিল না। সর্বদা বৈচিত্রময় দায়িত্ব পালন করেছি। কখনও দূর্গম পাহাড়ে, কখনও গোয়েন্দা পুলিশে, জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার ছিলাম, সিআইডিতে এসে অর্গানাইজড এন্ড ইকোনোমিক ক্রাইমের দায়িত্ব সামলেছি। আবার নৌ-পুলিশের মত বিশেষায়িত ইউনিটেও কেটে গেছে তিন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। এবার পেলাম গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্ব।
ঢাকার অদূরের গুরুত্বপূর্ণ এই মহানগরীর মানুষ যেন ট্রাফিক জ্যাম, মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশে ঘুমাতে পারেন- সে প্রত্যয় নিয়ে শুরু হবে আমার নতুন উদ্যমের কাজ। আর এ কাজে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, গণমাধ্যমকর্মী, সুধীসমাজ ও মহানগরীর সম্মানীত নাগরিকবৃন্দ তাদের প্রত্যাশা, পরামর্শ আর তথ্য সহায়তা দিয়ে আমার পাশে থাকবেন- এই অনুরোধ রইল।
সর্বাপরি মহান আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। ডিআইজি পদোন্নতি এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিট প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
কৃতজ্ঞতা মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাস্ট্র সচিব ও মাননীয় আইজিপি স্যারের প্রতিও। যে আস্থা ও বিশ্বাস আপনারা রেখেছেন, অতীতের ন্যায় এবারও তার প্রতিদান দিতে চেষ্টার কোনো ব্যত্যয় থাকবে না। নতুন দায়িত্বের প্রাক্কালে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলাসমুহ তদন্ত-তদারকি, মাদক, অর্থপাচার, প্রশ্নফাঁস কিংবা জঙ্গী নিধনের বড় বড় মিশনে দেশ ও জাতি উপকৃত হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয়েছে আমার পরিবার। নিশ্চয়ই এ বঞ্চনাকে তারা সামগ্রীক কল্যানে তাদের ত্যাগ হিসেবেই দেখেছে এতদিন, আশা করি নতুন দায়িত্বের সময়কালেও দেখবে। কেননা, পরিবারের প্রেরণা, ভালোবাসা আর আত্মত্যাগেই আজ আমি এতদূর এসেছি।
সকলের শুভ কামনা ও দোয়া যেন আমার আগামী দিনের পথচলার সম্বল হয়, মানুষের জন্য যেন কাজ করে যেতে পারি, এই প্রত্যাশায় শেষ করছি।
আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
(লেখাটি গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলামের ফেসবুক থেকে নেওয়া)