প্রতিবছর ঈদুল আযহার ছুটিতে লক্ষ লক্ষ পর্যটকে টইটম্বুর থাকে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। কিন্তু এবার এর চিত্র ভিন্ন। ঈদের দিন থেকে সীমিত সংখ্যক পর্যটক এসেছে। তবে স্হানীয় দর্শনার্থী ছিলো লক্ষণীয়। এছাড়া ঈদের তৃতীয় দিন পর্যটকের সংখ্যা একটু বেড়েছে। তবে প্রত্যাশার চেয়ে খুবই অপ্রতুল।
ঢাকার এক চাকুরীজীবি এইস এম রলি বলেন, " বিশেষ কোন দিনে মানুষ এখন কক্সবাজার যেতে ভয় পায়, কারণ ওখানেই গিয়ে ১ হাজার টাকা রুম ৫ হাজার টাকা দিয়ে নিতে হয়। ৫শ টাকার রুম ২হাজার টাকা চাই। খাবার হোটেলও গলাকাটা বাণিজ্য। অনেক সময় রাস্তা ও গাড়িতে রাত্রিযাপন করতে হয়। এতে পর্যটকরা চরম হয়রানির শিকার হয়। তবে পর্যটকদের প্রশাসনিক নিরাপত্তা খুবই ভালো"।
তবে এ বিশয়ে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, "সিলেট ও কয়েকটি জেলায় বন্যার প্রভাব পড়ছে। এছাড়া দেশে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় মানুষ বাজেট সংকটে পড়েছে। তাই এবার ঈদে মানুষ ভ্রমনে কম বের হয়েছে। এছাড়াও সামনে এসএসসি পরিক্ষাও। আর নতুন পদ্মা সেতু হওয়ায় পর্যটকদের আকর্ষন সেদিকে"।
এদিকে হোটেল মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ঈদের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ আগামীকাল সোমবার (১১ জুলাই) কক্সবাজারে ভ্রমণে আসবেন মাত্র সাত হাজার পর্যটক। তৃতীয় দিন ও চতুর্থ দিন আসবেন প্রায় ৬৩ হাজার পর্যটক। এর পরদিন থেকে পর্যটকেরা চলে যাওয়া শুরু করবেন। হোটেল মালিকেরা জানান, গত ঈদুল ফিতরের ১০ দিনের ছুটিতে সৈকত ভ্রমণে এসেছিলেন ১১ লাখের বেশি পর্যটক। তখন পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা হয়েছিল। শুধু কক্সবাজার নয়, তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতেও এবারের ঈদে পর্যটকদের সমাগম নেই।
কক্সবাজারে ঈদুল আযহার ছুটিতে পর্যটক আকর্ষণে হোটেল মোটেল ভাড়ায় ৫০-৬০ শতাংশ ছাড়ও ঘোষণা করেছিলেন মালিকরা। এরপরও আশানুরূপ পর্যটক না মেলায় হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, গত রোজার ঈদের ছুটিতে সৈকত ভ্রমণে এসেছিলেন ১১ লাখের বেশি পর্যটক। তখন পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যবসা হয়েছিল ৫০০-৬০০ কোটি টাকার বেশি। এবার কোরবানির ঈদেও টানা ছুটি থাকায় অন্তত কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম আশা করেছিলাম। কিন্তু সে আশার সিকি পরিমাণও পূরণ হয়নি, যা পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্টদের হতাশ করেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, এবারের পর্যটক উপস্থিতি আমাদের চরম হতাশ করেছে। এমন ঈদে লাখো পর্যটকের উপস্থিতি সামলাতে হিমসিম খেতে হতো। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয়দিনে আমাদের হোটেলে ৬৬টি রুমের মধ্যে মাত্র ২০টি বুকিং রয়েছে। এমন দিনে ২৫-২৮ শতাংশ বুকিং উল্লেখ করার মতো কিছুই নয়। কারণ এখনকার বুকিং ৫০ শতাংশ ছাড়ে দেওয়া। শুধু আমরা নয়, খবর নিয়ে দেখেছি প্রায় প্রতিটি হোটেলেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে।
কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, কক্সবাজারে পর্যটক উপস্থিতি খুবই কম। কয়েকটি কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে হয়। ঢাকা বা আশপাশের এলাকার যেসব মানুষ ঈদে কক্সবাজারে বেড়াতে পছন্দ করেন তারা হয়তো এবার পদ্মা সেতু এলাকায় গেছেন। পদ্মা সেতু চালুর আগে ও পরে ব্যাপক প্রচারণার কারণে দর্শনার্থীরা এবার পদ্মা সেতু এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে ঘোরার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এছাড়া সিলেটসহ উত্তরবঙ্গের ২০ জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন মানুষ। লাখো মানুষ এখনো বন্যাকবলিত। ঈদ বা অন্য ছুটিতে এসব অঞ্চলের মানুষ সৈকতে ভ্রমণে আসতো বেশি।
তিনি বলেন, আবার ঈদের ছুটির পরই শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী আছে এমন পরিবার ভ্রমণে আগ্রহী নয়। এছাড়া বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বগামী; কোরবানির গরুর দাম পড়েছে গতবছরের তুলনায় বেশি। অর্থসংকটে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এ কারণে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে হয়তো।
হোটেল দি কক্স টুডে এর ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, এবার তার হোটেলে ২৫ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে। অথচ বিগত বছরগুলোয় বুকিংয়ের এ হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ছিল। এছাড়া ঈদের টানা ছুটিতে শতভাগ কক্ষ ভাড়া হয়ে যেত।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, অতীত সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের ধারণা ছিল পর্যটকে ভরপুর থাকবে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি। কিন্তু অতি সল্পসংখ্যক পর্যটকের দেখা পেয়েছি আমরা। হাজার দশেক যে পর্যটক এসেছেন তাদের মাঝে এক তৃতীয়াংশ স্থানীয়। ঈদের তৃতীয়দিনও তেমন বুকিং নেই বলে জেনেছি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৬০-৬৫ হাজার পর্যটক আসতে পারে বলে ধারণা করছি।
হোটেল সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ঈদে কক্সবাজারে তারকা হোটেলে কক্ষ ভাড়া হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। আর মাঝারি মানের হোটেলে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে।