#মানবতার ফেরিওয়ালা ছিলেন নির্মল রঞ্জন গুহ: তানভীর শাকিল জয়। #শেখ হাসিনার জন্য উৎসর্গিত প্রাণ নির্মল রঞ্জন গুহ: আফজালুর রহমান বাবু। #নির্মল রঞ্জন গুহের মতো রাজনীতিবিদ পাওয়া খুবই বিরল: ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন।
সত্যিকার অর্থে এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, নির্মল দা আমাদের মাঝে নেই। নির্মল দা'কে আমরা মানবতার ফেরিওয়ালা বলতাম এবং এটি কিন্তু আমরা তাকে খুশি করবার জন্য বলতাম না, এটি নির্মল দা'র নিঃস্বার্থ কাজের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। রাজনীতিতে তার মতো একজন সৎ মানুষ আসলেই দুষ্কর। তার মতো এইরকম সাধারণ জীবন যাপন করা রাজনীতিবিদ আসলেই বিরল।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৫৬তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সিরাজগঞ্জ -১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
তানভীর শাকিল জয় বলেন, আজকের ভোরের পাতা সংলাপের বিষয় নিয়ে কথা বলাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সত্যিকার অর্থে এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, নির্মল দা আমাদের মাঝে নেই। আমার এখনো মনে হয় হয়তো যেকোনো সময় আমার মোবাইলে তার নাম্বারটি ভেসে উঠবে এবং অপ্রান্ত থেকে তিনি বলবেন, জয় ভাই কেমন আছেন? নির্মল দা আমাকে অত্যন্ত অনেক স্নেহ করতেন। তিনি আমার অনেক সিনিয়র কিন্তু আমি উনাকে অনেকবার অনুরোধ করার পরেও তিনি কোন দিনই আমাকে তুমি করে বলতেন না। তিনি সব সময় আমাকে আপনি করে বলতেন। নির্মল দা'র মতো এইরকম সাদা মনের, এইরকম একটি ভালো মানুষ বর্তমান সময়ে আসলেই বিরল। নির্মল দা আমাদের জাতীয় রাজনীতির সম্পদ ছিলেন। তিনি চলে যাওয়াতে শুধু স্বেচ্ছাসেবক লীগ নয়, মুজিব আদর্শের লক্ষ নেতাকর্মী আজ আরও বেশী করে অনুভব করছে আমরা আজ কি হারিয়ে ফেলেছি। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইতিহাসে সবচে স্বর্ণালী সময় পার করছে। আমি বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আছি এবং আগের বারেও ছিলাম। কিন্তু বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক লীগ একটি মানবিক সংগঠন, জননেত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড এবং একইসাথে একটি মানবিক সংগঠনে পরিণীত হয়েছে, এবং এর পুরো কৃতিত্ব স্বর্গীয় নির্মল দা ও বাবু ভাইয়ের। নির্মল দা'কে আমরা মানবতার ফেরিওয়ালা বলতাম এবং এটি কিন্তু আমরা তাকে খুশি করবার জন্য বলতাম না, এটি নির্মল দা'র নিঃস্বার্থ কাজের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে।
আফজালুর রহমান বাবু বলেন, আমি মাঝে মধ্যে কিছুটা ভুলের মধ্যে পরে যায় এইজন্য যে, আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় নির্মল দা'কে কল করে বলবো যে, আপনি কোথায় আছেন। নির্মল দা অনেক সময় ফোন ধরতেন না, তাই আমি তার ড্রাইভারকে ফোন করতাম। তার সাথে গত কয়েক বছর ধরে আমার সাথে সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে একজন বড় ভাই, বন্ধু, রাজনৈতিক কলিগ, একজন আত্মীয়ের মতো। আসলে এই বিষয় গুলোর ব্যাখ্যা আমি কিভাবে দিব নিজেও বুঝতে পারছি না। আসলে তার স্মরণে এই সমস্ত অনুষ্ঠানে কিছু বলাটা আমার জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে তারপরেও মানুষদেরকে তার সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু জানাতে হবে। রাজনীতিতে তার মতো একজন সৎ মানুষ আসলেই দুষ্কর। তার মতো এইরকম সাধারণ জীবন যাপন করা রাজনীতিবিদ আসলেই বিরল। তিনি ছিলেন একজন জমিদার পরিবারের সন্তান। তার দাদার এক হাজার বিগার মতো সম্পত্তি ছিল যা পদ্মায় বিলীন হয়ে গিয়েছে। এখন চর জেগে ৩০০ বিগার মতো আছে। যেহেতু চর তাই এটাতে তেমন কিছু করা সম্ভব না, তাই এইগুলো বর্গা দিয়ে বছরে কিছু টাকা পেতো সে, এটা দিয়েই তিনি চলতেন। আসলেই নির্মল দা এমন একজন মানুষ ছিলেন যে, তার কাছে যা থাকতো তিনি তার পুরোটাই খরচ করে ফেলতেন। পারলে তার থেকে আরও বেশী খরচ করে ফেলতো। তার কাছে যদি কেউ সাহায্য চেতো, তিনি কখনো তাকে ফিরিয়ে দিতেন না।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, বাংলাদেশে এই সময়ে যে কজন সাদা মাটা জীবন যাপন করতেন তারমধ্যে নির্মল রঞ্জন গুহ ছিলেন অন্যতম। এতো বড় সহযোগী সংগঠনের একজন নেতা হয়ে তিনি যেভাবে সাদামাটা জীবন যাপন করতেন সেটা আসলেই আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে এখনো। তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে আসলেই আমি খুব আবেগ আপ্লূত হয়ে যাচ্ছি। তার বক্তব্য শুনার জন্য আমি সব সময় খুবই উদগ্রীব থাকতাম। সংগঠনের সব নেতাকর্মীদের তিনি কাছে থেকে দেখাশুনা করতেন এবং সবার সাথেই তিনি খুব মিশুক ছিলেন। তার মতো এমন একজন রাজনীতিবিদ পাওয়া খুবই বিরল। ছাত্রজীবনে তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সেখান থেকে তিনি মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি নির্বাচিত হলেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেন। তারপর তিনি স্বেচ্ছাসেবকলীগের রাজনীতি করে দুই বার সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তারপর এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হলেন। এভাবে রুট লেভেল থেকে এমনভাবে এইরকম একটা জায়গায় পৌঁছে আসাটা কিন্তু অনেক দুষ্কর ব্যাপার, কিন্তু তিনি সেটা সততার সহিত এই ধাপগুলো পার করেছিলেন। এভাবে সহজ সরল সাদা-মাটা জীবন যাপন করা এইরকম রাজনীতিবিদ আমি খুবই কম দেখেছি। শুধু তার সম্বল ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও শেখ হাসিনা যেটাকে বিশ্বাস করেন, লালন করেন সেই জায়গাটাকে তিনি সব সময় সবার মাঝে তুলে ধরতেন।