দীর্ঘ চার বছরপর সরকারি খাদ্য পরিবহনের জন্য নতুন ঠিকাদার তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। ইতিমধ্যে তিনটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া থামিয়ে দিতে একাট্টা হয়েছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ও খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা, পরিবহন ঠিকাদার আর অসাধু ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি সংঘবব্ধ চাল চোর সিণ্ডিকেট। এজন্য যেকোনো মূল্যে উচ্চ আদালতের একটি মামলা (কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে) করে নতুন এ ঠিকাদার তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া বন্ধ করার ফন্দি এটেছে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দৈনিক ভোরের পাতার অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের কারণে নিজেদের দায় এড়াতে ঠিকাদার নিয়োগে এ টেন্ডার আহবান করেছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আন্তরিক না হলে তা বাস্তবায়ন হবে না।
দেওয়ানহাট কেন্দ্রীয় খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন এলএসডি’র উদ্দেশ্যে বের হওয়া ট্রাকে ট্রাকে চাল চোরাইপথে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সাম্প্রতি এ সংক্রান্ত একাধিক সংবাদ দৈনিক ভোরের পাতার অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর পরই তোলপার শুরু হয় খাদ্য বিভাগে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামে মুলত পরিবহন ঠিকাদারদের সহায়তায় বড় এই চাল চুড়ির ঘটনা ঘটে। তাই পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুযায়ি ২ বছর পরপর নতুন ঠিকাদার নিয়োগের নিয়ম থাকলেও গত চার বছরেও তা করেননি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থাটি। সংবাদ প্রকাশের পর গত ৪ জুন ঢাকার একপি প্রথম সারির ইংরেজি দৈনিকসহ তিনটি পত্রিকায় ব্যাকডেটে স্বাক্ষর করা ঠিকাদার তালিকাভুক্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম খান।
এর আগে গত ২৩ জুন দশম বারের মতো এ কর্মকর্তা আরো তিন মাসের জন্য পুরোনো ঠিকাদারদের মেয়াদ বাড়িয়ে অফিস আদেশ জারি করেছিলেন। আর এই ইস্যুকে সামনে এনেই মামলার জালে আটকে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া বানচাল করে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এতে ক্ষুব্ধ সচেতন মহল ও বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে সুজন চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক এডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, সততা স্বচ্ছতার জায়গা থেকে যদি মনিটরিংটা আরও শক্তিশালী করা না যায়, জবাবদিহীতার আওতায় আনা না যায়, তাহলে যেভাবে চলছে এভাবেই চলবে। তাহলে মূল নেপথ্যের নায়ক যারা, তারা পর্দার অন্তরালেই থেকে যাবে।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী আর চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ৬ জন অসাধু ব্যবসায়ীর অন্তত ২৫ টি গুদামে সরকারি চোরাই চালের এই ব্যবসা চলে দির্ঘদিন ধরে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় পাহাড়তলীর ফারুক ট্রেডিং আর খাতুনগঞ্জের মেসার্স বেলাল ট্রের্ডিং অন্যতম। প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কথা না বললেও অভিযোগ অস্বীকার করেছে ব্যবসায়ী সমিতি।
এ প্রসঙ্গে পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, গুদামের সাথে এসব চালের সামনজস্য থাকা সম্পর্কে যারা ধরছে তারাই জানবে, আমরা জানবো না। আমাদের এখানে যে মালগুলো আসে, আমাদের মতো কেও ডিও’র মালগুলো কিনে, পারে তাদের কাছ থেকে অন্য আরও অনেকে কিনে নেয়, ব্যবসা করে।
গত ২৮ জুন দিনগত রাতে বেলাল ট্রেডিংয়ের গুদামে সরকারি চাল নামানোর (আনলোড) সময় পুলিশ ১৫ মেট্রিক টন (এক ট্রাকে ৩০৩ বস্তা) চাল জব্দ করে। ওইসময় আটক এসব সরকারি চাল নিজেদের দাবীকরে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয় বেলাল ট্রেডিং এর মালিক বেলাল উদ্দিন ও তার ছোটভাই হেলাল উদ্দিন। তবে এ চাল চুরির ঘটনায় রহস্যজনক কারণে ট্রাকের চালক ও চালকের সহকারী ছাড়া মামলায় অন্য কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি চাল উদ্ধারের প্রতিটি ঘটনায় মামলার বিবরন এমনই। ফলে চাল চুড়ির নেপথ্যের কারিগররা থেকে যাচ্ছেন অধরাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, চুক্তির বাহিরে আমরা কোনো ঠিকাদার নিয়োগ করিনি। চুক্তির আলোকেই মূলত ঠিকাদাররা কাজ করছেন। এখন আমরা এই নিয়োগটাকে একটা নতুন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে কাজ করছি।