বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে আবেদনের প্রত্যেকটির শর্তে অযোগ্য বিবেচিত হয়েও নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মোঃ নকিবুল হাসান খান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে আবেদন করতে হলে এস এস সি ও এইচ এস সি পর্যায়ে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ স্কেলে) ফলাফল থাকতে হবে। সেই সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থাকতে হবে সিজিপিএ ৩.৫০ (৪.০০ স্কেলে)। তবে বিশেষ যোগ্যতা থাকলে যেকোন একটি শর্তের ক্ষেত্রে শিথিল রাখা যাবে । সেই সঙ্গে পুরো শিক্ষা জীবনে ৩য় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকুরী প্রত্যাশীদের থেকে আবেদন আহ্বান করেছিলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জিপিএ ৫.০০ স্কেলে চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৩.২০ পেয়ে পাশ করা নকিবুল হাসান ভেঙেছেন প্রায় প্রত্যেকটি শর্ত। তিনি ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ ৩.৮৮ পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ পান ৩.৫০ যার চতুর্থ বিষয় ছাড়া ফলাফল দাঁড়ায় জিপিএ ৩.২০ তে। এই ফলাফলের পরও বিজ্ঞপ্তির নিয়মানুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ না থাকলেও পেয়েছেন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ।
মোঃ নকিবুল হাসান খানের উল্লেখিত একাডেমিক তথ্যের সত্যতা মিলেছে রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রেও। অভিযোগ উঠেছে বহিষ্কৃত সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবীবের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন এই শিক্ষক। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম।
এহসান হাবীব নিয়োগ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন । তিনি আরো জানান, নকিবের সব কিছু ঠিকই আছে বলে আমি জানি। তবে এই নিয়োগের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এইচ এস সি পাশ করলেও গণিত ব্যাতীত অন্য বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কোর্সে পেয়েছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী। অন্যদিকে ইংরেজীতে পেয়েছিলেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনিক নিয়মের বাইরে গিয়ে হয়েছেন শিক্ষক।
নিয়োগের এই তথ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, এইভাবে বিজ্ঞপ্তির শর্ত না মানলে তো পরীক্ষায় অংশ নিতেই পারার কথা নয়। সেই জায়গায় এতো তথ্য গোপন রাখাটি শিক্ষক হিসেবে নৈতিকতার বিপর্যয় বলেই মনে করি।
সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আশরাফ আলীর বিভাগের অফিস কক্ষে তালা দিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক মোঃ নকিবুল হাসান খানের নাম। অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম এবং অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবীবের মাধ্যমেই এই নিয়োগ পেয়েছিলেন মোঃ নকিবুল হাসান খান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম বলেন, আমার এগুলো মনে নেই। যা তথ্য রয়েছে সংরক্ষিত রেজিস্ট্রার দপ্তরে সে অনুযায়ীই কাজ হয়েছে। দায়িত্ব পালনের সময় শেষের পর থেকে আমার আর কোন দায়িত্ব নেই। সাবেক দায়িত্ব পালন করা রেজিস্ট্রার ফজলুল কাদের চৌধুরী এই নিয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি।
এদিকে নিয়োগ বোর্ডে থাকা মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটে থাকলে নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ নেই। আর এই নিয়োগের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই পূর্বের এই তথ্য নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে নকিবুল হাসান খানের সরাসরি শিক্ষকের সম্পৃক্ততাও ছিলো এই নিয়োগে বোর্ড এক্সপার্ট হিসেবে।
নকিবুল হাসানের একাডেমিক ফলাফলের তথ্যের বিষয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটির প্রধান ড. আশরাফ বলেন, গত আপগ্রেডেশন সভায় নকিবুল হাসান খানের একাডেমিক রেজাল্টের অসংগতি দেখতে পেয়েছি। এর আগে তা আমার জানা ছিলো না।
নিয়োগে অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বে তো অনেক কিছুই হয়েছে। সেটি নিয়ে আমি বলতে চাইনা। তবে আমার দায়িত্বের সময়ে এমন করে নিয়মের বাইরে গিয়ে কোন নিয়োগ তো দূরের কথা কোন কাজই করা হবে না। এরকম নিয়োগ হয়ে থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে কাম্য নয়। এই সকল ঘটনার জন্যে আমাদের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
এদিকে বিশেষ যোগ্যতায় নিয়োগ পাওয়া মোঃ নকিবুল হাসানের মন্তব্য জানতে চাইলে কোন মন্তব্য প্রদান করেনি। একাধিকবার কল করে মন্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই ফোন কেটে দেন এই শিক্ষক।