প্রকাশ: রোববার, ৩ জুলাই, ২০২২, ৮:১৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
শ্রীনগরে মৌ-মাছির পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মধু চাষীরা। শত শত মৌ বাক্সের মধ্যে মৌ-মাছির বংশ বিস্তার করা হচ্ছে। বছরের এই সময়ে প্রায় ৪ মাস মৌ-মাছি লালন পালণের পর শীত মৌসুমে এসব মৌ-মাছিকে মধু আহরণের জন্য উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে ৮/১০টি মৌ-মাছির সংরক্ষণাগার গড়ে উঠেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিবন্দী, টুনিয়ামান্দ্রা, সুরুদীয়া, তন্তর, বাড়ৈগাঁও, সাতগাঁওসহ বেশ কয়েক স্থানে রাস্তার পাশে উঁচু জমি কিংবা বাগান বাড়িতে মৌ-মাছির শত শত কাঠের বাক্স পাঁতা হয়েছে। গাছের ছাঁয়া তলে শীতল জায়গায় অসংখ্য বাক্স সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। রানী মাছিরা বাক্সে বংশ বিস্তার করছে। লক্ষ্য করা গেছে, মৌ-মাছির লালন পালন ও পরিচর্যায় অভিজ্ঞ মধু চাষীরা কাজ করছেন। আগামী অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের দিকে মধু আহরণের জন্য প্রস্তুত বাক্সবন্দি এসব মৌ-মাছির দল নিয়ে বিভিন্ন চরা লের আগাম ধনিয়া, সরিষা, বড়ই, কালজিরা ফুলের খাঁটি মধু সংগ্রহের জন্য ছুঁটবেন চাষীরা।
উপজেলার আটপাড়া এলাকায় মো. ইসহাক আলী নামে এক মধু চাষী বলেন, সাতক্ষিরা থেকে তারা এ অ লে এসেছেন। এখানে থেকে মৌ-মাছির বংশ বিস্তারের পর শীতের আগেই মৌ-বাক্স নিয়ে সাতক্ষিরায় যাবেন মধু উৎপাদনে।
মো. মাসুম বিল্লাহ্ বলেন, তার সংরক্ষণে রয়েছে অস্ট্রোলিয়ান মেলীফেরা জাতের মৌ-মাছি। এসব বাক্সের মধ্যে মৌ-মাছিরা বংশ বিস্তার করছে। মৌ-মাছির দল ভাড়ি করার জন্যই এখানে আসছেন তিনি। বর্ষার মৌসুমে এই অ লে বিলে/চকে প্রচুর ধইনচার আবাদ থাকায় এ ফুলের মধু আহরণের মধ্যে দিয়ে মৌ মাছি লালন পালন করতে সুবিধা হচ্ছে। কার্তিক মাসেই বাণিজ্যিকভাবে খাঁটি মধু সংগ্রহের জন্য এসব যোদ্ধা মৌ-মাছি নিয়ে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নাটোর, পাবনা ও সুন্দরবন এলাকা ঘুরে বেড়াবেন। এ পন্থায় প্রতিবছর ৫/৬ টন মধু সংগ্রহ করে থাকেন। তালিকাভুক্ত মধু চাষী হলেও সরকারিভাবে কোন আর্থিক সহযোগীতা আসে না। দেশে বছরের এ সময়ে মধু উৎপাদ বন্ধ থাকে। মৌ-মাছি লালন পালন ও পরিচর্যায় কাজে শুধু ব্যায় করে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি বাক্সে সাধারণ মৌ-মাছির দল রানীর কোষ দেয়। এসব কোষ থেকে ১০/১২ দিনের মধ্যে রানীদের জন্ম হলেও প্রতি বাক্সে মাত্র একটি করে রানী বেঁচে থাকে। একটি রানী দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার ডিম দিতে সক্ষম। রানী মৌ-মাছি বেঁচে থাকতে পারে প্রায় আড়াই বছর। বাক্সের মধ্যে এসব মৌ মাছির দল বংশ বিস্তারে আলাদা আলাদাভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে। মৌ-মাছি সংরক্ষণ ও লালন পালনের জন্য প্রতি বাক্সে আহারের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে দুই চিনির রস/শরবত দেওয়া হয়। ১শত’ মৌ-বাক্স হিসাব অনুসারে আহারের জন্য প্রতি ৭ দিনে ৫০ কেজির ৪ বস্তা চিনির প্রয়োজন হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় একটি বাক্সে প্রায় দুই লাখ মৌ-মাছির সদস্য প্রস্তুত করে তোলা হবে। মধু প্রক্রিয়াজাত করণ কোম্পানীর কাছে চাষীদের উৎপাদীত প্রতিকেজী মধু বিক্রি করা হয় ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩ টাকা দরে। খোলা বাজারে বিভিন্ন মধু কোম্পানীর প্যাকেটজাত প্রতিকেজী মধু বিক্রি হয় খুচরা ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দরে।