#অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা: পঙ্কজ দেবনাথ। #শেখ হাসিনার সাহসিকতার কাছে পদ্মা সেতু কিছুই না: এস এম শাহাজাদা। #বাঙালি জাতির ইতিহাসে অসামান্য অর্জন পদ্মা সেতু: ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। #আমাদের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু: কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন। #শেখ হাসিনার সাহসের প্রতীক পদ্মা সেতু: মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল।
পদ্মা সেতু নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলেছে। পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের উন্নয়ন, অহংকারের প্রতীক। আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয়, যোগ্যতার প্রতীক। আমি শুধু একটি কথায় বলতে চায় যে যা সম্ভব ছিল না তা সম্ভব হয়েছে এবং সকল কৃতিত্ব একমাত্র জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সাহস দেখিয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি আগামীতে তার নেতৃত্বে এর থেকেও আরও বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশে। পদ্মা সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাঙালির গর্বের আরেকটা নতুন সংযোজন।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৪৫তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা, কুষ্টিয়ার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক কর্নেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন, বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলেছে। পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের উন্নয়ন, অহংকারের প্রতীক। আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয়, যোগ্যতার প্রতীক। আমি শুধু একটি কথায় বলতে চায় যে যা সম্ভব ছিল না তা সম্ভব হয়েছে এবং সকল কৃতিত্ব একমাত্র জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ কাজ হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প। আজ পুরো বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে পদ্মার বুক চিড়ে দাড়িয়ে থাকা পদ্মা সেতুকে। আজ পদ্মা সেতু ও সেতু-সংলগ্ন অন্যান্য অবকাঠামো গর্বের সঙ্গে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণ বাংলার একুশ জেলাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলধারার সাথে যুক্ত করবে তাই নয়, ট্রান্স-এশীয় হাইওয়ে ও রেলওয়ের সাথে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনকেও সমৃদ্ধ করবে। এর ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য সংযোগ বাড়বে। আর দক্ষিণ বাংলার কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, পর্যটন ও ডিজিটাল সেবায় বিপ্লব ঘটাবে। শুধু পদ্মা সেতু নয় আরও অনেকগুলো মেগা-প্রকল্প এখন দৃশ্যমান। বিশেষ করে মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্কের মতো প্রকল্পগুলোও এখন চারদিকে আলো ছড়াচ্ছে। এসব চালু হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির পুরো চেহারাই বদলে যাবে। বিশ্বব্যাংককে বৃদ্ধ আঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির উজ্জ্বল মাইলফলক তৈরি করেছেন।
এস এম শাহাজাদা বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে গিয়েছে। এটা আজ উদ্বোধন হবে। এটার জন্য সাড়া পৃথিবীবাসী আকুল অপেক্ষায় বসে আছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। পদ্মার তার সাহসিকতার কাছে এই মুহূর্তে একটি নিছক ছোট্ট একটি বিষয়। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সাহস দেখিয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি আগামীতে তার নেতৃত্বে এর থেকেও আরও বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশে। পদ্মা সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাঙালির গর্বের আরেকটা নতুন সংযোজন। আমাদের অন্যতম অহংকার ও গৌরবের প্রতীক। সব ষড়যন্ত্র, প্রতিরোধ আর বিরোধিতা পেরিয়ে পদ্মা সেতু আজ পৃথিবীর মানচিত্রে দৃশ্যমান। পদ্মাসেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন যে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে সে আত্মবিশ্বাস দিয়ে আরও অজস্র রূপকল্পকে অর্জন করতে সক্ষম হবে। এই আত্মবিশ্বাস দিয়েই বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াবে, সারা পৃথিবী বিস্মিত হয়ে তাকাবে বাংলাদেশের দিকে। যদি পদ্মা সেতুটা না হতো তাহলে আমাদের কি হতো তাহলে বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন পর্যন্ত একটি নেহায়েত মিথ্যা কথার গ্লানি নিয়ে থাকতে হতো। ঐ জায়গাটা চিন্তা করলে আমি আজকেও শিউরে উঠি। এই জায়গার উপর দাড়িয়ে আমি নিশ্চিন্তে বলতে পারি আমাদের আগামী প্রজন্ম বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে আমি বাংলাদেশের নাগরিক। এইযে কথাটা তারা বলবে এই কথাটা কিন্তু তারা এইরকম গর্ব করতে বলতে পারবে না যদি না আজ এই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হতো।
অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের সীমারেখার মধ্যে সবচে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হচ্ছে পদ্মা সেতু। অনেক পথ পারি দিয়ে, অনেক ষড়যন্ত্র পারি দিয়ে, অনেক বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে আজ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। এটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অসামান্য অর্জন। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে, ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় সেতু। খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে স্বপ্নের এ সেতু। পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ফরিদপুর জেলাগুলোর উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করবে যা বিস্তৃত হবে খুলনা ও সাতক্ষীরা পর্যন্ত। দেশের দক্ষিণে বসবাসরত জনজীবনের জীবনমান উন্নয়নসহ স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও বাজার সম্প্রসারিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এই রকমের একটি নদীকে শাসন করে এইরকম একটি সেতু নির্মাণ করাটাকে অনেকেই ভেবে উঠতে পারেনি। যারা ভেবে উঠতে পারেনি, তারা অনেক কিছুই বলেছে। এই নিন্দুকের মুখে ছায় দিয়ে যে অসামান্য সাফল্যটি ২৫জুন শুরু হতে যাচ্ছে সেটি আসলেই আমাদের জন্য অনেক গর্বের বিষয়।
কর্ণেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দীন বলেন, আজ পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন লগ্নে যেসব দেশ পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছে বা যেসব দেশ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে অখুশি ছিল সেসব দেশ আজ বাংলাদেশকে বাহাবা জানাচ্ছে এই পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের কারিগর অর্থাৎ আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। তারপর বিএনপি সরকার এসে সেটা ভেঙে ফেলে। তারপরের ইতিহাস সবাই জানেন। কিন্তু সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা নিজেদের টাকা দিয়ে নিজেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখালেন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাঙালি জাতির স্বপ্ন এখন বাস্তব। পদ্মা সেতু যাতে না হয় সে জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এ দেশের কয়েকটি সংবাদপত্র, যেগুলো দিনের পর দিন পদ্মা সেতুর কল্পিত দুর্নীতি নিয়ে মনগড়া গল্প চালিয়ে গেছে। শতসহস্র এসব গল্প উড়িয়ে দিয়ে পাঁচ বছরের বেশি সময়ের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত বলেছে, এই মামলায় যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে, তা অনুমানভিত্তিক, গালগল্প এবং গুজবের বেশি কিছু নয়। আসলে বিদেশী ষড়যন্ত্র যতই হক না কেন, প্রথম ষড়যন্ত্র কিন্তু আমাদের থেকেই আগে হয়েছে। আর আজকে সেই ষড়যন্ত্রকে অতিক্রম করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে তৈরির চ্যালেঞ্জ গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করা এবং অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলো চালিয়ে যাওয়ার মত দুঃসাহসিক কাজ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল বলেন, পদ্মার দুই তীরের সঙ্গে সেতুবন্ধ তৈরি এক সময়ের অসম্ভব ভাবনাকে সম্ভব করে তুলছে বাংলাদেশ। আর এই স্বপ্ন সম্ভাবনার নাম হলো পদ্মা সেতু। কোটি মানুষের স্বপ্ন জড়িয়ে, অর্জনের গৌরব মেখে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছে কোটি বাঙালির স্বপ্নের এই সেতুটি। আর এই অসম্ভবটি সম্ভব করেছেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের একটি প্রকল্প। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন। আমাজনের পর সবচেয়ে খরস্রোতা পদ্মা সেতুর বুক চিরে ১২৮ মিটারের বিশ্বের গভীরতম পিলার গাড়া খুব সহজ কাজ ছিল না। এর জন্য বিশেষ হ্যামার জার্মানি থেকে করে সংগ্রহ করতে হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের কারণে সেতু নির্মাণের সময় খানিকটা বেশি সময় লেগেছে কিন্তু তা সর্তেও আজ আমরা একটি সেতু পেয়েছি যা বছরের পর বছর সময় ধরে আমাদেরকে সেবা দিয়ে যাবে। আশেপাশের জনগণ সর্বদাই দেখেছেন বাস্তবায়নকারী অংশীজনেরা কি নিষ্ঠার সাথে দিনরাত কাজ করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা ও আর্থ-সামাজিক মূল্যায়নে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি বাংলাদেশের এই পর্যন্ত সর্ববৃহৎ ভৌত অবকাঠামো। এই সেতুর সাথে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং জাতি হিসেবে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প জড়িত। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করছি আমরা। তার হাত ধরেই এক সময় উন্নত দেশের সোপানেও পদার্পণ করবে বাংলাদেশ।