দেশের জাতিয় ফল কাঁঠাল দিয়ে মুখরোচক জ্যাম, চাটনি, আচার, কাঁঠালস্বত্ব, চিপসসহ ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক।
শনিবার (২৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) এক সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘কাঁঠালের সংগ্রহত্তোর ক্ষতি প্রশমন ও বাজারজাতকরণ কৌশল’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান বিএআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় গবেষণা একটি গবেষকদল কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন।
কর্মশালায় গবেষক ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী জানান, এ প্রকল্পের আওতায় আমরা কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত করে মুখরোচক ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম, দই, ভর্তা, কাঁঠালস্বত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশকাট পণ্যসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষক।
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মূখ্য পরিদর্শক তারেক রাফি ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভাবিত পণ্যগুলো বাজারজাত করার জন্য নিউভিশন কোম্পানি বিএআরআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শহরে পণ্যগুলো বিপণনের কাজ চলছে।
এছাড়াও এসব অ লে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রকল্পের মাধ্যমে কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা সফলভাবে কাঁঠাল থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ভোক্তাদের সুনাম অর্জন ও আর্থিক উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপস) ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবু হানিফ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কায়সার আলম।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মির্জা মোফাজ্জল বলেন, কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে। এজন্য কৃষক পর্যায়ে উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণায় উদ্ভাবিত পণ্যগুলোর তৈরি কৌশল মাঠ পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।
এছাড়াও পণ্যগুলো প্যাকেটজাত ও মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে ভোক্তাদের মাঝে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। বিভিন্ন কৃষিজ দ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য আমাদের দেশেই উদ্ভাবন করতে হবে নতুন নতুন প্রযুক্তি। এতে করে মাঠ পর্যায়ে কৃষক ও উদ্যোক্তা উভয়ই লাভবান হবে এবং কৃষিজ দ্রব্য পচে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।