#বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন শেখ হাসিনা: ড. ওয়ালি-উর রহমান। #শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে: মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার। #দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে পাল্টে দিবে পদ্মা সেতু: ওয়াদুদ মিয়া জনি।
পৃথিবীর প্রত্যেক জাতিরই একেকটা সময় একেকটা সুবর্ণ সময় আসে। আমাদেরও কয়েকটি সুবর্ণ সময় এসেছে। এর মধ্যে প্রথমটি ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যার মাধ্যমে আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। পদ্মা সেতু যখন বাস্তবায়ন হবে তখন থেকে এক বছরের পর প্রতি বছরে বাংলাদেশের জিডিপিতে ১.২% গ্রোথ যোগ করবে। আমাদের এখন জিডিপি গ্রোথ আছে ৭% এবং এই পদ্মা সেতু হয়ে গেলে হবে ৮% এবং এটা যদি আগামী ১০ বছর পর্যন্ত স্থায়িত্ব থাকে তাহলে আমাদের অর্থনীতি আরও অনেক দূরে চলে যাবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭১৬তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ দূত, বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. ওয়ালি-উর রহমান, পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক ও লেখক মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, মাদারীপুর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি ওয়াদুদ মিয়া জনি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
ড. ওয়ালি-উর রহমান বলেন, পৃথিবীর প্রত্যেক জাতিরই একেকটা সময় একেকটা সুবর্ণ সময় আসে। আমাদেরও কয়েকটি সুবর্ণ সময় এসেছে। এর মধ্যে প্রথমটি ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যার মাধ্যমে আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। এরপরে ৫০ বছরে আমরা অনেক ভালো মন্দ সময় পার করেছি। আজ পৃথিবীর মধ্যে যত উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে তার মধ্যে প্রথমে আছে বাংলাদেশ। আর এই কথাটি কিন্তু শুধু আমরা বলছি না, এই কথাটি বলছে বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, আইএমএফ সহ অন্যান্য সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গুলো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন বাংলা আর পঞ্চাশ বছর পর সেই স্বাধীন বাঙলাকে স্বপ্নের সোনার বাংলায় রুপান্তর করার জন্য তার কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিচ্ছেন পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু তার অনেক স্বপ্নই অধরা ছিল কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি সহ প্রায় তার পুরো পরিবার। তার রয়ে যাওয়া দুই কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন থেকে আজ পর্যন্ত তার পিতার অধরা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। পদ্মা সেতুর যে স্বপ্ন ছিল সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছেন শেখ হাসিনা। এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন কিন্তু সহজে হয়নি। অনেক চড়াই-উৎরাই, অনেক প্রতিবন্ধকতা সব পেরিয়ে উন্নত মর্যাদার শেষ ধাপে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে শত বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান।
মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, সকল বাধা-বিপত্তি, ঝড়-ঝঞ্ঝা, ষড়যন্ত্র, সবকিছু মারিয়ে যখন একটি সাফল্য আসে তখন যে কিরকম একটা আনন্দ লাগে টা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একটা দেশের জনমানুষ যখন একটি জয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয় তখন সেই রাষ্ট্রকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনা। আজকে কিন্তু আমাদের জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই জায়গাতে পৌঁছেছি। একটি জাতি যখন এই রকম আনন্দে উদ্বেলিত হয় তখন সেই উদ্বেলিত আনন্দের সমষ্টির শক্তি কিন্তু অপরিসীম। সেই শক্তিটাকে যদি ধরে রাখা যায় তাহলে আমরা যে স্বপ্ন দেখছি সেটা কিন্তু আর স্বপ্ন থাকবে না সেটা বাস্তবে পরিণীত হবে। এই স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মানুষের অবশ্যই অবদান আছে কিন্তু একটি দেশে যখন এই রকম স্বপ্ন পূরণ হয় তখন সেই দেশের নেতৃত্বে যারা থাকে তাদের নেতৃত্বই কিন্তু সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করে। সুতরাং ২৫ জুন যখন আমরা এই পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন দেখতে পাবো এবং সেই সফল বাস্তবায়নটি একমাত্র সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। অসীম রাজনৈতিক সাহস এবং অসীম রাজনৈতিক দৃঢ়তা, সমস্ত ভয় ভিত্তি, হুমকি-ধমকি, সব কিছু তিনি উপেক্ষা করতে পেরেছেন বলেই এই পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা তার পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন এবং আজকে নতুন করে এই প্রজন্মকে নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন এবং আরও নতুন সব স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের ফলে কি ধরনের সাফল্য আসতে পারে সেটা বাংলাদেশের মানুষ ধারণ করতে পেরেছিল বলেই সমস্ত বাধা বিপত্তি, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আজ পদ্মা সেতু দণ্ডায়মান হয়ে দাড়িয়ে আছে। এই স্বপ্ন যখন বাস্তবায়ন হবে তখন থেকে এক বছরের পর প্রতি বছরে বাংলাদেশের জিডিপিতে ১.২% গ্রোথ যোগ করবে। এটা কিন্তু আমাদের কথা না, এটা বিশ্ব ব্যাংকের কথা যারা আমাদের এই প্রোজেক্ট থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছিলেন একটা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে, কিন্তু আমরা প্রত্যাশা করছি আরও অনেক। আমাদের এখন জিডিপি গ্রোথ আছে ৭% এবং এই পদ্মা সেতু হয়ে গেলে হবে ৮% এবং এটা যদি আগামী ১০ বছর পর্যন্ত স্থায়িত্ব থাকে তাহলে আমাদের অর্থনীতি আরও অনেক দূরে চলে যাবে।
ওয়াদুদ মিয়া জনি বলেন, বাঙালি জাতির বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে আর মাত্র দিন কয়েক বাকি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায় এবং তা বাস্তবায়ন করেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রীর এই কৃতিত্বের জন্য সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মাথা উঁচু হয়েছে। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাসের কারণেই বাংলাদেশ নিজেদের প্রচেষ্টায় পদ্মা সেতুর মতো একটি ব্যয়বহুল নির্মাণের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে পেরেছে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে আনন্দের হিল্লোল বইছে দেশের প্রতিটি মানুষের মনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে শত বাধা অতিক্রম করে স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু অবশেষে দৃশ্যমান হলো। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে- আমরাও পারি। বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি বসিয়ে। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে রচিত হতে যাচ্ছে এক থেকে দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়ার এবং দারিদ্র্যের হার দশমিক ৮৪ শতাংশ কমিয়ে আনার সুন্দরতম স্বপ্ন। এই সেতু চালু হলে শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির পাবে। যার মাধ্যমে সরাসরি সুবিধার কারণে পরিবর্তন আসবে দেশের তিন কোটিরও বেশি মানুষের জীবনে। পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে জ্বালানির চাহিদা নিশ্চিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যুগান্তকারী উন্নয়ন হবে। এ অঞ্চলের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের গতি আসবে, আয় বৈষম্যও কমে যাবে। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের ফলে শুধু ঢাকা নয়, খুলনা-বরিশাল ছাড়া দেশের বেশিরভাগ বড় শহরে যেতে পদ্মানদী পাড় হতে হয়। পদ্মা পার হওয়ার সময়, ঘাটে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় যাত্রীদের। সেতু চালু হলে এই বিড়ম্বনার হাত থেকে যাত্রীরা যেমন বাঁচবে, তেমনি সময়ও বাঁচবে আমদের। ইতোমধ্যে মাদারীপুর, ফরিদপুর এবং খুলনার খালিশপুরের অর্থনৈতিক জোনের সীমানা নির্ধারণ হয়ে গেছে।